আমাদের ভারত, ১০ ডিসেম্বর: এক দেশ এক ভোট ব্যবস্থা চালুর লক্ষ্যে চলতি অধিবেশনে বিল আনতে চলেছে মোদী সরকার বলে শোনা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ইতিমধ্যে এক দেশ এক ভোট সংক্রান্ত রামনাথ কোবিন্দ কমিটির রিপোর্ট অনুমোদন করেছে। সরকার এখন বিলটিতে ঐক্যমত গঠন করতে চাইছে বলে সূত্রের খবর। তাই বিশদে আলোচনার জন্য বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
যৌথ সংসদীয় কমিটিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। সেখানে এক দেশ এক ভোট বিলটির নানা দিক নিয়ে আলোচনা হবে। এই বিষয়ে অন্যান্য শরিকদেরও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা যাবে। গোটা দেশের প্রাজ্ঞদেরও ডাকা হতে পারে। সব বিধানসভার অধ্যক্ষদেরও ডাকা হবে। পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে সাধারণ দেশবাসীর কাছেও।
এক দেশ এক ভোট বিল পাস করানো চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করা হচ্ছে। এক দেশ এক ভোট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনে সংসদে সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন হবে। সংসদের উভয় কক্ষে এনডিএ’র সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া বেশ কঠিন কাজ হতে পারে। রাজ্যসভার ২৪৫টি আসনের মধ্যে এনডিএ’র রয়েছে ১১২টি আসন। বিরোধী দলগুলির কাছে রয়েছে ৮৫টি। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য কমপক্ষে ১৬৪টি ভোটের প্রয়োজন।
লোকসভায় এনডিএ’র ৫৪৫টির মধ্যে আসনের মধ্যে ২৯২টি আসন রয়েছে। দুই তৃতীয়াংশের সংখ্যা গরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৩৬৪টি আসনের। তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে, কারণ এই বিলের উপর ভোটাভুটি যেহেতু সংসদে উপস্থিত সদস্যদের ভোটদানের উপরেই নির্ভর করবে।
মোদী সরকার অনেক আগে থেকেই এক দেশ এক ভোট ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের যুক্তি, এর ফলে প্রথমত, বারবার নির্বাচনের বিপুল খরচ কমানো যাবে। ভোটের পিছনে যেমন সরকারের খরচ কমবে তেমনি রাজনৈতিক দলগুলির খরচ কমবে। দ্বিতীয়ত, বারবার নির্বাচনের জন্য সরকারি কাজকর্ম, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প থেমে যাবে না। একসঙ্গে ভোট হলে বারবার উন্নয়নের কাজ থমকে যাওয়া কম হবে। তৃতীয়ত, বারবার নির্বাচনের ফলে বারবার পরিশ্রম করতে হয়, ঝোক্কি পোহাতে হয় ভোট কর্মী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের। সেটাও খানিক কমানো যাবে। চতুর্থত, একসঙ্গে বিধানসভা ও লোকসভা ভোট হলে ভোটের হার বাড়তে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। পঞ্চমত, রাজনৈতিক দলগুলিরও সারা বছর ভোট প্রচারের ঝক্কি না থাকায় মানুষের কাজে অনেক বেশি মনোনিবেশ করতে পারবে।
কিন্তু এক দেশ এক ভোটের বিরুদ্ধে সরব কংগ্রেস, তৃণমূল সহ অনেক বিরোধী দলগুলি। তাদের দাবি, যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সংসদ ও বিধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেটুকু বৈচিত্র্যের সম্ভাবনা রয়েছে এই নীতির ফলে তা ভেঙে পড়তে পারে। দেশের এক এক রাজ্যে বিধানসভার মেয়াদ শেষ হয় একেক সময়। একসঙ্গে ভোট করাতে হলে কোনো একটি রাজ্যের ভোট এগিয়ে আনতে হবে, কোনো কোনো রাজ্যের ভোট পিছিয়ে দিতে হবে। এটা পদ্ধতিগতভাবে সমস্যা। তাছাড়া লোকসভা ও বিধানসভা ভোট চরিত্রগতভাবে আলাদা, রাজ্য ও কেন্দ্রের ভোট একসঙ্গে হলে বিধানসভা ভোটের চরিত্র নষ্ট হতে পারে বলেও আশঙ্কা বিরোধীদের। কোনো রাজ্যে, বা কেন্দ্রে মেয়াদের মাঝপথে সরকার পড়ে গেলে সেই রাজ্য বা কেন্দ্রে নির্বাচন করার প্রয়োজন হবে, ফলে এক দেশ এক ভোটের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হবে না। তাদের আরো দাবি, একসাথে ভোট হলে প্রতি ১৫ বছরে দশ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে কেবল ইভিএম-এর জন্যই, যা বর্তমানের খরচের চেয়ে বেশি। একসঙ্গে ভোট হলে ভোট কর্মী, নিরাপত্তা কর্মীদের অতিরিক্ত চাপ বাড়বে।