আমাদের ভারত, কলকাতা, ২২ নভেম্বর :
মোহর কুঞ্জ থেকে গ্র্যান্ড হোটেল- পার্ক স্টিট এর সামনের রাস্তা, শহীদ মিনার থেকে দ্য ফরটি-টু বহুতল সব সেজে উঠেছে গোলাপী আলোয়। আর মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যেই ইডেনের বাইশ গজে টস করতে নামবেন বিরাট কোহলি ও মমিনুল। এদিন প্যারাসুটে করে সেনা কর্মীরা গোলাপি তুলে দেবেন দু’দেশের অধিনায়কের হাতে।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরেই ইডেনে গোলাপী ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্ট শুরু হচ্ছে। তবে এতদিন ইডেনে সকালের প্রথম দু- ঘন্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। গঙ্গার দিক থেকে হিমেল হাওয়া, স্যাঁতস্যাঁতে পিচ, শিশির ভেজা আউটফিল্ড সবকিছুকে কাজে লাগাতেন টস জেতা অধিনায়। কিন্তু গোলাপি বলের ক্ষেত্রে ছবিটা কিন্তু। উল্টো প্রথম সেশনে পেসারদের ভেলকি দেখানোর সসম্ভাবনা, বিপক্ষে ব্যাট করা কঠিন হবে। কিন্তু গোধূলির পরে বিশেষ করে তৃতীয় সেশনে খেলা জমে উঠবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভারতের অন্যতম ভরসা মহম্মদ শামি ইনদোর টেস্টে তৃতীয় পেসার হিসেবে বল করতে নেমেছিলেন। ইডেনে এই ছবিটা পাল্টাতে পারে। ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে একমাত্র শামির গোলাপি বলে খেলা অভিজ্ঞতা আছে। গোলাপি বলে তিনটে ম্যাচ খেলা শ্রীলংকার উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকওয়েলা বলছেন সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু খেলার রং বদলে যেতে পারে। তিনি বলেন, লাল বলের চেয়ে গোলাপী বলে সুইং বেশি হয়। তাছাড়া বল সিমে পড়ার ফলে হাওয়ায় একটু কেঁপে যায়। গতিপথ একটু এদিক ওদিক হয়ে যায়। ফলে যেকোনো বল যেকোনো মুহূর্তে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট কিপারের হাতে কিংবা স্লিপে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। গোলাপি বলে ফিল্ডিং করা অনেক বেশি কঠিন বলে মনে করছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। কোহলির মতে, ‘গোলাপি বলে স্লিপ ক্যাচিং প্র্যাকটিস করতে গিয়ে দেখেছি বল হাতে ধাক্কা খাচ্ছে, ব্যথা লাগছে।’ এদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ভারতীয় ফিল্ডাররা স্লিপে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটা ক্যাচ ফেলেছে। গোলাপি বলের সমস্যা কাটাতে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর বেলিস শামিদের বার্তা দিয়েছেন বলে সুইং থাকবে কিন্তু সুইংকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লাল বলের চেয়ে গোলাপি বলের সুইং একটু অন্যরকম। গোলাপি বলের সুইং অনেক সময় পেসারেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। অনেক সময় পেসার ইন সুইং করলেও সেই বল আউট সুইং হয়ে যায়। বছর দুয়েক আগে অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়া ইংল্যান্ডের গোলাপি বলের টেস্ট ম্যাচে মিচেল স্টার্ক, জিমি অ্যান্ডারসন ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন। তবে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে ঠিক সন্ধের মুখে ব্যাট করা খুবই কঠিন বলে মনে করছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন কোচ। তিনি ব্যাটসম্যানদের পরামর্শ দিয়েছেন সব সময় দেরিতে শর্ট খেলার চেষ্টা করতে হবে, বাড়তি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে যেন ফাঁক খুব কম থাকে। ভারতের প্রাক্তন স্পিনার হরভজন সিং এর মধ্যে ইডেনে ফ্লাড লাইটে ফিঙ্গার রিস্ট স্পিনার বেশি কার্যকরী। রিস্ট স্পিনারের হাত থেকে বল বেরোনোর আগে সিম বুঝতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে ব্যাটসম্যানরা। গোলাপি বলের উপর কালো সেলাই থাকার কারণেই এই সমস্যা হলে মনে করছেন ভাজ্জি। ফলে রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়তে পারে ইডেনের বাইশ গজ।
শচীন তেন্ডুলকর মনে করছেন গোধূলি লগ্নে গোলাপী বল কেমন আচরণ করে তার উপর ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে। তিনি বলছেন ব্যাটসম্যান যদি বলের সেলাই দেখতে পায় তাহলে ৯০% ক্ষেত্রে ব্যাটসম্যান জেনে যাবেন বল ইনসুইং করবে না, আউটসুইং করবে। পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদের লক্ষ্য রাখতে হবে বলের পালিশটা কোন দিকে আছে।
ইডেনের পিচ নিয়ে সি এ বির পিচ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘ স্পোর্টিং পিচে ঘাসের পাশাপাশি বাউন্স থাকবে, আবার ব্যাটসম্যানের কাছে দ্রুত বল আসবে’। ফলে সৌরভ গাঙ্গুলির হাত ধরে গোলাপি জ্বরে রীতিমতো কাঁপছে ইড়েন সহ কলকাতা , তাকিয়ে আছে গোটা দেশ।