আমাদের ভারত,১৩ ফেব্রুয়ারি: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ফেক নিউজ, গুজব, পর্নোগ্রাফি, সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোয় লাগাম টানার চেষ্টা করেও সফল হয়নি ভারত সরকার। কারণ সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলি ইউজারদের নিরাপত্তার অজুহাতে একের পর এক আপত্তি করেই চলেছে। কিন্তু এইবার হয়তো তার ইতি ঘটতে চলেছে। এমন একটি আইন আসতে চলেছে যাতে ভারতীয় কোনও গোয়েন্দা সংস্থা যদি চায় তাহলে সংশ্লিষ্ট ইউজারের যে কোনও তথ্য দিতে বাধ্য থাকবে সংস্থাগুলি। তার জন্য কোনও আদালতের নির্দেশে প্রয়োজন হবে না। চলতি মাসের শেষেই কার্যকরী হতে পারে এই আইন।
আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াগুলি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই সময় এই আইন নিয়ে অনলাইনে সাধারণ মানুষের মতামত চায় সরকার। ইন্টারনেট এন্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া তরফে বলা হয়েছিল আইন কোর্টের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা সংক্রান্ত নির্দেশ লঙ্ঘিতে হবে। ফেইসবুক, আমাজনের মত সংস্থাগুলি এই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। কিন্তু সেই আপত্তিতে কর্ণপাত না করে সাধারণ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে চলতি মাসের শেষের দিকে এই আইন কার্যকরী হতে পারে বলে খবর।
কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের মিডিয়া উপদেষ্টা এন এন কল বলেন, গাইডলাইন তৈরীর প্রক্রিয়া চলছে তবে চূড়ান্ত খসড়া তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
২০১৮ সালের প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছিল ইউটিউব, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইন্সট্রাগ্রাম টিকটকের মতো অ্যাপে কোন পোস্ট সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দারা তথ্য চাইলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে তার উৎস অর্থাৎ কে প্রথম পোস্ট বা শেয়ার করেছিল তা জানাতে হবে। এই সব সংস্থাগুলিকে অন্তত ছয় মাসের সব তথ্য রাখতে হবে। যাতে যে কোনও তদন্তের প্রয়োজনে সেগুলিকে উদ্ধার করা যায়। নিয়োগ করতে হবে একজন গ্রিভান্স অফিসার। এই গ্রিইভান্স অফিসার সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন ইউজারদের এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। একই সঙ্গে এই অফিসার ভারতের তদন্তকারী সংস্থা ও সরকারের মধ্যে সমন্বয় কাজ করবেন।
এখন সেই আইনে কার্যকর হতে চলেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু ফেসবুক গোড়া থেকেই বিরোধিতা করে আসছে এটার। তাদের বক্তব্য হোয়াটসঅ্যাপে সবকিছুতেই এন্ড টু এন্ড সাবস্ক্রিপশন প্রযুক্তি রয়েছে, অর্থাৎ শুধুমাত্র দুই প্রান্তে দুজন ব্যবহারকারী তাদের মধ্যে আদান-প্রদান করা কল মেসেজ ছবি ও ভিডিওর তথ্য পাবেন। তৃতীয় কোনও ব্যক্তি এমন কি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ সেই তথ্য পাবেন না। ভারত সরকারের এই আইন মানলে গ্রাহকদের সুরক্ষা বিঘ্নিত হবে। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীদের সুরক্ষার সঙ্গে কখনোই হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ আপস করবে না। বরঞ্চ কীভাবে তাদের সুরক্ষার সুনিশ্চিত করা যায় তার জন্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সাহায্য নিয়েই অপব্যবহার আটকাতে চেষ্টা করবে, একইসঙ্গে নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রেখে অভিযোগ জানানো, নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কাজ করা হবে।
কিন্তু আইন প্রণয়ন হলে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে এই আইন মানতেই হবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। কিন্তু বিদেশী ব্যবহারকারীরা এই আইনের আওতায় আসবেন কিনা তা এখনোও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।