শেখ হাসিনার সাথে গণভবনে ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ

আমাদের ভারত, বাংলাদেশ, ১২ এপ্রিল: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এক প্রতিনিধি দলের সাথে বুধবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একান্তে বৈঠক হয় তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে। অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ ও সৌহার্দ্যমূলক পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ঐক্য পরিষদের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বিরাজমান সমস্যাসমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে বলেন, ‘এ সবই আপনার জানা, তারপরও আপনার সদয় দৃষ্টিতে আনছি কারণ এর সমাধান আপনারই হাতে।

রাণা দাশগুপ্ত বিগত ১৪ বছরে দেশের যে প্রভূত উন্নয়ন ঘটেছে তার প্রশংসা করার পাশাপাশি উল্লেখ করেন, ‘মননে ও মানসিকতায় সমাজ ক্রমশ পিছিয়ে যাওয়ার কারণে দেশ আজও সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় বৈষম্যমুক্ত হতে পারেনি। মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মঠ, মন্দির, গীর্জা বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হামলার শিকার হচ্ছে। ধর্ষণ, অপহরণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ চলছে। এর পেছনে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে সংখ্যালঘু শূণ্য করা।

বিগত সাত দশকের ঊর্ধ্বকাল ধরে অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়ন, বৈষম্য, বঞ্চনা, অবহেলার শিকার হয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আজ অগ্রসরমান জনগোষ্ঠী থেকে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু জনসংখ্যা ১৯৪৭ সালের ২৯.০৭%, ১৯৭১ সালের ১৯%-২০%, ১৯৭৪ সালের ১৪.০৬%, ২০২৩ সালে এসে ৯.১%-এ দাঁড়িয়েছে।

ঔপনিবেশিক আমলের মত স্বাধীন বাংলাদেশে অনুসৃত নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব ক্রমশ বিলীয়মান। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর হার ৯৮.৬% থেকে বর্তমানে আনুমানিক ৪৮% এ ঠেকেছে। ৭৫-র পূর্বেকার মত জাতীয় সংসদের অধিবেশনের শুরুতে দেশের সকল সম্প্রদায়ের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ পুনরায় প্রচলন করার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন।

অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত তাঁর বক্তব্যে বিগত ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে সরকারি দলের ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুত অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের উপর জোর দেন। তিনি অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কামনা করেন।

জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ও সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন বাংলাদেশের বিদ্যমান বাস্তবতায় জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়াও সমতলের আদিবাসীদের জন্যে পৃথক ভূমি কমিশন গঠন এবং অনগ্রসর ও অনুন্নত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, দলিত ও চা বাগান শ্রমিকদের শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা ও সুযোগ সুবিধা অব্যাহত থাকলেও তা যথাযথভাবে বাস্তাবায়নের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা কামনা করেন।

অ্যাডভোকেট দাশগুপ্ত আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইতোমধ্যে প্রণীত বৈষম্য বিরোধী আইনে প্রতিকারের দীর্ঘসূত্রিতা দূর করে ও আদালতের কাঠামো পরিষ্কারভাবে উল্লেখসহ অপরাধীদের শাস্তির বিধান বিধৃত করে উক্ত বিল চূড়ান্তপূর্বক তা আইনে পরিণত করার উদ্যোগ গ্রহণ ও ধর্মমন্ত্রণালয়ে থাকা দেবোত্তর সম্পত্তি আইন সংক্রান্ত চূড়ান্তকৃত বিলটিকে অনতিবিলম্বে আইন হিসেবে পরিণত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমিকমিশনের যথাযথ কার্যকরীকরণেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের উপর তিনি জোর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীকে পুনরায় অনুরোধ জানিয়ে তাঁর বক্তব্যের সমাপ্তি টানেন।

প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধৈর্যসহকারে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য শোনেন এবং তাঁর শাসনামলে কোভিডসহ উদ্ভুত নানান সংকট মোকাবেলা করে দেশের সার্বিক উন্নয়নের প্রতি প্রতিনিধি দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সহযোগীতা কামনা করেন। ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইনের প্রস্তাবিত দু’টি খসড়া বিলসহ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রাদি প্রধানমন্ত্রীর নিকট হস্তান্তর করলে তিনি তা আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেন।

ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদলে ছিলেন সাবেক সাংসদ ঊষাতন তালুকদার, ড: নিমচন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও, অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, কাজল দেবনাথ, ভদন্ত সুনন্দপ্রিয়, জে এল ভৌমিক, মিলন কান্তি দত্ত ও মনীন্দ্র কুমার নাথ। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্মল কুমার চ্যাটার্জিও এই সময় উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *