শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ১১ জানুয়ারি: রাজ্যের শাসকদলের কাছে বহুবার বিজেপি নেতাদের শুনতে হয়েছে তারা এরাজ্যে পরিযায়ী পাখি। তারা বাংলার সংস্কৃতি না বুঝে না জেনে বাংলা জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। মোদী দু’দিনের রাজ্য সফরে এসে আজ ওল্ড কারেন্সি বিল্ডিংয়ের এক অনুষ্ঠানে ঘুরপথে সেই কটাক্ষের জবাব দিলেন। মোদীর এদিনের বক্তব্যে কোথাও রাজনীতির লেশমাত্র ছিল না। ছিল শুধু বাংলার জয়গান। বাঙালির জয়জয়কার। মোদীর কথায় বাংলার একাধিক চাঁদ বা চন্দ্র ( সুভাষচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, বিপিন চন্দ্র…) ভারতের আকাশকে বারবার উজ্জ্বল করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের দ্বিশতবর্ষ উদযাপন হবে। কেন্দ্র সরকারের উদ্যোগে এক বছর ধরে রাজা রামমোহন রায়ের জন্মের ২৫০ বছর পালিত হবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে স্বাধীনতা সংগ্রামী বাঙলার বীর যোদ্ধাদের জন্য আলাদা একটি গ্যালারি তৈরি হবে।
আজ মোদীর বক্তব্যে রাজনীতির বিন্দুমাত্র কচকচানি ছিল না। বরং বক্তব্যের আদ্যপ্রান্ত তিনি প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন বাংলা এবং বাঙালিকে। শুরুতেই বলেছেন বাংলার মাটি পবিত্র ভূমি। বাংলার মাটি দেশকে পথ দেখিয়েছে। ভারতের সংস্কৃতির পীঠস্থান এই বাংলা। তার বক্তব্যে ঘুরেফিরে এসেছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রাজা রামমোহন রায় এবং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো নাম। একাধিকবার মনে করিয়েছেন দেশের ইতিহাসে বাংলার মহান ঐতিহ্যের কথা। ঘোষণা করেছেন শহরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে তৈরি হবে একটি গ্যালারি যার নাম হবে বিপ্লবী ভার। ঘোষণা করেছেন, ২০২২ সালে এক বছর ধরে রাজা রামমোহন রায়ের ২৫০ তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে। বলেছেন, কেন্দ্রের উদ্যোগে যথাযথ মর্যাদায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মের ২০০ বছর পূর্তি উৎসব পালিত হবে।
শহরে এসে নরেন্দ্র মোদীর ভাষণে ঘুরে ফিরে এসেছে শুধু বাংলা ও বাঙালির প্রশংসা। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এতে অন্য অংক দেখতে পেয়েছেন। তাদের মতে মোদী এদিন রাজ্যের শাসক দলের বহুদিনের কটাক্ষের জবাব দিয়েছেন। বাংলা ও বাঙালি বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়েছেন। তিনি বাংলাকে নিয়ে কেন্দ্রের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে। বারবার বাঙলার মনীষীদের কথা বলে বোঝাতে চেয়েছেন তাঁরা ভোটের সময়কার পরিযায়ী পাখি নন।
আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে বিজেপি। তাই বাংলা ও বাঙালির মন জয় করে ভোট বাক্সের অংকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন মোদী। বাঙালির মন জয় করতে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম জয়ন্তী পালনের কথা ঘোষণা করেছেন।
কয়েকদিন আগেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গিয়েছিল, অমিত শাহ বাড়িতে শিক্ষক রেখে বাঙলা শিখছেন। আর রাজ্য সফরে এসে মোদীর মুখে শোনা গেল বাংলার জয়গান। আর এই দুটি বিষয়কে একজায়গায় করে রাজনৈতিক মহল মনে করছে এটা মোদীর নেহাতই কোনো অরাজনৈতিক সফর নয়।