অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২৩ অক্টোবর: কত কোটি হিন্দু সাবেক পূর্ববঙ্গ থেকে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, তার প্রামান্য হিসেব কোথাও নেই। এ পারে আসার পথে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। এই ধারাবাহিকে পর্যায়ক্রমে থাকছে ওপার বাংলা থেকে চলে আসা অনেকের স্মৃতিচারণ বা হিন্দুদের ফেলে আসা ভূসম্পত্তির কথা। এরকম অসংখ্য সম্পত্তির কিছু গিয়েছে সরকারি মালিকানায়। অধিকাংশই দখল হয়ে আছে। মালিকের খোঁজ নেই। হাতবদলও হচ্ছে।
Save the heritages of Bangladesh FB group-এ মহম্মদ কাইজার হোসেন ‘কেনা-কাটা মানিকগঞ্জ’ গ্রুপে দেওয়া এই বাড়ির তিন দৃষ্টিকোণের ছবি পেশ করে প্রশ্ন করেছেন, “এই জমিদার বাড়িটি কিভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন হল! প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এর কেউ বলবেন কি!! শত বছরের কোনও স্থাপনা হলে কি প্রত্নতত্ত্ব স্থাপনা বলা যায় না!“
‘কেনা-কাটা মানিকগঞ্জ’ গ্রুপে এই ছবি-সহ ঘোষণা করা হয়েছে, “জমিদার বাড়ি বিক্রয় জমিসহ
জমির পরিমাপ : ৬০ শতাংশ
মূল্য : ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা মাত্র।
Call : 01618504747
বিস্তারিত :প্রাচীন কারুকার্যে মোড়ানো দ্বিতল জমিদার বাড়ি বিক্রয়, দৃষ্টি নন্দন উঠান, কাঠ বাগান, পুকুর ও ছোট ছোট কুটির। রানিং বাড়ি মানুষ বসবাস করে, নিয়মিত নাটক – সিনেমার স্যুটিং হয়।
লোকেশন : বেতিলা জমিদার বাড়ি, মানিকগঞ্জ সদর।”
প্রতিক্রিয়ায় শরমিন অঞ্জুম লিখেছেন, “হতে পারে দেশ বিভাগের সময় এমন বাড়ি অদলবদল প্রথায় প্রচুর জমিদার বাড়ি হস্তান্তর হয়েছে। এখনো অনেক জমিদার বাড়ি আছে যা ব্যক্তি মালিকানাধীন। পাকিস্তান আমলে আমার দাদু এমন বাড়ি কিনেছিলেন এখন প্রায় দেড়শো বছর পুরনো। তবে এতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কিছু আইনকানুন থাকে সাধারণত। বাড়ি ভাঙ্গা যাবে না বা ডিজাইন পরিবর্তন করা যাবে না এমন আরকি।”
শাকিল চিত্রকর লিখেছেন, “… এই বাড়ির মালিক সেই সময়ের একজন ধনী ব্যবসায়ি ছিলেন, তাই সখ করে এমন জাঁকজমকপূর্ণ করেই বাড়ি তৈরি করেছিল, তার বংশের উত্তরসুরী এখনো থাকতে পারে, সঠিক বলতে পারি না, তবে যুদ্ধের সময় বা তার আগেই বাড়ি ছেড়ে মালিক চলে যায় ইন্ডিয়া।“
পূর্ববঙ্গে ফেলে আসা হিন্দুদের অসংখ্য বাড়ির বাসিন্দারা অধিকাংশই চলে গিয়েছেন আজ অন্য লোকে। যাঁরা এখনও আছেন জীবনের উপান্তে। তাঁদের অনেকে সে কথা ভেবে নীরবে, নিভৃতে কাঁদেন। অনেকে ভুলে যেতে চান, মনে রাখতে চাননা শৈশবের খেলার অঙ্গন। আজও বাড়িগুলো যেন বহন করে চলেছে সাবেক বাসিন্দাদের দীর্ঘশ্বাস।
‘কেনা-কাটা মানিকগঞ্জ’ গ্রুপে এ রকম আরও ঘোষণা আছে। আছে প্রতিক্রিয়াও। কিন্তু কেউ প্রশ্ন করেন না, কোন পরিস্থিতিতে, কাদের জন্য সম্পন্ন, উচ্চশিক্ষিত অসংখ্য হিন্দু সাত পুরুষের ভিটে ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হলেন অচেনা ভুঁইয়ে। প্রশ্ন করেন না, চুপচাপ কেন বিস্মৃতির গর্ভে ডুবে যাবে সেই দীর্ঘ অধ্যায়। কেউ প্রশ্ন তুললেই আমরাই তাঁকে দাগিয়ে দিই ‘সাম্প্রদায়িক’ অভিধায়।
*****