আমাদের ভারত, ১৪ জুন: নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, পরীক্ষায় বেনিয়ম হয়েছে। এই ঘটনায় বিরোধীরা একেবারে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হতে শুরু করেছে। এই ইস্যুতে বিরোধীদের জবাব দিয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছেন, নিটের প্রশ্ন পত্র কখনোই ফাঁস হয়নি। বিরোধীরা নির্বাচনে হারার পর দিশেহারা হয়ে ভ্রান্ত বিষয়কে ইস্যু করে নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। তাঁর কথায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার ঘটনায় সিবিআই তদন্ত শুরু করতে গেলে প্রাথমিক ভাবে কিছু প্রমাণ অন্তত লাগে। বিরোধীরা প্রশ্ন ফাঁসের কোনো একটি প্রমাণও কি দিতে পারবেন?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেন, প্রায় ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী নিট পরীক্ষা দিয়েছে। এর মধ্যে ১৩ লক্ষ কোয়ালিফাই করেছে। তার মধ্যে কেউ কেউ যাবে এমবিবিএসে, কুড়ি হাজার মতো যাবে ডেন্টালে। কেউ কেউ যাবে আয়ুর্বেদিক হোমিওপ্যাথিতে। আর সমস্যা হয়েছে ছয়টি সেন্টারে। যে কোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রে দুটো সেট তৈরি করা হয়। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। বহু বছর ধরে এটাই হয়ে আসছে। পরীক্ষা শুরুর মুহূর্তে উপর থেকে নির্দেশ আসে কোন সেটের প্রশ্নপত্র খুলে পরীক্ষায় দেওয়া হবে সেটা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ছয়টি সেন্টারে যে সেটের প্রশ্ন খোলার কথা তার বদলে অন্য সেট খুলে তারা পরীক্ষায় দেয়। এর ফলে এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট কিংবা যারা পরীক্ষা পরিচালনা করছে তাদের কিছুই করার নেই। যারা এক্সাম সেন্টারে ছিলেন এটা তাদের ভুল। এরপরে যখন দেখা যায় যে ভুল সেট তারা খুলেছে তখন আবার উপর থেকে নির্দেশ যায় আপনারা এটা ভুল সেট খুলেছেন। ১৫৬৩ জন এই ছয়টি সেন্টারের পরীক্ষার্থী। যেহেতু দেরি করে তাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে তাদেরকে পরে গ্রেসমার্ক দেওয়া হয়।”
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান, এর আগে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী গ্রেস মার্কস দেওয়া হয়েছিল। আইনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই রকম ঘটনা ঘটেছিল। সুপ্রিম কোর্টের একটি স্ট্যান্ডিং নির্দেশ ছিল, কোনো পরীক্ষার্থী যদি কর্তৃপক্ষের কারণে সময় না পায় তাহলে তাদেরকে গ্রেস মার্ক দিতে হবে। আমাদের শিক্ষা দপ্তর সেটাই করেছিল। “কিন্তু এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রায় এসে যায়। সুকান্ত মজুমদার জানান, “আমরা আদালতের রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। এই ১৫৬৩ জনের জন্য সুপ্রিম কোর্ট দুটি রায় দিয়েছেন হয় তোমরা নতুন করে পরীক্ষা দাও আগামী ২৩ তারিখ পরীক্ষা হবে। অথবা তোমরা যে নম্বরটা পেয়েছিলে গ্রেস মার্ক ছাড়া সেই নাম্বারটাই গণ্য হবে। সবার সমস্যা মিটে গেল। যার যেটা পছন্দ হবে সে সেই অপশনে চলে যাবে। এই সমস্যা মিটে গেছে।”
এরপর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দাবি করেন, “আমাদের বিরোধীরা মিথ্যে কথা বলার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন পত্র ফাঁস হবার এখনো পর্যন্ত কোনো প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়নি।”
তিনি বলেন, ভারতবর্ষের বিভিন্ন জায়গা থেকে যারা সুযোগ পেয়েছে প্রথম যে এক হাজার জন তারা প্রায় ৮৯টি শহর থেকে সুযোগ পেয়েছে। এটাতো হতে পারে না ৮৯টি শহরেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। সেটা হলে বাইরে চলে আসতো আপনারা জানতে পারতেন। তিনি বিরোধীদের কাছে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, “আপনারা বলছেন প্রশ্নপত্র লিক হয়েছে, তার তথ্য প্রমাণ দিন। লিক হয়েছে বলে চিৎকার করে লাভ নেই। তথ্য প্রমাণ দিন, আমরা মেনে নেব। এখনো পর্যন্ত কেউ তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি যে কোশ্চেন লিক হয়েছে।”
কটাক্ষ করে তিনি বলেন, বিরোধীরা ভোটে হারার পর থেকে মনের দুঃখে আছেন। যেখানে কোনো ইস্যু নেই সেখানেও লাফিয়ে পড়ছেন এবং বলছেন এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। কিন্তু তদন্ত শুরু হওয়ার আগে প্রাথমিকভাবে তো কোনো প্রমাণ দেবেন যে প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়েছে। কোনো তথ্য প্রমাণ নেই, অথচ কেবলই বলে যাচ্ছেন ফাঁস হয়েছে, লিক হয়েছে। আমরা মনে করি এটা নোংরা রাজনীতি হচ্ছে।” সুকান্ত মজুমদার জানান, পরীক্ষা ব্যবস্থাকারী এনটিএ একটি সফল সংস্থা হিসেবে পরিচিত। কারণ বহু পরীক্ষা নির্বিঘ্নে নিয়ে তারা বারবার সেটা প্রমাণ করেছে। তারা একটি বিশ্বস্ত সংস্থা।” সুকান্ত মজুমদার অভিযোগের সুরে বলেন, “আমাদের বিরোধীদের কাজই হচ্ছে ভারতীয় সংস্থাগুলি যারা ভাল কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের বিশ্বাসকে টলিয়ে দেওয়া। অবিশ্বাসের বাতাবরণ বা পরিবেশ তৈরি করা। এটাই তাদের কাজ। কখনো তারা ইভিএম নিয়ে, কখনো তারা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বিচার ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতবর্ষের বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে চ্যালেঞ্জ করা যায় সেটাই বিরোধীদের অন্যতম লক্ষ্য।”
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালে সর্বভারতীয় মেডিকেল প্রবেশিকা বাতিলের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। মামলাকারীরা অভিযোগ করেন যে, নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিল। এছাড়াও অন্যান্য অনিয়ম হয়েছে। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানিতে শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কাউন্সিলিং বন্ধ করা হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীকে গ্রেস মার্ক দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করা হয়েছে। গ্রেস মার্কস পাওয়া ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীদের দুটি বিকল্প দেওয়া হবে। হয় তারা ফের পরীক্ষায় বসতে পারেন অথবা গ্রেস মার্কস ছাড়াই তাদের মার্কস গণনা হবে। পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হবে ২৩ জুন।