আমাদের ভারত, ২২ জুন: রবীন্দ্র সরোবরের একটি জমি এক প্রমোদ ব্যবসায়ীকে ভাড়া দেওয়া নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা। সরোবর লাগোয়া বিস্তৃত সবুজের বেআইনি ব্যবহারের অভূতপূর্ব ঘটনায় বাড়ছে প্রতিবাদের মাত্রাও। গভীর রাতে সরোবরে আইন ভেঙে পরিবেশ-বিরোধী কাজের প্রতিবাদে শনিবার সকালে প্রাতঃর্ভ্রমণকারী ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।
শুক্রবার গভীর রাতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের সমস্ত নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা করে মাটি খোঁড়ার ডিজেলচালিত গাড়ি আনা হয় রবীন্দ্র সরোবরে। পরিবেশবিদ সমীর বসু এ কথা জানিয়ে বলেন, বিকট শব্দ, আলো এবং কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে জীববৈচিত্রের বড় ক্ষতি করা হয়। মাঠটিকে একটি ছোটখাট মালভূমিতে পরিবর্তিত করা হয়। তার ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে।
সমীরবাবু জানান,এই অবস্থায় এটা আশঙ্কা করা অমূলক নয় যে মাঠটিতে পাকা বাড়ি তৈরি করার ভিত্তি খোঁড়া হচ্ছে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টায় পরিবেশবিদ পূর্ণিমা দত্ত, সুমিতা বন্দ্যোপাধায় এবং ‘সবুজ মঞ্চ’-র সদস্যবৃন্দ একটি বৃহৎ কমিটি গঠনে উদ্যোগী হয়েছেন। পাশে আছে সরোবরের আরও অনেক সংস্থা।
সুমিতা বন্দ্যোপাধায় বলেন, বিতর্কিত জমিটির পরিমাণ প্রায় ৫ বিঘা। সরোবরের বাস্তুতন্ত্র দেখভাল করার দায়িত্বে কেএমডিএ-র। তাদের তরফে সেখানে একটি সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। তাতে লেখা ‘সেলেব্রিটিদের জন্য’। স্বভাবতই সরোবরকে যারা ভালবাসে তার ভালমন্দের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন মানুষ এই গর্হিত কাজকে মেনে না নিয়ে কেএমডিএ-কে প্রশ্ন করেন।
সমীর বসু জানান, কেএমডিএ’র তরফে ওই জমি ভাড়া দেওয়া বা তার চুক্তিপত্রের প্রতিলিপিকে অস্বীকার করা হয়েছে। বলা হয়েছে এটি একটি গুজব এবং রাজনৈতিক চক্রান্ত। মাঠটি কাউকেই হস্তান্তর করা হয়নি। ওটি যেমন ছিল তেমনই থাকবে। এই আশ্বাস পেয়ে বাস্তুতন্ত্র নিয়ে সক্রিয় একটি সংস্থা গত ৫ জুন সেখানে একটি বৃক্ষরোপন অনুষ্ঠান করে। ২৫টি মাঝারি গাছের চারা রোপণ করা হয় সেখানে।
পরিবেশবিদ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ জানান, ইতিমধ্যে খবর আসে আইনি সমস্ত নির্দেশ উপেক্ষা করে শুক্রবার রাতের অন্ধকারে জেসিবি-র মত ডিজেল চালিত, শব্দ ও বায়ুদূষণকারী যন্ত্র এনে মাঠটির সাদার্ণ এভিনিউ বরাবর সীমানায় বড় বড় গভীর গর্ত খুঁড়ে দুটি বিশালাকার গাছের শিকড় কেটে ফেলা হয়েছে। তছনছ করে দেওয়া হয়েছে সবুজের অবশেষ। তাতে দশ ফুটের ওপরে দীর্ঘ গাছ যেমন মারা পড়ল, তেমনই জমিটির চরিত্র পালটে দেওয়া হল। গাছের ডালপালা ওরা সম্পূর্ণভাবে কবর দিতে পারেনি।
সোমেন্দ্রমোহন জানান, শনিবার সকালে এই ঘটনা জেনে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শুভানুধ্যায়ীদের একটি বিরাট অংশ। বড় গাড়ি নিয়ে এসে পুলিশের কর্মকর্তা সকালেই সরোবরে হাজির হয়ে তাদের গ্রেফতারের হুমকি দিতে থাকে মাইকে। কিন্তু তাতে অবস্থা আরও বেসামাল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ রণে ভঙ্গ দেয়।
সোমেন্দ্রবাবু বলেন, সরোবরের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তাকে এই বিষয়ে অভিযোগ করলে তিনি স্পষ্টতই জানান, ভাড়া দেওয়ার চুক্তিপত্রে লেখাই ছিল আদেশ অনুসরণ করতে হবে। পরিবেশের কোনও ক্ষতি করা যাবে না। তা সত্বেও এটি হয়ে থাকলে সেটি অন্যায় উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ কেএমডিএ-র আগের আশ্বাসবাণী যে অসত্য ছিল তা প্রমাণিত হয়ে গেল।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ আদালতে এ ব্যাপারে একটি মামলা দায়ের হয়ে আছে। তার প্রথম শুনানী হবে আগামী ১০ জুলাই।
বিজেমূলের রাজত্বে ভারতবর্ষে জল, জমি, জঙ্গল, শিক্ষা, পরিবেশ কিছুই নিরাপদ নয়।