আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৫ অক্টোবর: “মনীশ শুক্লাকে খুন করিয়েছে পুলিশই। এই খুনের ঘটনায় পুলিশের অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে।” বিষ্ফোরক অভিযোগ করলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। সোমবার সকালে বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং টিটাগড়ে এসে বলেন “মণীশ শুক্লাকে পুলিশ পরিকল্পনা করে খুন করেছে। এই খুনে সামান্য কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। এই অস্ত্র ব্যারাকপুর লাটবাগানের পুলিশ ট্রেনিং কলেজ থেকে বেরিয়েছিল। যে বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে তা পুলিশের মাধ্যমেই এসেছে।”
রবিবার রাতে অর্জুন সিং ঘনিষ্ট বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে প্রকাশ্যে গুলি করে খুন করা হয়। এই খুনের ঘটনা নিয়েই বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন সাংসদ অর্জুন সিং। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “এটি একটি রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা। এই খুনের ঘটনাটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অঙ্গুলি হেলনে ব্যারাকপুর পুলিশ ঘটিয়েছে। আমরা এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করছি। সিবিআই তদন্ত ছাড়া এই খুনের আসল খুনিদের গ্রেফতার করা যাবে না।” তিনি এদিন বলেন, “মণীশ শুক্লা রবিবার আমার সাথেই ছিল, আমরা গতকাল একসাথে বাউড়িয়া গিয়েছিলাম। আমি কলকাতা চলে গেলাম আর মনীশ বাড়ি ফিরে গেল। ওর সাথে কোনও নিরাপত্তা রক্ষীও ছিল না। কাল আমরা একসাথে ফিরলে হয়তো আমরা দুজনে এক সাথে মারা যেতাম। তবে এই ব্যারাকপুরে তো রক্ষকই এখন ভক্ষক হয়ে গেছে। দিল্লি থেকে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা আসবেন এখানে। তারা ফিরে গিয়ে তাদের রিপোর্ট দেবেন।আমরা চাই পুলিশ এই কাজ করেছে তাই পুলিশ কোনও সঠিক তদন্ত করবে না। সিবিআই তদন্তের দাবি করছি আমরা। আর পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত বলেই থানার সামনে ঘটনা ঘটল আর থানার সিসি টিভি ক্যামেরাগুলো সব খারাপ হয়ে গেল? এটা মানা কি সম্ভব?”
সেইসঙ্গে অর্জুন সিং জানান, দল মণীশ শুক্লার পরিবারের পাশে আছে। রবিবারের এই খুনের ঘটনার পর সোমবার সকাল থেকে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার অবরোধ, ব্যারাকপুর বন্ধ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিজেপির ডাকা ব্যারাকপুর বনধ শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছে। দোকান পাঠ, বাজার সব বন্ধ রয়েছে। এলাকায় চলছে পুলিশি টহল। এই খুনের ঘটনার পর থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে গোটা ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল জুড়ে। বিজেপি সমর্থকরা ব্যারাকপুর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পথে দফায় দফায় অবরোধ করেছে সোমবার সকাল থেকেই। অবরোধ করা হয়েছে ব্যারাকপুর কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে, বিটি রোড, ঘোষপাড়া রোড, ব্যারাকপুর বারাসাত রোডে।
টিটাগড়ে এদিন ঘটনাস্থলে যান ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা। তিনি বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে। তদন্তের বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। আমরা তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখছি।”সোমবার দুপুরে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় দল পৌঁছলেন টিটাগরে খুন হওয়া বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার বাড়িতে। এদিন মৃত বিজেপি নেতার টিটাগরের বাড়িতে পৌঁছান বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়, কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, সাংসদ অর্জুন সিং, নোয়াপাড়ার বিজেপি বিধায়ক সুনীল সিং সহ অন্যান্য বিজেপি নেতারা।এদিন তারা মনীশ শুক্লার বাড়ি পৌঁছে মণীশ শুক্লার বাবা মার সাথে দেখা করেন।তাদের সহানুভূতির দেওয়ার পাশাপাশি এই খুনের উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাস দেন বিজেপি কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা।
এদিন মণীশ শুক্লার পরিবারের সাথে দেখা করে সাংবাদিকদের মুখমুখি হয়ে কৈলাশ বিজয়বর্গী অভিযোগ করেন, “ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারের দুই আধিকারিকের কার্যকলাপ ও আচরণ এই খুনের মামলায় যথেষ্ট সন্দেহ জনক। কারণ এই খুনের ঘটনা কোনও সামান্য ঘটনা নয়, এতে পুলিশের বরো ভূমিকা রয়েছে। কারণ মনীশ শুক্লাকে যে অস্ত্র দিয়ে মারা হয়েছে তা অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র, সেটা যেকোনও কারোর কাছে সহজে আসতে পারে না। তাই আমরা চাই এই খুনের ঘটনার তদন্ত রাজ্য পুলিশকে না দিয়ে সিবিআই এর তদন্ত করুক। আর এই ঘটনার উপযুক্ত জবাব সময় হলে সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিয়ে দেবে।”
কৈলাস বিজয়বর্গীর পুলিশের ওপর আনা এই অভিযোগের বিরোধিতা করে তৃণমূলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ বলেন, “মণীশ হত্যায় মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশের নাম জড়িয়ে বিজেপির মন্তব্য হাস্যকর। পুলিশকে বদনাম করছে বিজেপি। বিজেপির পুলিশের বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ সর্বৈব মিথ্যা। বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দলে খুন হয়েছে মণীশ, পুলিশ তদন্ত করে এই ঘটনায় দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করবে। তৃণমূল হিংসার রাজনীতি করে না। বিজেপির ঘোরতর ষড়যন্ত্রে এই ঘটনা ঘটেছে।” তবে টিটাগরের মণীশ শুক্লা হত্যা মামলায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে ব্যারাকপুর অঞ্চলে।