আমাদের ভারত, শ্রীরূপা চক্রবর্তী: করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে রবিবার সকাল ৭ টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত “জনতা কারফিউ”র ডাক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওই দিন জনতার দ্বারা জনতার জন্য জনতা কারফিউ করে দেশবাসীকে প্রমাণ করতে হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভারতবাসী কতটা প্রস্তুত। তিনি বলেন, ঐ দিন ঐ নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নাগরিক যেনো ঘর থেকে না বের হন। যদি এই কারফিউ সফল হয় তাহলেই বোঝা যাবে দেশবাসী করোনার মোকাবিলায় সব রকমভাবে প্রস্তুত।
এদিন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা বিশ্ব মানব জাতির সংকটের সময়। প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও সম্ভবত এত প্রভাব পড়েনি যতটা প্রভাব পড়েছে করোনা সংক্রমণে।”
মোদী বলেন, ভারতের ১৩০ কোটি নাগরিক গত দুমাস ধরে করোনা সম্পর্কে শুনছে এবং এই মহামারী মোকাবিলা করে আসছে। প্রত্যেক নাগরিক যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেছে। তবু প্রতিটি ভারতবাসীকে আরো সজাগ ও সতর্ক থাকতে বললেন তিনি।
মোদী বলেন, “আমি যখনই দেশবাসীর কাছে কিছু চেয়েছি দেশবাসী আমাকে নিরাশ করেনি। আজও আমি ১৩০ কোটি দেশবাসীর কাছে কিছু চাইতে এসেছি।” তিনি বলেন, “আমি কয়েকটা সপ্তাহ আপনাদের কাছে চাইছি।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মত মহামারীর কোনও প্রতিষেধক কিংবা ভ্যাকসিন এখনো পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। যে দেশগুলিতে বিশেষভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রথম কয়েকদিনের সংক্রমণ ধীরে ধীরে হলেও পরবর্তী কিছু সময় খুব তাড়াতাড়ি এই রোগ মহামারীর আকার দিয়েছে।”
তিনি বলেন,ভারত সরকার এই মহামারীর দিকে প্রতিমুহূর্তে নজর রেখেছে। তবে ভারতের মত উন্নয়নশীল দেশ করোনা যে সংকটের নয় তা কখনই বলা যায় না। বিত্তশীল দেশে যেভাবে করোনার প্রভাব পড়েছে ভারত যে তার থেকে প্রভাব মুক্ত থাকবে তা জোরের সঙ্গে বলা যায় না।
প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলা করতে ভারতবাসীকে সংকল্প ও ধৈর্যের ব্রত পালনের কথা বলেন। তিনি বলেন, “নাগরিক কর্তব্য হিসেবে প্রত্যেক নাগরিককে মনে রাখতে হবে, নিজে সংক্রমিত হব না এবং বাকিদের বাঁচাবো। এখন সেই সময় এসেছে যখন একটি মন্ত্রই কাজ করবে, আমি সুস্থ তো জগৎ সুস্থ। যেহেতু করোনার কোনো প্রতিষেধক নেই, তাই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, সুস্থ থাকতে হবে। আর তার জন্য আমাদের প্রধান কর্তব্য ভিড়ে না যাওয়া। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে না বেরোনো। ঘরে বসে কাজ সারতে হবে। এক কথায় নিজেকে আইসোলেট করা।”
মোদী বারবার মনে করিয়ে দেন ৬৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বের প্রবীণরা যেন আগামী কয়েক সপ্তাহ ঘর থেকে না বেরোনো। তিনি বলেন, করোনার মত বড় যুদ্ধের মোকাবিলা করতে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আর সেই প্রস্তুতিপর্ব হচ্ছে জনতা কারফিউ। আগামী রবিবার অর্থাৎ ২২ মার্চ সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নাগরিকরা ঘর থেকে বেরোবেন না। এই আবেদনই আজ প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশ্যে করেন। তিনি বলেন, আর এই কারফিউ যদি সফল হয় তাহলে এটাই হবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুতির অন্যতম প্রতীক।
যারা আমাদের পরিষেবা দিচ্ছেন, ওই দিন বিকেল পাঁচটায় তাদের ধন্যবাদ জানাতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতেও বিভিন্ন মানুষ আমাদের পরিষেবা দিচ্ছেন। ওই দিন বিকেল পাঁচটা থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত দরজায়, ব্যালকনি, জানালার সামনে দাঁড়িয়ে তালি বাজিয়ে বা ঘন্টা বাজিয়ে তাদের ধন্যবাদ জানাতে হবে। রাজ্য সরকারের কাছে প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধ, তারা যেন সাইরেন বাজিয়ে মানুষকে তা মনে করিয়ে দেয়।
আজকের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে তিনি সামগ্রিকভাবে দেশবাসীকে করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে তৈরি হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। একইসঙ্গে তিনি হসপিটালের উপর থেকে অতিরিক্তচাপ কমানোর আবেদন করেন। প্রয়োজনের রুটিন চেক আপে না গিয়ে বাড়িতে বসে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কাজ সারার পরামর্শ দেন তিনি।