চিন্ময় ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ১৬ ফেব্রুয়ারি: আর ঠিক দু’দিন বাদে, বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন। ১৯ ফেব্রুয়ারির এই ভোটে এবার ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এবিভিপি। তাতে শঙ্কিত এসএফআই-সহ বিরোধী বাম ছাত্র সংগঠনগুলো কার্যত এই ভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে বলে অভিযোগ করল এবিভিপি। তাদের অভিযোগ, এই লক্ষ্যে এবিভিপির প্রচারে ব্যাপকভাবে বাধাও দিচ্ছে এসএফআই-সহ বিভিন্ন বাম সংগঠন। এই ব্যাপারে প্রমাণসহ এবিভিপির পড়ুয়াদের অভিযোগ, বাম ছাত্ররা কখনও এবিভিপির প্রার্থীদের প্যানেলের নম্বরের ওপর নিজেদের পোস্টার সেঁটে দিচ্ছে। কখনও আবার শ্লীলতার যাবতীয় মাত্রা অতিক্রম করে কদর্য ভাষা লিখে দিচ্ছে এবিভিপির প্রার্থীদের দেওয়াল লিখনের গায়ে।
এই অভিযোগে সোমবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিন অফ স্টুডেন্ট’-এর কাছে অভিযোগ দায়ের করতে চলেছে এবিভিপি নেতৃত্ব। এই ব্যাপারে এবিভিপির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা সম্পাদক সুমনচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, শুধু এসএফআই নয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তে সামিল হয়েছে এআইএসএ, ডিএসএ এবং নকশালপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এমনকী, তৃণমূল ছাত্র পরিষদও।
এবিভিপির অভিযোগ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাম পড়ুয়াদের এই মৌরসীপাট্টা নতুন চলছে না। একসময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে খুন হয়ে গিয়েছিলেন এখানকার উপাচার্যও। এবিভিপির অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে বাম পড়ুয়ারা এখানে যা খুশি তাই করে, এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যত গাঁজা-মদের আখড়া হয়ে উঠেছে। যার জেরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে স্লোগান পর্যন্ত উঠেছে, ‘গাঁজা-মদে ভরপুর, কথায় কথায় যাদবপুর।’ বিভিন্ন মহল আবার, দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো থেকে যাদবপুরের পড়ুয়াদের কাছে গাঁজা-সহ অন্যান্য মাদক সরবরাহ চলে বলেও অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু, এতসব অভিযোগের পরও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিটা একটুও বদলায়নি। উলটে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে হেনস্তা করেও রেহাই পেয়ে গিয়েছেন পড়ুয়ারা। আর উপাচার্য, রেজিস্টারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের অবস্থা তো এখানে আরও খারাপ। একটু মুখ খুললেই পড়ুয়ারা তাঁদের ঘেরাও করে চূড়ান্ত হেনস্তা করে বলেই বারবার অভিযোগ উঠেছে।
এই সব অভিযোগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই করুণ পরিস্থিতি থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবিটা বদলাতে এবার উঠেপড়ে লেগেছে এবিভিপি। তারা এবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কলা বিভাগে সিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ফিল্ম স্টাডিজের শুভদীপ কর্মকার, জিএস পদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সম্প্রতি মোদক, এজিএস (দিবা) পদে দর্শনের মৃণাল খণ্ডিত, এজিএস (সান্ধ্য) পদে প্রার্থী হয়েছেন সংস্কৃত বিভাগের রামমঙ্গল গোপ। আর কারিগরি বিভাগে সিপি পদে নিখিল দাস, জিএস পদে পবন কুমার, এজিএস (দিবা) পদে সুধীর যাদব, এজিএস (সান্ধ্য) পদে রম্যজ্যোতি সরকার এবং সল্টলেক ক্যাম্পাসের এজিএস পদে প্রার্থী হয়েছেন আর্যবীর কুমার। এবিভিপির দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি হোক, এমন পড়ুয়ারা তাঁদের সমর্থন করছে। আর তাতেই শঙ্কিত হয়ে উঠেছে এসএফআই-সহ বাম পড়ুয়ারা। এই শঙ্কা থেকেই তারা এবিভিপির ভোটপ্রচারে বাধা দিচ্ছে।