কৃষি আইন প্রত্যাহার না হলে ২৬ জানুয়ারি রাজধানীতে ট্রাক্টর র‍্যালির হুঁশিয়ারি আন্দোলনকারী কৃষকদের

আমাদের ভারত, ২ জানুয়ারি:নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন ৩৮ দিনে পড়ল। দফায় দফায় বৈঠক হলেও সার্বিক সমাধান সূত্র এখনো বের হয়নি। কৃষকদের ৪টির মধ্যে দুটি দাবি সরকার মানতে রাজি বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু নয়া আইন প্রত্যাহার সড় এমএসপির আইনি গ্যারেন্টি নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি সরকার। এরমধ্যে দিল্লি গাজিয়াবাদ সীমান্তে এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনার পর আন্দোলনকারী কৃষকরা আরো সুর চড়িয়েছেন। তাদের হুঁশিয়ারি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি মানা না হলে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন তারা দিল্লিতে ট্রাক্টর ও ত্রিবর্ণ পতাকা নিয়ে কিষান র‍্যালি করবেন। এদিকে এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর থাকার কথা।

অন্যদিকে দিল্লি গাজিয়াবাদ সীমান্তে এক আন্দোলনকারী কৃষক আত্মহত্যা করেন। মৃত কৃষকের নাম কাশ্মীর সিং লোদি। তার বয়স ৭৫ বছর। তিনি উত্তরপ্রদেশের রামপুর জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এখানে তার সাথে তার ছেলে ও নাতিও আন্দোলনে সামিল । ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের দাবি আন্দোলন স্থানের একটি শৌচাগার থেকে ওই কৃষকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। সেখানে একটি সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। সুইসাইড নোটে কৃষি আইনের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করে তার মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেছেন ওই কৃষক।

আন্দোলনকারী কৃষকদের দাবি, উদ্ধার হওয়ায় নোটে লেখা রয়েছে, “আর কতদিন ঠান্ডায় বসে থাকবো আমরা?সরকার আমাদের কথা শুনছে না । যাতে কোনো সমাধান বেরিয়ে আসে তাই আমি আমার জীবন দিলাম। আমার নাতি আমার শেষকৃত্য করে যেনো এই আন্দোলন স্থলেই করেন।”

তবে সুইসাইড-নোট আদৌ কাশ্মীরি নিজে লিখেছেন কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। সুইসাইড নোটটি তারা উদ্ধার করে নিয়ে গেছেন।

৩৮ দিন ধরে সীমান্তে আন্দোলন করছে কৃষকরা। শুধু দিল্লি নয়, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ,পাঞ্জাব , উত্তরাখণ্ডে কৃষি আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। আন্দোলন চলাকালীন ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যা করেছেন কয়েকজন কৃষক। অন্যদিকে সরকারের সাথে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হলেও তার থেকে কোন সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি।

গত বুধবার কৃষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসে কেন্দ্র। ওই বৈঠকে কৃষকদের চারটির মধ্যে দুটি দাবি মেনে নিয়েছে বলে জানিয়েছিল সরকার। দিল্লি দূষণ রুখতে খড় পোড়ানোর জন্য শাস্তি থেকে কৃষকদের বাইরে রাখা হবে, বিদ্যুৎ আইনের সংশোধনীতে কৃষকদের বিদ্যুতে ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা বজায় থাকবে। কিন্তু তিন কৃষি আইনে প্রত্যাহার ও ফসলের ন্যূনতম দাম অর্থাৎ এমএসপির আইনি গ্যারান্টি নিয়ে সরকার এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

কৃষক সংগঠনগুলির আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সরকার এই আইন প্রত্যাহার না করলে প্রজাতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাস্তায় ট্রাক্টর র্যালি করবেন তারা। শনিবার আবারও সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এক আন্দোলনকারী কৃষক দর্শন পাল। সরকারও আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যে আগামী ৪ জানুয়ারি ফের বৈঠক হবে। ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি শুনবে। যদি কোন সমাধান সূত্র না বেরোয় বা বৈঠক যদি ব্যর্থ হয় তাহলে প্রজাতন্ত্র দিবসে তেরেঙ্গা নিয়ে দিল্লির রাস্তায় মহামিছিল করবেন তারা বলে জানিয়েছেন দর্শন পাল। তিনি আরো জানিয়েছেন ৬ জানুয়ারি হরিয়ানার কুণ্ডলী মানেসর পালওয়াল এক্সপ্রেসওয়েতে বিক্ষোভ শুরু হবে। তেইশে জানুয়ারি রাজভবনের বাইরে প্রতিবাদ সভাও হবে। হরিয়ানার সমস্ত শপিং মল, পেট্রল পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *