Mahakumbho, । । ৯। । মাসকিউলার বাবা, নাগা বাবা, আইআইটি বাবা

*মহাকুম্ভ ২৫*

অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৩০ জানুয়ারি:
কুম্ভমেলায় উপচে পড়া ভিড় পুণ্যার্থীদের। পুণ্যলাভের আশায় হাজার হাজার মাইল ছুটে এসেছে ভক্তকূল। ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসী। দেশি-বিদেশি অতিথি। সব মিলে মিশে একাকার। প্রয়াগরাজে সাধু-সন্তদের আখড়ার নানা রঙের ছবি ধরা পড়েছে। কেউ হিমশীতল প্রয়াগে বসে রয়েছে ভষ্ম মেখে, কেউ আবার অক্সিজেন সিলিন্ডারকে সঙ্গী করেই পৌঁছে গিয়েছেন আখড়ায়।

দেশ-বিদেশ থেকে পুণ্যার্থীরা সেখানেই ভিড় করছেন বাবার আশীর্বাদ নিতে। গত কিস্তিতে বিশদে জেনেছি বাবা মোক্ষপুরীর নানা কথা। এবার প্রকাশ্যে এলেন আরও এক নতুন বাবা। প্রয়াগে সুদূর রাশিয়া থেকে হাজির মাসকিউলার বাবা। যদিও তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তিনি এসেছেন কোথা থেকে। পরনে গেরুয়া বসন, কপালে লাল সিঁদুর, পেশিবহুল চেহারায় রুদ্রাক্ষের মালা। যার উচ্চতা ৭ ফুট! 


ছবিঃ বাবা আত্মাপ্রেম গিরি

প্রয়াগরাজে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করছিল ১০ এর ঘরে। আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণ বলছিল, আরও নামতে পারে প্রয়াগরাজের পারদ। আর উত্তরপ্রদেশের ওই হাড়কাঁপানো শুকনো ঠান্ডাতেও, গায়ে শুধুমাত্র ভষ্ম মেখে বসে রয়েছেন নাগা বাবা। গায়ে নেই কোনও বস্ত্র। নভেম্বর মাস থেকে প্রয়াগরাজের আখাড়ায় এসে বসেছিলেন নাগা বাবা। সামনেই জ্বলছিল আগুন। পুড়ছিল কাঠের পর কাঠ। আর সেই আগুনের উত্তাপই নাগা বাবার জন্য যথেষ্ট। সেই কাঠের ছাই-ই গোটা গায়ে মেখেছিলেন তিনি।

এক নাগা বাবা বলেছিলেন, ‘আমি এখানে নভেম্বরেই চলে এসেছিলাম। এক মাস আখাড়ার মধ্যেই ছিলাম। ধুনো জ্বালিয়ে বসে আছি। তিন গাড়ি কাঠ জ্বালানো হয়েছে এখনও পর্যন্ত। এখনও আপনার সামনে রাখা আছে। এটাও জ্বালানো হবে। পরে আরও আসতে পারে। ঠান্ডাতেও এখান থেকে কোথাও যাইনি’, সংযোজন নাগা বাবার।

দূর দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে ভিড় করছিলেন নাগা বাবার আখড়াতে। এমনকী, দুবাই থেকেও এসেছিলেন পূণ্যার্থীরা।


ছবি: দাড়ি গোঁফ কামিয়ে অন্য চেহারায় আইআইটি বাবা

মহাকুম্ভের প্রথম পর্বেই এক আইআইটির প্রাক্তন সন্ন্যাসীর ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়। এই ভিডিওতে এই বাবা নিজেই বলেছেন যে তিনি একসময় আইআইটি বোম্বেতে পড়াশোনা করেছেন। এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র ছিলেন, পরে তিনি শান্তির সন্ধানে সব কিছু ছেড়ে দিয়েছেন।

বাবার সাক্ষাৎকার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তার সম্পর্কে অনেক তথ্য সামনে আসে, জানা যায় যে তাঁর পড়াশোনা কোথা থেকে হয়েছে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় কত র‍্যাঙ্ক পেয়েছিলেন। হরিয়ানায় হয়েছিল প্রাথমিক পড়াশোনা।

আইআইটি বাবার পুরো নাম অভয় সিং। হরিয়ানার ঝাঝরের বাসিন্দা। জয়েন্টে ২০০৮ সালে সারা দেশে তাঁর র‍্যাঙ্কিং হয়েছিল ৭৩১। বি. টেক পড়তে ভর্তি হন আইআইটি বোম্বেতে, বিষয় ছিল এয়ারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং। এরপর তিনি ডিজাইনে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। কিছু সময়ের জন্য একজন ফটোগ্রাফার হিসেবেও তিনি কাজ করেছিলেন। পড়াশোনার পর তিন বছর কানাডায় ছিলেন। সেখানে চাকরি করেছিলেন। একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সেখানে তাঁর বার্ষিক প্যাকেজ ছিল ৩৬ লাখ টাকা।

হঠাৎ বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে। বড়বড় চুল, মুখভর্তি দাড়ি- এই রূপেই সকলে চিনেছিল অভয় সিংকে। এর পর ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাঁর একেবারে অন্য রূপ। দেখে সহজে চেনাই যাচ্ছিল না তাঁকে। বড়বড় চুল কেটে ফেলেছেন, দাড়ি-গোঁফ কেটে ফেলেছেন। একেবারে ‘আধুনিক সন্ন্যাসী’র বেশে তাঁকে দেখতেই আরও একবার নজর ঘোরে নেটনাগরিকদের। তাঁর পোশাকও বদলে গিয়েছিল।

তাঁকে ওই রূপ বদলের কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি স্পষ্টই বলেন, এমন কোনো ব্যাপার নেই যে তপস্যা করছেন বলে বড় বড় দাড়ি তাঁকে রাখতেই হবে। প্রত্যেক ২-৩ মাস অন্তর তাঁর যদি মনে হয়, তিনি চুল-দাড়ি কেটে ফেলেন। এতে অস্বাভাবিক কিছুই নেই। তাঁর ‘লুক’ যেমন বদলায়, তেমনি সঙ্গে মানানসই পোশাকও পরেন। একটি শার্ট, গায়ে ভাল সোয়েটার আর একটা নতুন শাল গায়ে জড়িয়ে তাঁকে একেবারে আধুনিক সন্ন্যাসী বলেই মনে হচ্ছিল। তাঁকে যে সাধারণ মানের একটি ধুতি পরেই দেখা গিয়েছিল কুম্ভমেলায়, সেই ধুতিটিও বাদ দিয়েছিলেন। নয়া শালের নাম জানতে চাইলে আইআইটি বাবা বলেন, এর নাম ‘লাজবন্তী’।

অভয় সিং জানান, ‘একদিনে আমি সমস্ত জ্ঞান অর্জন করিনি। একজন সত্যিকারের তপস্বী হতে আমার কয়েক বছর সময় লেগেছে। কিন্তু আমি যে জ্ঞান অর্জন করেছি তা বিতরণের জন্য আমার কাছে উপযুক্ত মাধ্যম বা চ্যানেল ছিল না। হঠাৎ করেই আমি তা খুঁজে পেয়েছি।’

এর আগেই এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি নেত্রী নুপূর শর্মার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। আইআইটি বাবা জানান যে, আগামী দিনে নুপূর শর্মাই হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী তিনি যে ধর্মের পাশে আছেন, সত্যের পথে আছেন, একথা বলতেও ভোলেননি আইআইটি বাবা। মাথার বড় জটা, ছেঁড়া মলিন পোশাকে তাঁকে দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন প্রথমে। টেলিভিশনে তাঁকে দেখতে পেয়ে তার বাবাও ফিরে আসার কাতর অনুরোধ জানান সংবাদমাধ্যমে। কিন্তু তিনি যে আর ফিরতে চাইছেন না, সে কথা স্পষ্ট জানান অভয় সিং।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *