প্রীতিলতা নেই, সূর্য সেন নেই, স্মৃতিমেদুরতাই সাধ মেটাচ্ছে আগ্রহীদের

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ১৭ মার্চ:
সেলুলয়েডের প্রীতিলতা আর মাষ্টারদাকে সামনে থেকে দেখার আশায় ছিলেন অনেকে। তাঁদের না পেয়ে ছবির পরিচালক এবং আগত অন্যদের সঙ্গে কথা বলে তৃপ্ত থাকতে হল অনুরাগীদের। চট্টগ্রামের স্মৃতিমেদুরতাই সাধ মেটাচ্ছে আগ্রহীদের।

বাংলাদেশে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বীরকন্যা প্রীতিলতা’ চলচ্চিত্রটি পশ্চিমবঙ্গের আগ্রহীদের দেখার সুযোগ দিতে পরিচালক প্রদীপ ঘোষ এবং ছবির কিছু কুশীলবরা এসেছেন কলকাতায়। বৃহস্পতি থেকে রবি— এই চার দিনে কলকাতা প্রেস ক্লাব, আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজ এবং বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতি সংস্থার সূর্য সেন ভবনে হচ্ছে বিশেষ প্রদর্শনী। হচ্ছে সংশ্লিষ্ট নানা আলোচনা।

অনেকেই আগ্রহী ছিলেন এই অবকাশে ছবির প্রীতিলতা ওরফে বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা এবং সূর্য সেনের চরিত্রাভিনেতা কামরুজ্জামান তাপুকে কাছ থেকে দেখার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা আসতে পারেননি। প্রদীপ ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা আশায় ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেছি। শেষ পর্যন্ত ভিসা জটিলতায় পৌঁছতে পারেননি ওঁরা।” যদিও বাকি অতিথিদের দেখে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আগ্রহীরা খুশি। কারণ, আজও পশ্চিমবঙ্গে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার অভিযানের কথা শুনলেই রক্তে দোলা আবালবৃদ্ধবনিতার।

ভারতের স্বাধীনতার লড়াইয়ে প্রথম নারী শহিদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবন নিয়ে প্রিমিয়ার হল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কলকাতা প্রেস ক্লাবে। পরিচালক জানান, বাংলাদেশ সরকারের আংশিক আর্থিক অনুদানে তৈরি ছবিটি বাংলাদেশের কলেজপড়ুয়াদের দেখানোর জন্য নির্দেশ জারি করেছে সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।

শুক্র ও শনি দু’দিন বিকেলে আলোচনাসভার আয়োজন করে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু কলেজ এবং কে আর এস ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন। সঙ্গে ছিল বীরকন্যা প্রীতিলতা এবং গিরিকন্যা চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। প্রথম দিনের আলোচনার বিষয়: ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভূমিকা এবং চলচ্চিত্রে তার প্রতিফলন। দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শনিবার আলোচনার বিষয়— ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ আন্দোলনে চলচ্চিত্রের ভূমিকা’। দুদিনেরই উদ্বোধক আয়োজক কলেজের অধ্যক্ষ ড: পূর্ণ চন্দ্র মাইতি।

শুক্রবারের মুখ্য আলোচক ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড: রাম আহ্লাদ চৌধুরী, প্রধান অতিথি বাংলাদেশ মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডঃ সাজ্জাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘বীরকন্য প্রীতিলতা’-র পরিচালক প্রদীপ ঘোষ ও গিরিকন্যার প্রযোজক ডাঃ মং উষা থোয়াই মারমা ও শারমিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন ডঃ অর্চনা পাণ্ডে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন উপাসনা সরকার ও পন্ডিত মল্লার ঘোষ। শনিবারের মুখ্য আলোচক ও বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন অধ্যাপক শ্যামলেন্দু চ্যাটার্জি ও অধ্যাপিকা সাবিনা নিশাত উমর। থাকবেন প্রদীপ ঘোষ, মং উষা থোয়াই মারমা ও ড. রাম আহ্লাদ চৌধুরীও।

রবিবার শহিদ সূর্যসেন ভবনে ‘বীরকন্য প্রীতিলতা’
ছায়াছবি প্রদর্শনী ও আলোচনায় বিশেষ অতিথি থাকবেন অধ্যাপক ডঃ সাজ্জাদ হোসেন, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির প্রাক্তন সভাপতি অধ্যাপক ডঃ পল্লব সেনগুপ্ত, এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ডঃ সত্যব্রত চক্রবর্তী, কবি ও শিক্ষাব্রতী তথা শহিদ রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের চরিত্রের অভিনেতা মনোজ প্রামাণিক, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সালাহউদ্দিন মোঃ রেজা ও দেবদুলাল ভৌমিক প্রমুখ।

এর আগে বৃহস্পতিবার প্রেস ক্লাব কলকাতার প্রিমিয়ারে আলোচনায় অংশ নেন ক্লাবের সভাপতি স্নেহাশিস সুর, সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, বেথুন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষা অধ্যাপিকা ড: কৃষ্ণা রায়, ছবির পরিচালক, প্রযোজক প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের কিছু আধিকারিক এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের আট প্রতিনিধি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *