আমাদের ভারত, ২৭ সেপ্টেম্বর: খিদিরপুর অঞ্চলে একটি বাজারের নামফলকে বাংলা ব্রাত্য। বদলে মাত্রা পেয়েছে উর্দু, ইংরেজি। ফলকের লেখায় বাংলাকে যথোচিত মর্যাদা দিয়ে বাংলা হরফকে সবার উপরে স্থান দিতে মহানাগরিককে চিঠি দিলো ‘পশ্চিমবাংলার সমগ্র বিপ্লবী পরিবার’। সংগঠনের তরফে কৌশিক দত্ত গুপ্ত শুক্রবার জানিয়েছেন, যতদিন না পর্যন্ত বাংলা হরফে নাম লেখা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত যেন ফলকটি নামানো অবস্থায় রাখার দাবিও করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, আমরা অর্থাৎ পশ্চিমবাংলার সমগ্র বিপ্লবী পরিবার একটি গভীর দাবি নিয়ে এই পত্রটি লিখতে বাধ্য হচ্ছি। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে কলকাতা কর্পোরেশনের ১৩৫ নং ওয়ার্ডের একটি বাজারের মূল ফলকের ছবি প্রচারিত হচ্ছে যেখানে বাজারটির নাম ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় লেখা আছে। তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে, সেখানে বাংলা ভাষায় নামের কোনও উল্লেখ নেই।
কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী এবং এখানকার আঞ্চলিক ভাষা বাংলা। বহু ভাষার সমন্বয়ে গঠিত একটি দেশ, আমাদের এই ‘ভারতবর্ষ’। আমরা বাংলার বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে যখন যাই, দেখতে পাই সেখানে নিজেদের মাতৃভাষাকে তারা অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে গুরুত্ব দেন। কিন্তু আমাদের এই বাংলায় আমাদের মাতৃভাষা ক্রমশ বিলুপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে।
বাংলা ভাষা আমাদের বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব। কিন্তু বাংলা ভাষার এই অবক্ষয় মূলত সামাজিক অবক্ষয়েরই আরেকটি রূপ। বাংলা ভাষার সর্বোত্তম স্থান হিসাবে আমরা কলকাতাকেই গণ্য করতাম। বাংলা সাহিত্যের সব শাখা-প্রশাখার ব্যাপ্তি এবং উৎকর্ষে সর্বাধিক অবদান রেখেছেন কলকাতার সাহিত্যিকরা। দীর্ঘ বছর ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমাদের বিপ্লবীদের ইংরেজি ভাষাটা রপ্ত করতে হয়েছিলো। কিন্তু নিজেদের রাজ্যে পরস্পরের সাথে কথা বলতেন অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে মাতৃভাষা বাংলাতেই। শত অত্যাচারের পরেও তাদের কন্ঠ থেকে উচ্চারিত হতো ‘বন্দেমাতরম’ শব্দটা।
পৃথিবীতে বাংলা ভাষার স্থান সপ্তম এবং মাতৃভাষা হিসাবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থান অধিকার করলেও নিজের ভাষার প্রতি অশ্রদ্ধা এবং বিমাতৃসুলভ আচরণ আত্মমর্যাদা রক্ষার পথে অন্তরায়। এমতাবস্থায় কলকাতা পুরসভার একটি ওয়ার্ডের বাজারের সামনের সরকারি ফলকে বাংলা হরফের স্থান না পাওয়া আমাদের, তথা সমগ্র বাঙালি সমাজের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করেছে।
এই ঘটনায় আমরা যারপরনাই হতাশ, ব্যথিত তদুপরি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাই আপনার কাছে আমরা বিনীতভাবে এই দাবি জানাচ্ছি যে, যত শীঘ্র সম্ভব ফলকটিতে বাংলা হরফকে সবার উপরে স্থান দিতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত বাংলা হরফে নাম লেখা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত যেন ফলকটি নামানো অবস্থায় থাকে।”