Durga Puja, বদলে গেল আমাদের দুর্গাপুজো

আমাদের ভারত, ৬ অক্টোবর: গত সাত দশক ধরে খুব কাছ থেকে দেখেছেন দুর্গাপুজোর পটভূমি। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ বারদীর শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রমের পরামর্শদাতা, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি, ঢাকার মহানগর সর্বজনীন পুজো কমিটির প্রাক্তন সভাপতি, মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্ক লিমিটেডের প্রাক্তন অতিরিক্ত ম্যানেজিং ডিরেক্টর, যমুনা ব্যাঙ্ক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিঃ-এর ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর মনীন্দ্র কুমার নাথ তাঁর সেই অভিজ্ঞতা জানালেন কলকাতার সাংবাদিক অশোক সেনগুপ্তকে

প্রশ্ন ১— আপনার জন্ম কবে, কোথায়?
উত্তর : জন্ম ২০ মার্চ, ১৯৫১ সালে লক্ষীপুর জেলার পাঁচপাড়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে।

প্রশ্ন ২— ছেলেবেলার পুজোর কিছু অভিজ্ঞতা, স্মৃতি যদি জানান।
উত্তর— ছেলেবেলায় শারদীয় দুর্গাপুজো দেখেছি নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১ মাইল দূরে দুর্গাপুজো মণ্ডপে এবং অনেক দুরে গিয়ে বিভিন্ন বাজারে ও শহরে। অনেক উৎসাহ উদ্দীপনাপূর্ণভাবে অনেক ভক্তর উপস্থিতিতে দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হতো। সমাজের সকল সম্প্রদায়ের লোকজনকে উৎসবে একত্রিত হতে দেখেছি। সরস্বতীপুজো ও লক্ষ্মীপূজো হতো মহাড়ম্বরে ঘরে ঘরে। এই সব উৎসবে আমাদের বিদ্যালয় ও কলেজের সহপাঠিরা আসতো। বাজি ফুটিয়ে আনন্দ করতো। পূজার নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ খাওয়ার প্রতি সকলের আগ্রহ ছিল অবর্ণনীয়।

প্রশ্ন ৩. বাড়িতে কে, কে ছিলেন? তাঁরা পুজোয় কে, কী করতেন?
উত্তর—আমাদের পাড়ায় নাথ সম্প্রদায়সহ অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১টি বাড়ি ছিল। প্রতিটি বাড়িতে ৫/৬টি করে পরিবার থাকতো। আমাদের পাড়ায় প্রায় ৩০০ লোকের বসবাস ছিল। বিশেষ করে মহিলারাই পূজোর সময়তে বেশী ব্যস্ত সময় কাটাতেন।

প্রশ্ন ৪. ছাত্রজীবন কোথায় কেটেছে? সে সময় পুজো করতেন?
উত্তর— স্কুল ও কলেজ জীবন বাড়িতে থেকেই লেখাপড়া করেছি। পূজোর আগে থেকে পূজোর অনুষ্ঠান পর্যন্ত খুবই আনন্দ উল্লাসে থাকতাম। নতুন জামা-কাপড় পড়বো। সবাই মিলে আনন্দ করব।

প্রশ্ন ৫. কিভাবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পুজোর অনুভূতি বদলালো?
উত্তর— বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ব ও পরে যখনই সাম্প্রদায়িক হামলা হতো তখনই এলাকার লোক দেশান্তরিত হতো। তখনই সবার ভেতরে হতাশা দেখা দিতো।

প্রশ্ন ৬. আপনি কোথায়, কী কাজ করতেন? কালীবাড়ির পুজোর সঙ্গে কিভাবে, কবে থেকে গাঁটছড়া? অন্য কোনও পরিচয়?
উত্তর— একটি ব্যাঙ্কের আধিকারিক ছিলাম। এই সঙ্গে বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলাম প্রত্যক্ষভাবে। আমাদের গ্রামে পূর্বপুরুষ থেকেই কালীপূজা হতো। আমি বর্তমানে এই পূজা কমিটির সভাপতি এবং আগে আমার দাদা ওই পূজা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

প্রশ্ন ৭. মুক্তিযুদ্ধের সময় কতটা প্রভাব পড়েছিল দুর্গাপুজোর ওপর?
উত্তর— প্রভাব পড়েনি। অন্তত পুজো শান্তিতে হয়েছে। মণ্ডপ, মন্দির, প্রতিমার ওপর আক্রমণ হয়নি।

প্রশ্ন ৮- এবারের পুজোর পরিবেশ কি রকম? কতটা মানসিক চাপ? কেন?
উত্তর— গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ৫ আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ২টার পর সরকারের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ৪ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত ৫ দিন বাংলাদেশে ৫৬টি জেলা ও ১২টি মহানগরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর এক নারকীয় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানো হয়। আমাদের জানা ২ হাজারেরও বেশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটে। এর মধ্যে হত্যা, নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন, উপাসনালয়ে হামলা, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুটপাট-ভাঙ্গচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুঃখজনক হলো এ দেশের সরকার ও রাজনৈতিক দল এ সকল মর্মান্তিক ঘটনাসমূহকে সাম্প্রদায়িক হিংসা না বলে রাজনৈতিক হামলা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল। এখনও এ ধরণের হামলা চলছে।

প্রতিদিনই নির্মাণাধীন প্রতিমা ভাঙ্গার খবর আসছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমাদের আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু হামলা বন্ধ হচ্ছে না। শনিবার (০৫ অক্টোবর) দুপুর ৪টায় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে এসে সারা দেশে জেলায় জেলায় পূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন।

প্রশ্ন ৯. ঢাকা দুর্গাবাড়ির উদ্ধব ও বিবর্তন?
উত্তর— ঢাকায় এখন ২৫০টির অধিক মণ্ডপে দুর্গাপূজো হয়ে থাকে। স্বাধীনতার আগে দুর্গাপূজার সংখ্যা এর চেয়ে অনেক কম ছিল। এ দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় প্রশাসনিক কার্যক্রম চললে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজোৎসবের পরিসর বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্ন ১০. এখনও বাংলাদেশের কোন কোন পুজো বিখ্যাত? কেন?
উত্তর— বাংলাদেশের সব জেলায় কমবেশি সর্বজনীন দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীবাড়ি, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, গুলশান-বনানী পূজামণ্ডপ ও ধানমণ্ডি পূজামণ্ডপে অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণভাবে অধিক ভক্তের উপস্থিতিতে দুর্গোৎসব হয়।

প্রশ্ন ১১.পুজোর দায়িত্ব নিতে কতটা প্রস্তুত ভবিষ্যতের প্রজন্ম?

উত্তর— এ দেশে ছাত্র-যুব সমাজ পূজোর আয়োজনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নারীদের ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ চললে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দুর্গোৎসবকে আরও ধর্মীয় ভাবগাম্বীর্যপূর্ণভাবে করার কাজে এগিয়ে আসবে সে আশা রাখছি।
***
ছবি (ওপর থেকে)— ১) মনীন্দ্র কুমার নাথ।
২) ঢাকায় বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলার পর স্বজনদের সঙ্গে।
৩) ঢাকায় ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে। মনীন্দ্রবাবুর ডানে বাংলাদেশের তৎকালীন হাই কমিশনার, পরবর্তীতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন সিংলা, বামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী সমিতির প্রাক্তন সাধারন সম্পাদক ও ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রঞ্জন কর্মকার।
৪) মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *