আমাদের ভারত, ১৪ মে: ভাসমান ঐতিহ্য ও আতিথেয়তার গন্তব্য হিসেবে বিখ্যাত কিছু পাইলট লঞ্চকে নতুন রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি (এস.এম.পি) বন্দর। এটি হুগলি নদীর পার্শ্ববর্তী ঐতিহ্যবাহী পর্যটনকে নতুন রূপ দেবে।
ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই প্রকল্পের আওতায় তিনটি ঐতিহাসিক পাইলট লঞ্চ— পি.এল. রূপসা, পি.এল. হুগলি ও পি.এল. গোপাল—নতুন করে সাজিয়ে ভাসমান পর্যটন, সাংস্কৃতিক ও বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
১৯৯০-এর দশকের শেষে তৈরি এই লঞ্চগুলি মূলত জাহাজকে নদীপথে পথ দেখানোর জন্য ব্যবহার করা হত। এখন জলযানগুলিকে ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিকতার মিশেল ঘটিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হবে। এতে এক অসাধারণ সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। এস.এম.পি কলকাতা চায়, লঞ্চগুলি যেন ভাসমান ক্যাফে, ভাসমান জাদুঘর, সাংস্কৃতিক মঞ্চ, বিবাহ-মঞ্চ কিংবা ঐতিহ্যবাহী ক্রুজের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।
পি.এস. ভোপাল নামে একটি প্যাডল স্টিমারকে ‘বেঙ্গল প্যাডল’ নামে নতুন রূপে চালু করার সাফল্যের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে এই উদ্যোগে উৎসাহিত হয়েছে এস.এম.পি, কলকাতা।
জাহাজগুলির বিবরণ: পি.এল. রূপসা ও পি.এল. হুগলি—১৯৯৭ সালে তৈরি—ইস্পাতের তৈরি, দৈর্ঘ্য ৩২.৯০ মিটার, প্রস্থ ৬.০০ মিটার ও গভীরতা ৩.৮০ মিটার। প্রতিটির গ্রস রেজিস্টার্ড টনেজ (জি.আর.টি) ১০৫ টন এবং ১,০০০ থেকে ২,০০০ বর্গফুট পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য জায়গা রয়েছে। প্রত্যেকটিতে ৫০ থেকে ১০০ জন অতিথি বসতে পারেন।
পি.এল. গোপাল—১৯৯৪ সালে তৈরি—ফাইবারগ্লাস রিইনফোর্সড প্লাস্টিক (এফ.আর.পি) দিয়ে তৈরি, দৈর্ঘ্য ১৯.০০ মিটার এবং এতে ৮০০ থেকে ১,০০০ বর্গফুট জায়গা ব্যবহারযোগ্য। এটিতে ৩০ থেকে ৫০ জন অতিথি আসতে পারবেন।
এই প্রকল্পে পর্যটন সংস্থা, নদীকেন্দ্রিক ভ্রমণ সংস্থা, আতিথেয়তা ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, রেস্তোরাঁ বা ক্যাফে চেইন, ঐতিহ্য সংরক্ষণকারী সংস্থাগুলিকে যৌথ উদ্যোগে আসার আহ্বান জানানো হচ্ছে। লক্ষ্য, থিমভিত্তিক রেস্তোরাঁ, ডাইনিং অভিজ্ঞতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের এমন এক কেন্দ্র গড়ে তোলা, যা বাংলার ঐতিহ্য ও আধুনিক সংস্কৃতিকে সম্মান জানাবে।
এই কাজকে আরও সহজ করতে এস.এম.পি কলকাতা ডক সিস্টেম (কে.ডি.এস)-এ বিনামূল্যে বার্থিং-এর সুবিধা দিচ্ছে, যাতে মেরামতি ও রেট্রোফিটিং-এর কাজ করা যায়। পাশাপাশি, যাত্রী ও কর্মীদের ওঠানামার জন্য বিনামূল্যে জেটিও দেওয়া হবে। এই উদ্যোগ কলকাতার প্রাচীন নদীতীরবর্তী সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে আনার একটি বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। এতে পর্যটন, সংস্কৃতি ও বাণিজ্য একসাথে উন্নত হবে।
এস.এম.পি কলকাতা এখন আর শুধু বন্দর নয়- সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি ও বাণিজ্যের মিলনস্থল। ঐতিহাসিক জলযানগুলিকে নতুন রূপে সাজিয়ে শহরের নদীঘেঁষা জীবনের সঙ্গে মানুষকে আরও গভীরভাবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী চিন্তা ও সাংগঠনিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই রূপান্তর নতুন অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুযোগ তৈরি করবে। এস.এম.পি কলকাতা সমস্ত আগ্রহী সংস্থাকে আহ্বান জানাচ্ছে—এই দৃষ্টি পূরণে অংশগ্রহণ করার এবং হুগলি নদীর তীরবর্তী জীবনের উন্নয়নে ভূমিকা নেওয়ার।