করোনা সংক্রমণ থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে মন দিয়ে ডাক্তারি পড়া শুরু করল তরুণী

আমাদের ভারত,১১ মার্চ:”আমি যতদিন হাসপাতালে ছিলাম ততদিন নিজের জন্য চিন্তা করিনি, ভগবানের কাছে শুধু প্রার্থনা করে গেছি সংক্রমণটা যেন আমার শরীর থেকে আর অন্য কারো শরীরে না ছড়িয়ে পড়ে। প্রার্থনা করেছি পরিবারের জন্য। সময় কাটাতে ডাক্তারির পাঠ্য বই পড়ে গেছি একনাগাড়ে। “কেরালার ত্রিশূরের এই তরুণীই দেশের প্রথম নোবেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শিকার। কিন্তু চিকিৎসার পর আজ সে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে।

বছর ২০-র এই তরুণী চীনের উহানে ডাক্তারি পড়ে। চোখের সামনে দেখেছে কাতারে কাতারে মানুষ করোনা কাহিল হয়ে পড়েছে। দেখেছে মৃত্যু-মিছিল। সেই পরিস্থিতি থেকে দেশে ফিরতে পেরে সে মুক্তির স্বাদ পেয়েছি। কিন্তু দেশে ফেরার দিন ছয়ের মাথায় কভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায় তার শরীরে। সেই সময় শারীরিক কষ্টকে ছাপিয়ে গিয়েছিল মানসিক কষ্ট।

২৩ জানুয়ারি দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে দেশে ফেরার উড়ান ধরেছিল। কিন্তু বাঁচতে পারেনি করোনার থাবা থেকে। তবে আজ সে সুস্থ। তাই তার কাহিনী শুধু সুস্থ হওয়ার কাহিনীই নয় মানসিক লড়াইয়ে জয়ের কাহিনীও বটে।

করোনা থেকে সেরে উঠে এখন অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছে ওই ডাক্তারি পড়ুয়া তরুণী। তার কলেজের ছাত্রছাত্রীরা এখন নিজের নিজের দেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে থিওরি ক্লাস গুলো চলছে অনলাইনে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ওখানে ফিরে যাবে সকলে। তখনই হবে প্রাকটিক্যাল ক্লাস।

ডাক্তারি পড়ুয়া তরুণীর কথায়, ” চিনে পনেরশো কিলোমিটার ট্রেন সফরের পর কলকাতা হয়ে যখন কোচিতে নামলাম, তখন মুক্তির আনন্দে দিশেহারা হয়েছিলাম। কিন্তু ৫দিন পরেই শুরু হল গলা খুসখুস। তারপর সর্দি কাশি গলাব্যথা। আতঙ্ক দানা বাঁধলো বুকের কোনায়। সময় নষ্ট না করে ছুটে গিয়েছিলাম ত্রিশূরের সরকারি আধিকারিকদের কাছে। সবটাই জানিয়েছিলাম তাদের। রিপোর্ট পজিটিভ এলো, ভেঙে পড়েছিলাম। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন সংক্রমণ খুব বাড়াবাড়ি জায়গায় যাইনি। তাই মানসিকভাবে চাঙ্গা হলে সমস্যা বাড়বে না। মনকে শক্ত করলাম। আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হলাম। প্রতিদিন পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলতাম মোবাইলে। বাকি সময়টা কাটতো পাঠ্য বই পড়ে। ১৯ ফেব্রুয়ারি করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট আসার পর ছুটি পাই হাসপাতাল থেকে।”

এখন সে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু তাও বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না তরুণী। এইকদিনের যে পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে বাড়িতেই বই মুখে গুঁজে করে কাটাচ্ছে সে। আর অপেক্ষায় রয়েছেন কবে স্বাভাবিক হবে চিন। কবে সে ফেরত যেতে পারবে তার সহপাঠীদের সঙ্গে ক্লাসরুমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *