সিএমআরআই হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা, আত্মীয়দের হাতে সপাটে চড় খেলেন চিকিৎসক

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২০ ফেব্রুয়ারি: রাত পর্যন্ত প্রসূতি ও সদ্যোজাত শিশুকে সুস্থ দেখে গিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। মনে আনন্দ ছিল, আর দু’একদিনের মধ্যেই মা সহ নতুন সদস্যকে বাড়ি নিয়ে আসতে পারবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে সমস্ত আনন্দ বদলে গেল বিষাদে। রাগের চোটে ফের চিকিৎসককে হেনস্থায় জড়িয়ে পড়লেন রোগীর আত্মীয় স্বজন।

রাত ৩টের সময় হাসপাতাল থেকেই ফোন যায় প্রসূতির পরিবারের কাছে। জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের আসতে হবে হাসপাতালে। সেই ফোন পেয়ে ভোর ৪টের মধ্যেই হাসপাতালে চলে আসেন প্রসূতির স্বামী সহ পরিবারের অনান্য সদস্যরা। এসে জানতে পারেন, আচমকাই মারা গিয়েছেন প্রসূতি পিঙ্কি ভট্টাচার্য।

মৃত্যুর সঠিক কারণ জানাতে না পারায় হাসপাতালেই বিক্ষোভ শুরু করেন প্রসূতির পরিজনেরা। এর মধ্যেই উত্তেজনাবশে রোগীর আত্মীয়দের একজন ডাক্তারবাবুকে সপাটে চড় কষিয়ে দেন, সিসিটিভিতেও উঠে আসে এমনই ফুটেজ। একবালপুর থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ হাওড়ার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা পিঙ্কি ভট্টাচার্য কলকাতার একবালপুর এলাকার সিএমআরআই হাসপাতালে প্রখ্যাত চিকিৎসক বাসব মুখার্জির অধীনে ভর্তি হন। বুধবারই একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন তিনি। বিকেল পর্যন্ত মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ ছিল। রাত ৯টার সময়েও চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মা ও শিশু দুইজনই সুস্থ আছে।কিন্তু রাত ৩টের সময় টেয় হাসপাতাল থেকে পিঙ্কির বাড়িতে বাড়িতে ফোন যায়, যে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। বাড়ির লোক তড়িঘড়ি হাসপাতালে পৌঁছে জানতা পারে মারা গিয়েছে পিঙ্কি। প্রথমে তাঁদের জানানো হয়েছিল, পিঙ্কির শরীরে রক্ত কমে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল চত্বর। বাড়ির লোকের অভিযোগ, পিঙ্কি এমনিতেই সবল, সুস্থ। প্রসবের পরেও সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। বুধবার সকালে প্রসবের পর বিকেলে ভিজিটিং আওয়ারে বাড়ির লোকের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলেছিল। তারপর হঠাৎ কি হল, তা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু বলতে চাইছেন না।

পিঙ্কির বাড়ির লোকদের অভিযোগ, এদিন ভোর রাতে তাঁরা ছুটে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাঁদের হাসপাতালের বিল মিটিয়ে দিতে বলেন। নার্স, আয়া সবাই আগেভাগে নিজেদের টাকা চেয়ে নেন। তখনও তাদের জানানো হয়নি যে পিঙ্কি মারা গিয়েছে। টাকা মেটাতেই জানিয়ে দেওয়া হয় পিঙ্কি মারা গিয়েছে। একটা হাসপাতাল ব্যবসার কারণে যে কতটা অমানবিক হতে পারে, এই ঘটনা যেন তার প্রমাণ বলে অভিযোগ পিঙ্কির বাড়ির লোকজনের।

এরপরেই আত্মীয় স্বজনকে ফোন করে পিঙ্কির বাড়ির লোকেরা হাসপাতালে ডেকে আনেন। পরিবারের অভিযোগ, ঘুমের ওষুধের ওভার ডোজেই পিঙ্কির মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে কোনও মন্তব্য করতে রাজি না হলেও পরে তাঁরা আলাদা ভাবে পিঙ্কির বাড়ির লোকেদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চায়। তখনই এক চিকিৎসককে সপাটে চড় মারেন পিঙ্কির স্বামী। সেই দৃশ্যই ধরা পড়েছে হাসপাতালের নিজস্ব সিসিটিভিতে। এরপরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। সামাল দিতে হয় একবালপুর থানার পুলিশকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *