আমাদের ভারত, ১৩ আগস্ট: আরজিকরে মহিলা চিকিৎসকের ময়না তদন্তের রিপোর্টে নারকীয় অত্যাচার করে খুনের অভিযোগ সামনে এসেছে। মৃতার পরিবার ছাড়াও একাধিক মামলা হয়েছিল হাইকোর্টে। আজ হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তভার সিবিআই- এর হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদের ঢেউ থামেনি। চিকিৎসক থেকে সাধারণ মানুষ পথে নেমেছেন প্রতিবাদ করতে। পথে নেমেছেন সেলেবরাও। তবে এই ঘটনার বিরুদ্ধে জোড়ালো প্রতিবাদে পথে নামতে চলেছেন রাজ্যের মহিলারা। স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে অর্থাৎ ১১.৫৯ মিনিটে নারী স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিতে মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। শহর- শহরতলী থেকে শুরু করে জেলায় জেলায় মধ্য রাতে রাস্তায় নামতে চলেছেন মহিলারা। জানা যাচ্ছে এই প্রতিবাদে থাকছেন সেলেবরাও।
তরুণী চিকিৎসকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে দেশ উত্তাল হয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে আন্দোলন করছেন সাধারণ মানুষ। তাই স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে নারী স্বাধীনতার দাবিতে রাত দখলের ডাক দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা নামে এক রিসার্চার।
এই রিমঝিম সিনহার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে জানা যাচ্ছে তিনি ইনকিলাবি স্টুডেন্টস ইউনিটি- বিপ্লবী শিক্ষার্থী ঐক্য নামে একটি সংগঠনের সদস্য। “নারী স্বাধীনতার দাবিতে রাত দখল করুক মেয়েরা” আজ রিমঝিমের ডাকা এই আন্দোলনে পা বাড়াচ্ছেন সকলে। এই ডাকে সামিল হয়েছেন হাজার হাজার মেয়েরা। ১৪ আগস্ট রাত বারোটার আগে কলকাতা সহ জেলায় জেলায় মেয়েদের জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়েছে নাগরিক সমাজের উদ্যোগে। যদিও এই প্রতিবাদের মঞ্চ একেবারে অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হয়েছে।
এই রাত দখলের প্রথম ডাক দেওয়া প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী রিমঝিম সিনহা দুদিন আগে ফেসবুকে লেখেন রাত দখল করো। তিনি লেখেন, “আমি রিমঝিম সিনহা। আমি শুনলাম আরজিকরের প্রিন্সিপাল বলেছে রাতে মেয়েটির একা ওদিকে যাওয়া ঠিক হয়নি। রাতে একা থাকা ঠিক হয়নি। আমি রাতেই থাকবো ১৪ আগস্ট রাত ১১:৫৯ নাগাদ স্বাধীনতা দিবসের দিন আমরা নারী স্বাধীনতার জন্য রাতে বাইরে থাকবো। গান গাইবো, গান শুনবো, আড্ডা দেব। যা ইচ্ছে তাই করবো।” তিনি আরো লেখেন, “রাত মেয়েদের জন্য সেভ নয়। এটা মেয়েদের পোশাক নয়। মেয়েটির চরিত্র ঠিক নয়। এসব আর শুনতে বাধ্য নই। সারারাত বাইরে থাকবো, যারা থাকতে চান কমেন্টে জানান।”
এই পোষ্টের পরেই শেয়ার ও কমেন্টে ঝড় ওঠে। রাত দখলের ডাক ছড়িয়ে পড়ে দিকে দিকে। বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়াতেই সংগঠিত হয় এই অভিযান।
এরপর রিমঝিম একটি ভিডিও বার্তায় ফেসবুকে জানান, “আমি আরজিকরের ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা মেয়েরা কোথায় নিরাপদ? একজন ডিউটিরত মহিলা ডাক্তারের যদি এমন অবস্থা হয়, ধর্ষণ হয়ে খুন হতে হয়, তাহলে আমরা যারা পথে বেরোই রাতে ফিরি, তাদের নিরাপত্তা কোথায়? এই জায়গা থেকেই আমি ফেসবুকে একটা কল দি। সেই স্বাধীনতার আগের রাতে আমি নিজের নিরাপত্তায় স্বাধীনতার দাবিতে রাস্তায় বসব। তবে সেটাতে এত বড় সাড়া পাবে তা আমি আশা করিনি।” তিনি বলেন, “মেয়েদের চাল চলন ঠিক করে দেওয়ার প্রবণতা সমাজে বহুদিন, কিন্তু তা করে মেয়েরা কিছু পাচ্ছে না। সেই কারণেই এই রাত দখলের ডাক, ছিনিয়ে নেবেন নারী স্বাধীনতা” তবে জমায়েতে রাজনৈতিক পতাকা ছাড়া আসার অনুরোধ করেন তিনি।
রিমঝিমের এই ভিডিও বার্তা নিজেদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কের প্রোফাইলে অনেকেই শেয়ার করেছেন। এই কর্মসূচির পোস্টার বহু বহু শেয়ার হয়েছে। অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন মেয়েদের শাড়ি, শাড়ির আঁচল, ব্লাউজের মাপ, কতটা বুক দেখা যাওয়া ঠিক, কোনটা বেঠিক, কোনটা শালীন নয়, এসব নিয়ে শুনেই চলেছে। মেয়েদের নিয়ে আঙ্গুল তোলাটাকে আমরা নরমালাইজ করে ফেলেছি। আমরাই করেছি। আমি প্রতিবাদ করতে গেলে দেখেছি গালাগাল শুধু পুরুষরা না মহিলারাও দিয়েছেন। নিরাপত্তা আদায় করে নেওয়াটা আমাদের কাজ নয়, দাবি নয়, এটা আমাদের প্রাপ্য। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন পুরুষদের কি নিরাপত্তা চাইতে হয়? তাহলে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমাদের চাইতে হবে কেন? মেয়েদের সম্মানের মাপকাঠি শাড়ির আঁচল দিয়ে হবে না। যা যা জিনিস আমরা নরমালাইজ করেছি সেই সব মানসিকতা বর্জন করে আসুন চিৎকার করুন, প্রতিবাদ করুন, আজ আপনি আমি ভালো আছি, কাল আমাদেরও কোমর ভেঙ্গে কেউ ঝুলিয়ে রেখে রেপ কেস সুইসাইড বলে চালিয়ে দিতে পারে আর সেটা হতে দেওয়া যাবে না।”
কলকাতা, যাদবপুর, অ্যাকাডেমি, সিঁথির মোড়, ডানলপ, শ্রীরামপুর উত্তরপাড়া, নৈহাটি থেকে শুরু করে মালদা, রায়গঞ্জ, চুঁচুড়া, হুগলি, আসানসোল, দুর্গাপুর বহু বহু শহর শহরতলিতে রাত দখল হতে চলেছে ১৪ তারিখ বলে খবর। দুর্গাপুরে এই কর্মসূচির পোস্টারের যে ফোন নম্বর দেওয়া আছে তাতে ফোন করলে দেবযানী বোস জানান, দুর্গাপুরে নাগরিক সমাজের ডাকে এই রাত দখল কর্মসূচি হতে চলেছে। মৌনতা ও পোস্টার ধরে প্রতিবাদে সামিল হবেন তারা। প্রতিবাদ জানিয়ে সাক্ষর অভিযান হবে ওইদিন। তিনি আরও জানান, এই প্রতিবাদ কর্মসূচিকে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে একটি কমিটিও গঠিত হবে আগামী দিনে। অর্থাৎ এখানেই শেষ হবে না আন্দোলন। অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিৎ মুখোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় সহ বেশ কিছু সেলেব্রিটি এই জমায়েতে সামিল হওয়ার কথা জানিয়েছেন তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে।