আমাদের ভারত, ২২ এপ্রিল: “বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” দলের সুপ্রিমোকে স্বাগত জানাতে এমনটাই ব্যানারে ও ফেস্টুনে লিখেছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল কর্মীরা। আর তৃণমূলের টাঙানো এই ফেস্টুন ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কেবল বিরোধীরাই মুখ্যমন্ত্রীকে বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরি দাবি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্যরাও।
সোমবার দু’দিনের সফরে মেদনীপুরে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শাসক দলের সর্বময় নেত্রীকে বিদ্যাসাগরের মাটিতে স্বাগত জানাতে বিশেষ ব্যানার, ফেস্টুন লাগান দলের কর্মীরা। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে টাঙ্গানো সেই ব্যানারেই লেখা ছিল “বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী নারী শিক্ষার অগ্রদূত স্বাগতম।” বিষয়টি নজরে আসতেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশ। এমনকি বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্যরাও। তার মধ্যে আবার উত্তরসূরি বানানটিও ভুল বলে দাবি করা হয়েছে।
পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাদের পূর্বপুরুষ তথা বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধার এই তুলনা তারা মোটেও ভালো ভাবে নেননি। তারা প্রশ্ন করেছেন, উত্তরসূরী বলতে তো সাধারণত রক্তের সম্পর্কে পরবর্তী প্রজন্ম বা সেই ব্যক্তির ভাবাদর্শে অনুসারী ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বিদ্যাসাগরের তেমন কেউ নন।
বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি সমাজকে সচেতন করার কাজ করেছিলেন। কিন্তু সেই নবজাগরণের এত বছর পরেও বাংলায় এখনো নাবালিকাদের বিয়ে হয়। মেয়েদের একটা বড় অংশ শিক্ষার আলোটুকু পায় না। কিশোরী বয়সেই অনেক মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়। বিদ্যাসাগর তো এমন সমাজ চাননি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রীকে বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী বলা হয়েছে? সেই প্রশ্ন তুলেছেন বিদ্যাসাগরের পরিবারের সদস্যরা।
অবিভক্ত মেদিনীপুরে বীরসিংহ গ্রামের সন্তান ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সেই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে অনেকেই বলেছেন, কন্যাশ্রীর মত প্রকল্প তৈরি করে গরিব মেয়েদের স্কুলমুখী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এতকিছুর পরেও নাবালিকাদের বিয়ে আটকানো যাচ্ছে না। নারী নিরাপত্তাও রাজ্যে প্রশ্নের মুখে। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীকে বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী বলা যায়?
তবে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা এতে কোনো দোষ দেখছেন না। তাদের দাবি, তৃণমূলের আমলে উন্নতি হয়েছে অনেক। কেবলমাত্র মেয়েদের জন্য অনেক সরকারি প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে “বিদ্যাসাগরের উত্তরসূরী” বললে ক্ষতি নেই।
তবে বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের যুক্তি বিদ্যাসাগর একা লড়াই করে নারীদের সমাজে এগিয়ে আনার কাজ করেছিলেন। ব্রিটিশ ভারতে পিছিয়ে পড়া সমাজে নারী শিক্ষা থেকে শুরু করে বিধবা বিবাহ শুরু করা সব কিছুর জন্য তাকে কম কষ্ট ভোগ করতে হয়নি। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে বর্তমানে বাংলা তথা ভারতের অর্থসামাজিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজকের সময়ে যে কোনো নির্বাচিত সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে নারীর ক্ষমতায়নের কাজ করা। এটা একটা স্বাভাবিক কাজ। এর সঙ্গে বিদ্যাসাগরের সংগ্রামে বিরাট ফারাক রয়েছে।