মা ক্যান্সার আক্রান্ত, দুই ছেলে হাঁটাচলা করতে পারে না, অভাবের সংসার ছেড়ে পালাল বাবা

স্নেহাশীষ মুখার্জি, আমাদের ভারত, নদিয়া, ৮ এপ্রিল: মা ক্যান্সার আক্রান্ত, দুই ছেলে হাঁটাচলা করতে পারে না। অভাব নিত্যসঙ্গী। এই অবস্থায় সংসার ছেড়ে পালালো বাবা। ঘটনাটি নদীয়ার বীরনগর পৌরসভা এর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পালিত পাড়া এলাকার।

দুই ছেলে দীপক সরকার (২২), পঙ্কজ সরকার (১৭)। দুজনের কেউই কথা বলতে পারে না, ঠিক মত চলাফেরা করতেও পারে না। বয়স যত বাড়ছে ততোই আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ওই দুই যুবক। মা ক্যান্সারের রোগী। কঠিন ব্যয়বহুল রোগে আক্রান্ত ওদের তিনজন। তিনজনের সংসারে তার বাবা কালু সরকার হকারি করে সংসার চালাতেন। মা, অর্চনা সরকার তিনি পরের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসারের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু দু’বছর আগে মা অর্চনা সরকারের ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ার পর রান্নার কাজটিও চলে যায়। এই ঘটনার পর সেই যে তার বাবা বাড়ি ছেড়েছেন আর বাড়ি আসেনি। কাজ চলে যাওয়ার পর আর সেভাবে কাজ জোটেনি এখন অভাব কে সঙ্গী করে চলতে হচ্ছে তাদের তিন জনের।

মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে সরকারের দেওয়া এক খানি ঘর এবং লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ৫০০ টাকা। একদিকে ক্যান্সারের চিকিৎসা অন্যদিকে দুই ছেলের সেবা করা, কঠিন সংগ্রামের মুখে দাঁড়িয়ে ওদের সকলে।

ছোটবেলায় বেশ চলাফেরা করত তারা। দুজনে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ অসাড় হয়ে যাচ্ছে তাদের শরীর। ব্যয়বহুল চিকিৎসা করা তাদের কাছে মোটেই সম্ভব হচ্ছে না। একদিকে খাওয়া অন্য দিকে চিকিৎসা কোনটাই ঠিকঠাক হচ্ছে না। সহায় সম্বল বলতে আর কিছুই নেই।

মা অর্চনা সরকার জানান, “প্রায় আট দশ বছর হয়ে গেছে আমার দুই ছেলে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। একসময় এরা সাইকেল চালাত, ব্যাডমিন্টন খেলত কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের শরীর বেঁকে যেতে শুরু করে। এরপর মাজা(কোমড়) পড়ে যায়, হাঁটাচলা করতে পারে না। এমন কি কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়েছে। আমি মা হয়ে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারলাম না। আগে রান্নার কাজ করতাম লোকের বাড়িতে। কিছু আয়-উপার্জন হত। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ল। স্বাভাবিকভাবেই যে কাজটা আমি করতাম সেটাও চলে গেল। আমাদের অবস্থা দেখে ওদের বাবাও আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য পরমুখাপেক্ষী হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তবে এখানকার কাউন্সিলর, আমার প্রতিবেশীরা আমাকে খুব সাহায্য করে। আমি এখন তাদের দয়াতেই বেঁচে আছি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমার আবেদন, সরকারিভাবে নিখরচায় আমাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং আমাকে কিছু আর্থিক অনুদান দেওয়া হোক যাতে আমরা আবার নতুন করে জীবন ফিরে পাই।” পাশাপাশি তাদের দাবি যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি তাদের সাহায্য করেন তাহলে বাকি কটা দিন একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *