আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ১৫ অক্টোবর: এবার কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হচ্ছে না ঘোষ গ্রামে। কারণ এবার মায়ের ‘ডাক সংক্রান্তি’। ফলে এবার গ্রাম থাকবে কার্যত অন্ধকারে।
কথিত আছে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে হর্ষবর্ধনের আমলে পরিব্রাজক সাধক কামদেব ব্রহ্মচারী স্বপ্নাদেশ পেয়ে দারু মূর্তির প্রতিমার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই কারণে গ্রামের কোনো বাড়িতে রাখা হয় না লক্ষ্মীর ঝাঁপি। পাতা হয় না লক্ষ্মীর ঘট। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোতেও গোটা গ্রামের মানুষ লক্ষ্মী মন্দিরেই মায়ের আরাধনায় মাতেন। আশেপাশের ও দূরদূরান্তের মানুষও কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোয় ভিড় জমান। কিন্তু এবার সেই গ্রামে হচ্ছে না পুজো। ফলে মুখ ভার সকলের।
মন্দিরের সেবাইত গুরুসরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মন্দিরের প্রাচীন প্রথা মেনে পুজোর দিন এবার ডাক সংক্রান্তি পড়ে যাওয়ায় পুজো বন্ধ। বন্ধ থাকবে মায়ের গর্ভগৃহ।
কী সেই ডাক সংক্রান্তি? কথিত আছে প্রথা মেনে প্রতিবছর ২৮ আশ্বিন সন্ধ্যা আরতির পর মায়ের মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। খোলা হয় ২ কার্তিক সকালে। এই সময় মা জগত পরিক্রমায় বের হন। ২৯ আশ্বিন সকাল বেলা মন্দিরের সেবাইতরা আগের দিন সন্ধ্যা আরতির প্রদীপ থেকে ৫১টি খরের বরে (ধানের গোলার বাঁধা দড়ি) আগুন জ্বালিয়ে পৌঁছে যান স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত ৫১টি গ্রামে। কৃষি প্রধান সেই গ্রামগুলিতে ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে বরের আগুন থেকে দীপশিখা। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বরের ভস্ম, পুষ্প ও সিঁন্দুর। ৩০ আশ্বিন ওই সব কৃষক পরিবারগুলি ভস্ম, সিন্দুর এবং পুস্প নিয়ে ভোর বেলা জমির ঈশান কোণে ধান গাছে ফুল আসার জন্য মা লক্ষ্মীর কাছে প্রার্থনা করেন। একেই বলে ডাক সংক্রান্তি। ২ কার্ত্তিক মায়ের দরজা পুনরায় খোলা হয়। সঙ্গে চলে হরিনাম সংকীর্তন, যাজ্ঞযজ্ঞ এবং বিশেষ পুজো। মন্দির বন্ধ থাকাকালীন এই চারদিনে যতটা সম্ভব মন্দির নিস্তব্ধ ও আলোক শূন্য রাখা হয়। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস মায়ের জগতভ্রমণের পথে যাতে কোনরূপ লৌকিক বাধার সৃষ্টি না হয়। ঘটনাক্রমে এই চারদিনের মধ্যে এবারর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন পড়েছে। তাই মন্দিরের প্রথা মেনে পুজো বন্ধ রাখা হয়েছে।
মন্দিরের সেবাইত কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মন্দিরে মা যদি না থাকেন তাহলে পুজো কিভাবে হবে? তাই আমরা রীতি মেনে পুজো বন্ধ রেখেছি। আবার এক বছরের অপেক্ষা। কারণ আমাদের গ্রামে লক্ষ্মী পুজোই বড় উৎসব”।