Marijuana, Jhargram, গোয়েন্দাকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় সড়ক থেকে বিপুল পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের

পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ঝাড়গ্রাম, ২০ মে: ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা ছুঁই ছুঁই। হঠাৎ করে ফোন এলো। অপর প্রান্ত থেকে হিন্দিভাষী একজন ভারি গলায় বলে উঠলেন সাবজী, খবর পাক্কা হে। ফোনটা রাখার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি নিয়ে কলকাতা- মুম্বাই জাতীয় সড়কের দিকে রওনা দেন ঝাড়গ্রামের এসডিপিও শামীম বিশ্বাস। সঙ্গে ঝাড়গ্রামের আইসি বিপ্লব কর্মকার সহ অন্যান্য পুলিশ অফিসাররা।

গোপন সূত্রে খবর এসেছে, জাতীয় সড়ক ধরেই বাংলায় ঢুকছে বিপুল পরিমাণে গাঁজা। গোয়েন্দা মারফত সন্দেহভাজন গাড়ির ছবি ও নাম্বার আগেই এসে গিয়েছিল পুলিশের হাতে। জাতীয় সড়কে হাজারো গাড়ি ছুটে চলেছে। গাড়িটিকে চিহ্নিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় পুলিশের কাছে। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে নজরদারি চালাতে থাকে পুলিশ। হঠাৎ করে সন্দেহভাজন গাড়িটি চোখে পড়তেই ফিল্মি কায়দায় গাড়িটিকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়। পুলিশ গাড়ি ধরতেই গাড়ির ভেতরে থাকা পাচারকারীরা বুঝে যায় তারা ধরা পড়েছে। পালানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয় না।

গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ মধ্যরাতে কলকাতা- মুম্বাই জাতীয় সড়কের ঝাড়গ্রাম থানার নেতুড়ার কাছে একটি ব্যক্তিগত গাড়িকে আটক করে প্রথম ১১ কিলো গাঁজা উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িতে থাকা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ঠাকুরনগর এলাকার দুই বাসিন্দা সঞ্জীব হালদা ও প্রতীক নাথকে।
পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে ওড়িশা থেকে বস্তা বন্দি করে গাঁজা কলকাতার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ আরো সূত্র ও গোয়েন্দাকে কাজে লাগিয়ে জানতে পারে ঝাড়গ্রাম জেলার উপর দিয়ে ছুটে যাওয়া কলকাতা- মুম্বাই জাতীয় সড়কে গাঁজা পাচারের করিডোর হিসেবে তৈরি করতে চাইছে গাঁজা পাচারকারীরা। এই প্রথম এই পথকে তারা গাঁজা পাচারের জন্য ব্যবহার করা শুরু করেছে। আগে অন্য কোনো পথে গাঁজা পাচার করা হতো।

রাজ্যে গাঁজা পাচারের প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ তাদের সূত্র আরো বাড়িয়ে দেয়। মহারাষ্ট্র থেকে কাঁচা হলুদ নিয়ে এরাজ্যে আসা একটি লরিকে ১০ মে রাতে নেতুড়ার কাছে আটক করে ঝাড়গ্রাম থানার পুলিশ। ঘটনাস্থলে ছিলেন এসডিপিও শামীম বিশ্বাস এবং ঝাড়গ্রামের বিডিও জয় আহমেদ, ঝাড়গ্রাম থানার আইসি বিপ্লব কর্মকার। লরিটি তল্লাশি করে প্লাস্টিকের প্যাকেট বন্দি অবস্থায় ১৩ প্যাকেট গাঁজা উদ্ধার করা হয়। যার ওজন ২৩২ কিলো ১৪০ গ্রাম। এত পরিমাণ গাঁজা প্রথম উদ্ধার হয় জেলায়। পুলিশ ঘটনায় লরির চালক দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পাতিরামপুর থানার উত্তর খানপুর গ্রামের বাসিন্দা রমেন সিংকে গ্রেফতার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, ছত্রিশগড়ের বিলাসপুরে এই বিপুল পরিমাণ গাঁজা গাড়ির কেবিনে লোড করা হয়েছিল কলকাতার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ঘটনার কয়েক দিনের মাথায় গাঁজার খোঁজ করতে আসা গাঁজা পাচারের দুই মূল পান্ডাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতরা হলো অরুণ কেওয়াত ও ভিপিন নিশাদ। অরুণের বাড়ি কলকাতার কাশীপুর এলাকায়। ভিপিনের বাড়ি উত্তরপ্রদেশ রার্জে প্রতাপগড়ে।

গত শুক্রবার ১৬ মে দুপুরে জাতীয় সড়কের জামবনি থানার চিচিড়ায় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে ঝাড়গ্রামের এসডিপিও শামীম বিশ্বাস, জামবনি বিডিও দেবব্রত জানা, জামবনি থানার আইসি অভিজিৎ বসু মল্লিক অপারেশন চালিয়ে লরিটি আটক করে। তারপর লরির কেবিন থেকে ২৯টি প্লাস্টিকের প্যাকেটে মোড়া ৬৪ কেজি গাঁজার উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় লরির চালক আসানসোলের বাসিন্দা মনোজ শর্মাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, ওড়িশার সম্বলপুরে গাড়িতে গাঁজাটি লোড করে হাওড়ার উলুবেরিয়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এই ঘটনার দু’দিনের মাথায় রবিবার ১৮ মে ঝাড়গ্রাম থানার গুপ্তমণি এলাকায় একটি লরি আটক করে লরি থেকে ৯০ কেজি ৬১০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় গাড়ির চালক গুড্ডু কুমার এবং খালাসি ভোলা কুমার রায়কে। তাদের দু’জনের বাড়ি বিহার রাজ্যের বেলদী থানা এলাকায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, ওড়িশার বহাড়াগোড়ায় গাঁজা লোড করে হাওড়ার ধুলাগড়ের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

গাঁজা পাচারকারীরা ঝাড়গ্রাম জেলার উপর দিয়ে এই প্রথম গাঁজা পাচারের করিডর তৈরি করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ তার গোয়েন্দাদের কাজে লাগিয়ে রাজ্যে গাঁজা ঢোকার আগে বাজেয়াপ্ত করতে সক্ষম হয়। গাঁজা পাচারের মূল পান্ডারা গাড়ির চালকদের ব্যবহার করত বলেও তথ্য পুলিশের সামনে উঠে আসে। গাড়ির চালকদের টাকার লোভ দেখিয়ে, কোথাও আবার তাদের অজান্তেই গাড়িতে গাঁজা লোড করা হতো। গাড়ির চালকরা সঠিক জায়গায় গাঁজা পৌঁছে দিতে পারলেই মোটা অংকের টাকা তুলে দেওয়া হতো তাদের হাতে। যুব সমাজকে রক্ষা করার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের সঙ্গে জেলা
প্রশাসনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গাঁজার বিরুদ্ধে অপারেশন সময় পুলিশের সঙ্গে বিডিও ও জয়েন বিডিও রয়েছেন।

ঝাড়গ্রামের এসডিপিও শামীম বিশ্বাস বলেন, “গাঁজা পাচারকারীরা এই প্রথম জাতীয় সড়ক ব্যবহার করে ঝাড়গ্রাম জেলার উপর দিয়ে গাঁজা পাচারের ছক কষেছিল। গোয়েন্দা মারফত খবর পাবার পর আমরা গাড়িগুলিকে চিহ্নিত করে গাঁজা উদ্ধার করেছি।”

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলেন, “মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানে আমাদের পুলিশের একটি স্পেশাল গ্রুপ লিড করছে। জাতীয় সড়কের উপর নজরদারি চালিয়ে এসওজি শেলের ওসি ইরান শেখ এবং তার টিম তথ্য সংগ্রহ করছে। ওড়িশা রাজ্যের সম্বলপুর জেলার পাশে বার্গার বলে একটি জেলা রয়েছে, সেখানকার কিছু মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাদক পাচারের চক্রান্ত করছে। ওড়িশা লাগোয়া আমাদের জেলা হওয়ায় আমরা নজরদারি আরো বাড়িয়েছি এবং যেখানে খবর পাচ্ছি সেখানে অভিযান চালিয়ে মাদক দ্রব্য উদ্ধার করার পাশাপাশি গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আগামী দিনে আরো ভালোভাবে কাজ করবে আমার টিম বলে আমার বিশ্বাস।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *