Mahakumbho, বাঁচাও আর্তনাদে-ও এগিয়ে আসার সাহস দেখাননি কেউ, ত্রাতা সেনাবাহিনী

আশিস মণ্ডল, কুম্ভ, ২৯ জানুয়ারি: বাচ্চা থেকে বুড়ো, তরুণী থেকে মহিলার আর্তনাদে অনেকেই হতভম্ব হয়ে পড়েন। ফলে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে পিঠটান দেন ব্যবসায়ীরা। ভয়ে আশ্রমের গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে ঘুমের মধ্যেই প্রাণ হারালেন ত্রিশের বেশি পুণ্যার্থী। ঘটনাটি ঘটেছে কুম্ভ মেলার সঙ্গম ঘাটে যাওয়ার প্রধান রাস্তা সেক্টর ২১- এর লহর সঙ্গম মর্গে।

প্রতক্ষদর্ষীদের মতে রাত তখন ২ থেকে ২.৩০ মিনিট। রাস্তার দুই ধারে হাজার হাজার মানুষ শুয়েছিলেন। সেই সময় নাগা সন্যাসী থেকে বিভিন্ন আখড়ার সন্যাসীরা শাহী স্নানের জন্য ছুটছিলেন। পুলিশ তাদের রাস্তার দু’ধারে ব্যারিকেড করেছিল দড়ি দিয়ে। রাস্তার ধারে বহু মানুষ সেই দৃশ্য উপভোগ করছিলেন। এক সময় আচমকা ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। প্রাণ বাঁচাতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন শুয়ে থাকা মানুষজনের উপর দিয়ে ছোটাছুটি শুরু করে। সেই সময় সব কিছু পুলিশেরও আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। ফলে কয়েকশো মানুষ জখম হন। শিশু থেকে বৃদ্ধদের বাঁচাও আর্তনাদ শুরু হলেও বাঁচানোর কেউ ছিল না। অনেক পরে সেনাবাহিনী হাজির হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে অঘটন ঘটে গিয়েছে। মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দোকান ভেঙ্গে ছোটছুটি শুরু করে। ফলে কয়েকটি দোকান ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ঘটনার পর এলাকায় আহত- নিহতদের জুতো, পোশাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বিকেলের দিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জুতো, পোষাক ট্রাক্টরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

ঘটনার প্রতক্ষদর্ষী অনুষ্কা নিষাদ, রবি পুস্কর মারিরা এখনো রাতের ঘটনা মনে করে শিউরে উঠছেন। অনুষ্কার বাড়ি পুরানী জোশি। বাবা, মা, ভাই, দুই বোনকে নিয়ে ১৫ দিন আগে চুড়ি, মালার দোকান করেছে। রাতে দোকান খুলে রেখেছিল। মানুষের চাপে তার দোকান ধূলিসাৎ। লক্ষাধিক ক্ষতি তাদের। অনুষ্কা বলেন, “আমরা তখন দোকানে ছিলাম। দুই দিকে মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাঝের রাস্তায় নাগা সন্যাসী থেকে আখড়ার সাধুরা ছুটে স্নান করতে যাচ্ছেন। হঠাৎ কিছু মানুষ ছোটাছুটি শুরু করেন। হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আমার দোকানে আশ্রয় নেয়। আমরা সকলে মিলে দোকান ছেড়ে পালিয়ে যাই। পরে এসে দেখি সব শেষ। কিছু লাভের আশায় ব্যবসা করতে এসেছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল”।

পাশের চায়ের দোকানের রবি পুস্কর মারি বলেন, “বলরামপুর বারাঠি থেকে এসে চায়ের দোকান করেছিলাম। ঘটনার সময় দোকান খুলে চা বিক্রি করছিলাম। কিন্তু হঠাৎ কিছু মানুষ আমার দোকানে আশ্রয় নেয়। তারপর আমি দোকান ছেড়ে পালিয়ে যাই। সকালে এসে দেখি দোকান সব শেষ। ৮০ হাজার টাকার জিনিসপত্র নষ্ট। পুলিশের সামান্য ভুলে এমন ঘটনা ঘটল”।

মধ্যেপ্রদেশ থেকে ২০ জানুয়ারি মহা বিরক্ত গোকুল নগর আশ্রমে এসেছিলেন অনিল শর্মা। তিনি বলেন, “ঘটনার সময় আমি গেটে দাঁড়িয়েছিলাম। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার এবং লোকের ছোটছুটি দেখে ভয়ে আশ্রমের গেট বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কারণ আমাদের আশ্রমেও তখন বহু পুণ্যার্থী শুয়েছিলেন। গেট বন্ধ না করলে আমাদের আশ্রমেও অঘটন ঘটত।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *