আমাদের ভারত, কলকাতা, ১৭ জানুয়ারি: ‘কনভারজেন্স অফ ট্রানস্লেসনাল অ্যাপ্রচ ইন ক্যান্সার থেরানোস্টিক্স’ নামে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে কলকাতার বিশ্ব বাংলা কনভভেনশন সেন্টারে। অনুষ্ঠিত হবে শনিবার পর্যন্ত। প্রথমদিন হলো এই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে হচ্ছে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যান্সার রিসার্চ (আইএসিআর) এর চুয়াল্লিশতম বার্ষিক সভাও।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) হিসাব অনুসারে পৃথিবীতে প্রায় প্রতি পাঁচজনে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ২০২২ সালের এই সংস্থার এক সমীক্ষায় জানাগেছে যে, বিশ্বে প্রায় কুড়ি মিলিয়ন মানুষ নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। অন্যদিকে ক্যান্সার চিকিৎসার পর পাঁচ বছর বা তার বেশি সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন প্রায় ৫৩.৫ মিলিয়ন মানুষ।
পৃথিবীতে নতুন ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে সবথেকে বেশি মানুষ ফুসফুসের ক্যান্সারে ভোগেন (২.৫ মিলিয়ন)। এর পরেই আছে বুকের ক্যান্সার (২.৩ মিলিয়ন), কোলোরেক্টাল ক্যান্সার (১.৯ মিলিয়ন) ও প্রস্টেট ক্যান্সার (১.৫ মিলিয়ন)। আমাদের দেশে গত বছর নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪,৯৬,৯৭২।
এদেশে পুরুষদের মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা যায় মুখের ক্যান্সার, তারপরেই স্থান ফুসফুস ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের। অন্যদিকে মহিলাদের মধ্যে সবথেকে বেশি দেখা যায় যথাক্রমে ব্রেস্ট, সারভিক্স ও ওভারিয়ান ক্যান্সার।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এই গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনে আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসার অন্যতম মাইলস্টোন ইমিউনো থেরাপির সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত বিভিন্ন নতুন ওষুধ সম্পর্কিত আলোচনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
নভি মুম্বাই-এর এসিটিআরএসি, বাঙ্গালুরুর আইআইএসসি, নতুন দিল্লির এনআইআই ও এআইএমএস, ভোপালের আইআইএসইআর, কল্যাণীর এনআইবিএমজি প্রভৃতি ভারতের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা সম্মেলনে যোগদান করছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণারত কয়েকজন অনাবাসী ভারতীয় বিজ্ঞানী সেদেশের ক্যান্সার গবেষণার বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
জিনোমিক্স, বিভিন্ন ক্যান্সার চিকিৎসার প্রধান ওষুধ বা প্রিসিসান মেডিসিন এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ এই সম্মেলনের প্রধান আলোচনার বিষয়। আজকের এই সম্পর্কিত গবেষণাগুলিই আগামী দিনের ক্যান্সার চিকিৎসার দিশা হয়ে উঠতে চলেছে।
চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সহায়তায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যান্সার রিসার্চের রাজ্য শাখা দেশের ক্যান্সার গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ ক্যান্সার রিসার্চ সোসাইটি আইসিএআর-এর বাৎসরিক কার্যক্রমের অঙ্গ এই সম্মেলন আয়োজন করেন।
উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রধান দশটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা কেন্দ্রের ক্যান্সার গবেষণা শাখা আইসিএআর ওয়েস্ট বেঙ্গল চ্যাপ্টারের সদস্য। এই সম্মেলনে ক্যান্সার গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য পুণার ন্যাশানাল সেন্টার ফর সেল সায়েন্সের অধিকর্তা ও অগ্রণী ক্যান্সার বায়োলজিস্ট অধ্যাপক শর্মিলা বাপাতকে মর্যাদাপূর্ণ এম জি দেও ওরেশন পুরষ্কারে সম্মানিত করা হয়।
সম্পূর্ণ সম্মেলনটিকে বারোটি সায়েন্টিফিক সেশন দুটি প্যানেল ডিসকাশনে সাজানো হয়। এগুলির মধ্যে মাঝে মাঝেই ছিল তরুণ গবেষকদের উৎসাহ প্রদানে বিভিন্ন পুরষ্কার প্রদানের অনুষ্ঠান। তিন দিনের এই সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩৫০ জন প্রতিনিধি যোগদান করেন।