Birbhum, Karate competition, জাতীয় স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় খেলার যোগ্যতা অর্জন করল বীরভূমের জঙ্গল কন্যারা

আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৩ জানুয়ারি: ইলামবাজার থানার অন্তর্গত আদিবাসী অধ্যুষিত মুর্গাবনি গ্রাম। শাল, পিয়ালের জঙ্গলের মাঝে গড়ে ওঠা আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামের মানুষগুলো যেন হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তাদের চোখে এখন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন।

শহর থেকে শান্তিনিকেতনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা এতদিন এই জঙ্গল কন্যাদের শুধুই একরাশ কৌতুহল বশে গাড়িতে চেপে, ধুলো উড়িয়ে দেখতে ছুটত। কেউ রিলস বানিয়ে বা কেউ ইউটিউবে তাদের সাথে তোলা ভিডিও আপলোড করে ফিরে আসতেন। এভাবেই মাস পেরিয়ে বছর কেটে গেলেও গ্রামবাসীদের অবস্থার উন্নতির জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে চৌপাহাড়ি ইতুন আসড়া নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে গ্রামের ছেলে মেয়েদের জন্য শুরু হয় ক্যারাটে প্রশিক্ষণ। তিন বছরের মধ্যেই এই গ্রামের লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, পিঙ্কি হাঁসদারা রাজ্য স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে গোল্ড এবং সিলভার পদক জয় করে ফিরে এল।

জানাগেছে, গত ১৯ জানুয়ারি, কালনায় অনুষ্ঠিত রাজ্য স্তরের ক্যারাটে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিল মুর্গাবনি গ্রামের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার নয়জন। যাদের মধ্যে পিঙ্কি হাঁসদা, লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, সঙ্গীতা হেমব্রম, কিষাণ বাস্কি ও সূর্য মার্ডি কুমিতে (ফাইট) বিভাগে স্বর্ণপদক জিতে নেয়। অন্যদিকে, সোমা হেমব্রম, মণিকা হাঁসদা ও স্বস্তিকা মার্ডি রৌপ্যপদক জয় করে ফিরে এসেছে। এছাড়াও কাতা বিভাগেও তারা পদক ছিনিয়ে নিয়েছে।

এই জঙ্গল কন্যাদের প্রশিক্ষক কৌশভ সান্যাল জানান, কালনায় আয়োজিত এই প্রতিযোগীতায় বোলপুর ও ইলামবাজার থেকে মোট ২২ জন ক্যারাটেকা এই প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করেছিল। যাদের মধ্যে অধিকাংশই আগামী দিনে জাতীয় স্তরের খেলায় যোগ্যতা অর্জন করেছে। তিনি বলেন, ইলামাবাজারের আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার নয়জন ক্যারাটেকার কারোরই আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অনেকের ঠিকমতো খাবারটাও জোটে না। চৌপাহাড়ি ইতুন আসড়ার তরফ থেকে এদের ছয়জনকে এই প্রতিযোগীতার খরচ তুলে দেওয়া হয়েছিল। বাকি তিনজন ও বোলপুরের আরো চারজনের খেলার খরচ মার্শাল আর্টস অ্যাণ্ড স্পোর্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে দেওয়া হয়েছিল।

কৌশভবাবু বলেন, বোলপুরের কিছু শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এগিয়ে এসেছিল বলেই এই ছোট্ট ছোট্ট ছেলে মেয়েদের আজ ক্যারাটের প্রতি আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। রূপা চৌধুরী সহ বোলপুর এলাকার কয়েকজন মানুষ যাঁরা নিঃশব্দে দুঃস্থ ব্যক্তিদের জন্য কাজ করে চলেছেন তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এদের জন্যই আজ ক্যারাটের জগতে সফলতা অর্জন করা ছেলে মেয়েদের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা প্রচণ্ড খুশি হয়েছে৷ আগামীদিনে, এরা ছাড়াও আট বছরের ছোট্ট ক্যারাটেকা রাইমা পাল সহ ইন্দ্রনীল দেবনাথ, দেবদীপ্ত রায় সহ অনেকেই জাতীয় স্তরের খেলায় অংশগ্রহণ করতে চলেছে।

ক্যারাটের জগতে জঙ্গল কন্যাদের সফলতার বিষয়ে লক্ষ্মীমণি হাঁসদা, পিঙ্কি হাঁসদাদের বক্তব্য, আমরা আরো এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের জন্য যদি গ্রামের একটুও উন্নতি হয় সেটাই আমাদের কাছে অনেক বড় উপহার হবে।

গ্রামবাসীদের পক্ষে স্থানীয় শিক্ষক সুশীল সোরেন বলেন, চৌপাহাড়ি ইতুন আসড়ার পক্ষ থেকে আমরা ওদের অলচিকি ভাষা শেখাই। পাশাপাশি ক্যারাটের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। এদের জন্য স্থানীয় ছেলেমেয়েদের অনেকের মধ্যেই এখন ক্যারাটের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *