সুশান্ত ঘোষ, বনগাঁ, ৪ ডিসেম্বর: বাংলাদেশে দিদি-দাদাদের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলেন বনগাঁর হরিদাসপুরের সুনীতি মৃধা। বছর পঞ্চাশের সেই প্রৌঢ়া ভাবতেও পারেননি এই কয়েক দিনে এমন আমূল বদলে যাবে পরিস্থিতি। রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে ভয় পেয়ে কোনওরকমে ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে এপার বাংলায় পৌঁছলেন তিনি। এরই সঙ্গে বয়ে আনলেন ওপার বাংলায় চলতে থাকা অরজাকতা-বিশৃঙ্খলার কাহিনী।
বাংলাদেশে যে হিন্দুদের উপর নির্মম অত্যাচার চলছে, তা চোখের সামনে দেখেছেন বনগাঁর প্রৌঢ়া। কী ভয়াবহতার মধ্যে যে সেদেশে হিন্দুদের দিন কাটছে, তা তাঁর কথাতেই স্পষ্ট। তিনি বললেন, “একদিন আমাকে এসে সেখানকার এক মুসলিম বলল, তোমাদের রাজা ভারতে চলে গিয়েছে, তোমরা আস্তে আস্তে দু-তিন মাসের মধ্যে ভারতে চলে যাও, তোমরা নমঃশূদ্ররা ভারতে চলে যাও, নাহলে তোমাদের একটাকেও আস্ত রাখব না।”
ওপার বাংলার পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে তাঁর গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল। প্রশ্নের উত্তরে ওই প্রৌঢ়ার প্রতিক্রিয়া, “উরি বাবা, সে বলা যাবে না। বিশাল হামলা চলছে ওখানে। ভালো ভালো বউ- মেয়েকে ওরা তুলে নিতে চায়, জামাতের দল আর খালাদের দল। রাতের অন্ধকারে বাবা- মাকে মারধর করে মেয়ে বউমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ঘরে আগুন দিচ্ছে। জমি জমা দখল করে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “দিনটা যাও করে কাটছে, রাত হলে ওখানকার মানুষের প্রাণটা ধুকধুক করছে। ছেলেদের ধরে নিয়ে মারছে। তিনি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন, আমাদের ভারতে যদি মুসলিমরা আসে চিকিৎসা করাতে, তাহলে আমি বলব ঘেঁটি ধরে বার করে দেওয়া উচিত। চাল গম, তেল কিচ্ছু পাঠানো যাবে না। আমাদের গুরুদেবকে এমন করছে…. এটুকুও প্রসাদ দিচ্ছে না। সে বড় কষ্টে বাঁচছে।”
তবে এই প্রৌঢ়া এও জানিয়েছেন, এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, সেই প্রভাব সেদেশে পড়েছে। গতকাল, সোমবারই পেট্রাপোলে অরাজনৈতিক ব্যানারে প্রতিবাদ করেন তিনি। হিন্দুদের উপর নির্যাতন ও চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে গ্রেফতারির বিরোধিতা করে কড়া ভাষায় হুমকি দিয়েছেন বাংলাদেশকে। শুভেন্দু বলেন, “সীমান্তে অনেকগুলো শব্দদানব রাখা রয়েছে। দুটি যদি ঘুরিয়ে দেয় ভারতের বীর সেনা, ছুটে পালিয়ে যাবে মোল্লার দল। একাত্তরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আত্মসমর্পণ করেছিল। আর এই রাজাকারের নতুন বাচ্চাদের ভারত আত্মসমর্পণ করাবে। ভারত শুধুমাত্র একটা দেশ নয়, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে পৃথিবীর একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র”। শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি, “অত্যাচার বন্ধ না হলে এর পরের সপ্তাহে আমরা পাঁচদিন সীমান্ত বন্ধ করব। তারপর ২০২৫ সালে আমরা লাগাতার বন্ধ করে ওরা আলু, পেঁয়াজ কীভাবে খায়, সেটা দেখিয়ে দেব। আমাদের নাম ভারতবর্ষ।”