নাসদীয় সৃষ্টিতত্ব

ডা: রঘুপতি সারেঙ্গী

আমাদের ভারত, ২৫ জানুয়ারি: ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে সেই ১৫ বিলিয়ন বছর আগে ওঠা মামলার কথা ছেড়েই দিন। এই ৫০০ কোটি বছর আগে ওঠা মোকদ্দমা’রই সঠিক ফয়সালা এখনও সম্ভব হোল না!

কেউ স্মরণ করছেন সেই আদি বিষ্ফোরণ কে, যা থেকে জন্ম নিয়েছে আকাশ-গঙ্গা (Milky way) আর এখান থেকেই নাকি বেরিয়েছে অসংখ্য নেবুলা- গ্যালাক্সি। গ্রহ-নক্ষত্র ও সূর্যের জন্মদাতা এরাই। এদেরই অন্যতম জ্বলন্ত এই সূর্য বহু বছর মহাশূন্যে ভাসতে ভাসতে ঠান্ডা হয়ে সৃষ্টি করেছে পৃথিবী। প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্ট এবং বরাহমিহিরের নাম এ বিষয়ে আলোচ্য হওয়ার দাবি রাখে।

দুঃখের হোলেও সত্য এটাই, বিজ্ঞানকে ভুলে ধর্মকে প্রাধান্য দিতে বাধ্য হোলেন ব্রুনো, কোপারনিকাস এর মতো মহাবিজ্ঞানী। গ্যালিলিও’র পরিনতি অনেকের চোখে আজও উজ্জ্বল। মহাবিশ্বের জন্ম সম্পর্কে জর্জ লেমাট্রি জানালেন, হাইড্রোজেন-হিলিয়াম এবং লিথিয়াম জুড়ে পরমাণু অপেক্ষাও ক্ষুদ্রতর বস্তু তৈরি করে। তা থেকেই পরমাণু এবং পরিশেষে এক দৈত্যাকার মেঘের সৃষ্টি। সেই মেঘের অতি সূক্ষ্ম এক কনা চারিদিকেই সম্প্রসারিত হয়ে রচনা করেছে এই মহাবিশ্ব। বিজ্ঞানী হাবল এলেন মঞ্চে। “হাবল-লেমাট্রি সূত্র” প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন বিজ্ঞানীদের একটি মহল। ১৯২৭ সালে লেমাট্রি ভবিষ্যৎ বানী করলেন, “…..at times, the universe will turn into a single point… Primeval Atom”।

গালভরে “Big-bang” নামকরণ শোনা গিয়েছিল সেদিন BBC Radio broadcast এর মাধ্যমে, ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী Fred Hoylo’র গলাতে।
এই পর্যন্ত সব চলছিল মোটামুটি ঠিকঠাক। বিপদ বাধালেন লেমাট্রি
নিজেই। উনি ওনার তৈরি equation টি তৎকালীন পৃথিবী-
বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন’কে দেখালে তিনি জানান, “Your Math is correct but the Physics is abominable.”…. কারণ 10-²⁸ সেমি: ব্যাস-যুক্ত ক্ষুদ্রতম কনার ধারণাতে সমস্ত গানিতিক হিসাবই থেমে (Collapse) যায়। তা যাই হোক এসবই আসলে সৃষ্টি-পরবর্তী সৃষ্টির ব্যাখ্যা।
তাহলে তো Bible এর সেই ..”There should be light and everywhere was light” এই অবিসংবাদি যুক্তিকেই মেনে নিতে হয়!
মহাবিশ্বের উৎপত্তির বিষয়ে আমাদের ঋগ্বেদেও গভীর চিন্তা করার মতো যুক্তিগ্রাহ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রোথিত আছে। আসুন, দেখি কী পেয়েছেন এ বিষয়ে আমাদের মন্ত্রদ্রষ্টা প্রাচীন ঋষিরা।
ঋক্-বেদ এর ১০ম মন্ডলের ১২৯ নং সূক্তের (নাসদীয় সূক্ত) ১ম
মন্ত্রে বেদ এর ঋষি বলছেন:
“নাসদাসীন্নো সদাসীত্তাদানীং নাসীদ্রজো নো ব্যোমোপরো যৎ।
কীমাবরীবঃ কূহ কস্য শর্মন্নম্ভ কিমাসীদগহনং গভীরম্।।”

…… সৃষ্টির আদিতে ছিল না কোনো বস্তুর অস্তিত্ব, না ছিল কোনো অস্তিত্ব-হীনতা। কোনো ধুলি-কনা বা আকাশের অস্তিত্বও ছিল না। কেই বা তাকে আবৃত রেখেছিল? কোথায় ছিল? মহাজাগতিক কোনো তরল (Cosmic flow) কী রাখা ছিল সেই গহন-গডীরে?
ওই সূক্তেরই ২য় মন্ত্র:
“ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি ন রাত্যা অহ্ন আসীৎ প্রকেতঃ।
আনীতবাদং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধান্যন্ন পরঃ কিংচনাস।।”
……. সে সময় না ছিল কোনো মৃত্যু, না ছিল অমৃতত্ব, না ছিল দিন-রাত এর কোনো ভেদাভেদ। নিজের ক্ষমতাতেই নিজের অস্তিত্ব (স্বধয়া)কে নিশ্বাস-প্রশ্বাসহীন অদ্ভুত এক পরিস্থিতিতেও টিকিয়ে রেখেছিলেন বিশেষ এক অস্তিত্ব (হয়তো, আত্মাকেই বোঝাতে চেয়েছেন)…..আর কেউ ছিল না।

পরবর্তী মন্ত্রগুলি আরও মার্মিক, আরও যুক্তিযুক্ত এবং আরও কঠোর বৈজ্ঞানিক স্থিতিতে আধারিত, সন্দেহ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগে,ঐ সময়ে ধ্যানের গভীরে নিরীক্ষন করা ছাড়া আর কী বা ছিল এঁদের হাতে যা দিয়ে এমন অকাট্য সিদ্ধান্তে আসা যায় যা’র সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের এমন এক মেলবন্ধন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *