পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের স্মৃতি (৩৯) রায়পাড়া জমিদার বাড়ি, ভাঙ্গা ফরিদপুর

আমাদের ভারত, ১ ডিসেম্বর: রায়পাড়া জমিদার বাড়ির মূল আকষর্ণ হচ্ছে এ বাড়ির চারপাশে চারটি ডুপ্লেক্স। মাঝখানে কেন্দ্রীয় কোর্ট ইয়ার্ড। বাড়ির পাশেই মন্দির, তার পাশেই নদী, নদীতে জমিদার আমলের বাঁধানো ঘাট।

উপজেলার রায়পুর জমিদারবাড়ি এখন নিষ্প্রাণ বিরানভূমি। এককালে এ বাড়িতে বিচারের জন্য জাঁকজমকপূর্ণ এজলাস ছিল। সকাল-সন্ধ্যা বাজত শঙ্খ। জমিদারবাড়ির নারীরা দল বেঁধে পূজায় বসতেন। আজ সেই মন্দির নিস্প্রাণ। অযত্ন-অবহেলায় গাছগাছালিতে আচ্ছন্ন। বাড়িটিতে বাসা বেঁধেছে সাপ আর পোকামাকড়। সাপের ভয়েই কেউ মন্দিরে যান না।

উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে আখিরা নদীর ধারঘেঁষে রায়পুরের জমিদার লাসমন সিংয়ের বাড়ি। তার মৃত্যুর পর দেশবিভাগের আগে ছেলে মুরালি সিং ও বদি সিং ভারতে চলে যান। কনিষ্ঠ ছেলে বীরেন সিং জমিদারবাড়িতে থেকে যান। পরে তিনিও চলে যান ভারতে। লাসমন সিংয়ের ১৯শ’ বিঘা জমি পড়ে থাকে পীরগঞ্জসহ উত্তরের জনপদে। এরপর জমিদারবাড়ি দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা এই বিশাল সম্পত্তির মালিক বনে যান।

দেশ স্বাধীনের পর এই জমিদারবাড়ির ভিটাটুকুও দখল করে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। জমিদার বীরেন ভারতে যাওয়ার আগে আখিরা নদীর তীরবতী জমিদারবাড়ি ও বেশকিছু সম্পত্তি দান করে যান রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়কে। ছোট আখিরা নদীর তীরবর্তী উঁচু ভিটার ওপর প্রায় ৬ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছিল জমিদার বীরেনের প্রাসাদ। প্রাসাদের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লম্বা নারিকেল গাছ ও ইট-সুরকি দিয়ে নির্মিত আধাপাাকা বিশাল প্রাচীর।

প্রাচীর সংলগ্ন উল্টোদিকে দুটি বড় পুকুর, দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ছিল জমিদার বীরেনের বিচারালয়। পশ্চিম পাশে রয়েছে অতিথিশালা, যা কিছুদিন আগেও রায়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন ধসে পড়ার আশঙ্কায় ছাত্ররা এখানে থাকে না। উত্তর কোণে জমিদারের বসার ঘর ও শোবার ঘর ছিল, সেটি ভেঙ্গে ইট-সুরকির স্তূপে পরিণত হয়েছে। এখন ছুচো-চামচিকা আর ইঁদুরের আস্তানায় পরিণত হয়েছে সেটি। অথচ একসময় এসব ভবনের নির্মাণশৈলী ছিল অত্যন্ত শিল্পকার্য খচিত ও মনোরম।

সূত্র— সমকাল। ১৫ নভেম্বর, ২০১৬।
ছবি— ‘আজকের পত্রিকা’।
সঙ্কলন— অশোক সেনগুপ্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *