হিম্মতের সঙ্গে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাঁকুড়ায় কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করলেন মিঠুন

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৪ নভেম্বর: আপনারা সাহস রাখুন, হিম্মতের সঙ্গে থাকুন। ভালো দিন আসছে। আপনাদের সব কিছু ফিরিয়ে দেব বলে আশ্বাস দিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। আজ মেজিয়ায় এক কর্মী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে এমনভাবেই কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করলেন মিঠুন।

তিনি বলেন, এটা কোনো রাজনীতি করা কেউ বলছে না। এটা বলছে মিঠুন চক্রবর্তী। কারণ আমি যা বলি তা করে দেখাই। আমি রাজনীতির লোক নই, তাই আমি রাজনীতি করি না। আমি মানুষের নীতি করি।বিজেপির কোর কমিটির নেতা একদা সুপারষ্টার মিঠুন চক্রবর্তী আজ দুপুর ১২ টা নাগাদ শালতোড়া বিধানসভার গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের দুর্লভপুরের একটি বেসরকারি লজে আসেন। সেখানে জেলা কমিটি ও শালতোড়া বিধানসভার মন্ডল সভাপতিদের নিয়ে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই সহ বিজেপির একাধিক বিধায়করা। বেলা দেড়টা নাগাদ তাকে নিয়ে মন্ত্রী সুভাষ সরকার যখন লজ থেকে বের হন তখন এক অপ্রীতিকর ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় তাকে। ওই সময় এক বিজেপি কর্মী দলীয় পতাকা নিয়ে “সুভাষ সরকার গো ব্যাক ধ্বনি দিতে থাকেন। দলীয় কর্মীরা দীপক চক্রবর্তী নামের ওই বিক্ষুব্ধ কর্মীকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকলে মন্ত্রী সুভাষ সরকার তাকে মারের হাত থেকে রক্ষা করে এক পাশে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে জিঞ্জাসা করেন কে তাকে পাঠিয়েছে। ওই ব্যক্তি তখন বলেন, আমি মনে করতে পারছি না। সুভাষ সরকার এবিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, তৃণমূলের লোক ওকে মদ খাইয়ে পাঠিয়েছে। তৃণমূলের পতনের শুরু এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে।

এরপরই তারা মিঠুনকে নিয়ে চলে যান বিধায়ক চন্দনা বাউরির বাড়িতে। সেখানে মিঠুন মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে বিধায়কের ক্ষুদ্র বাড়িতেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেল সাড়ে ৪ টা নাগাদ মেজিয়া কলেজ সংলগ্ন মাঠে কর্মী সভায় হাজির হন। তিনি বলেন, আমি পঞ্চায়েতের প্রচারে নয় আমি এসেছি দুটি কারণে। এক বাঁকুড়ার সাংসদ ও বিধায়করা আমাকে আসতে বলেছিলেন আর দুই আপনাদের কথা শুনতে। আমার কাছে কি শুনতে চান বলতেই উপস্থিত লোকেরা তার কাছে তৃণমূলের বঞ্চনার কথা বলতে থাকেন। কারো অভিযোগ ঘর পাইনি, কারো অভিযোগ ঘর পেতে উপভোক্তাদের যে নূন্যতম টাকা জমা দিতে হয় তা তৃণমূল নেতা নিয়েছেন কিন্তু ব্যাঙ্কে জমা করেননি। কেউ বলেন, ১০০ দিনের কাজ বন্ধ কেন? জবাবে মিঠুন বলেন, বিজেপিকে ক্ষমতায় আনুন আপনার ঘর হবে। যারা টাকা নিয়ে এসব করেছেন তাদের বিচার হবে। তিনি বলেন, ১০০ দিনের কাজ বা টাকা বন্ধ করা হয়নি। স্থগিত রাখা হয়েছে। ওরা কেন্দ্রের টাকার হিসাব দেয়নি। তাই হিসাব চাওয়া হয়েছে। হিসাব দিলেই সব স্থগিত রাখা প্রকল্প চালু হয়ে যাবে।

বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিঠুন দলীয় পদাধিকারীদের কাছ থেকে নানা অভিযোগ শোনেন। দলীয় শৃঙ্খলা না মানায় দলের সংগঠন মুখ থুবড়ে পড়েছে। পুরানো কর্মীদের সম্মান না দেওয়াতেই বিধানসভায় ভালো ফল হয়নি। পুরানো কর্মীরা অভিমানে বসে পড়েছেন। দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অনেকেই ক্ষোভ উগরে দেন। এরপরই মিঠুন বলেন, আমরা বিধানসভায় হারিনি। ৩ থেকে ৭৭ হয়েছি। তবে আশানূরূপ ফল হয়নি। কিছু সাংগঠনিক ত্রুটি থাকার রয়েছে। তিনি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলেন, পুরানো কর্মীদের সঙ্গে নবীনদের সমন্বয় রেখে সংগঠন গড়তে হবে। আমি সব দিল্লির নেতাদের রিপোর্ট দেব। তিনি উপস্হিত কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কোনো নেতা তৈরি করিনা। আপনাদের পদ দেওয়া হয়েছে মানেই আপনি নেতা নন। সংগঠন করে আপনাকে নেতা হতে হবে। সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে সুকান্ত মজুমদার বলেন, পঞ্চায়েতে মূল ইস্যু দুর্নীতি। তা সকলের কাছে তুলে ধরতে কর্মীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বরে কি ঘটবে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঠান্ডা পড়বে, সরকার কাঁপবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *