আমাদের ভারত, ১৫ আগস্ট: জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয় পরিষদ (এনসিএসএম) ও সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপ, লন্ডন যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে মহামারী মোকাবিলায় দ্রুত ‘ভ্যাক্সিন তৈরির বৈশ্বিক প্রচেষ্টার গল্প তুলে ধরতে।
মঙ্গলবার থেকে কলকাতার সায়েন্স সিটিতে প্রদর্শিত হচ্ছে এটি। চলবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ২০ লক্ষেরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এই প্রদর্শনী।
২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর দিল্লি থেকে যাত্রা শুরু করে এই আন্তর্জাতিক ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। এরপর নাগপুর, মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর হয়ে মঙ্গলবারই এসেছে কলকাতায়। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহায়তা করেছে ওয়েলকাম, ইউ.কে; ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আই.সি.এম.আর), এবং অন্যান্য গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক সংস্থা।
একটি বিশেষভাবে পরিকল্পিত ভ্রাম্যমাণ বিজ্ঞান প্রদর্শনী বা মোবাইল সায়েন্স এক্সিবিশন বাস কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ঘুরে মানুষকে টিকাকরণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করবে আগামী কয়েক মাস।প্রদর্শনীতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের উদ্যোগে নির্মিত একটি ভাস্কর্য দেখানো হয়েছে।
আজ কলকাতার সায়েন্স সিটিতে আন্তর্জাতিক ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী “ভ্যাক্সিন্স: ইনজেক্টিং হোপ”-এর উদ্বোধন করেন পদ্মশ্রী প্রাপ্ত ও আই.সি.এম.আর-এর প্রাক্তন প্রধান অধিকর্তা ড: বলরাম ভার্গব। উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের ন্যাশনাল সায়েন্স চেয়ার (সায়েন্টিফিক এক্সেলেন্স) অধ্যাপক ড: পার্থ পি. মজুমদার; সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপ, লন্ডনের সায়েন্স ডিরেক্টর ড: রজার হাইফিল্ড; মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, ডিরেক্টর এবং কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ড: কুনাল সরকার; চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট, কলকাতার এনভায়রনমেন্টাল কার্সিনোজেনেসিস অ্যান্ড টক্সিকোলজি বিভাগের প্রধান ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড: মধুমিতা রায়; ব্রিটিশ কাউন্সিলের পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ডিরেক্টর ড: দেবাঞ্জন চক্রবর্তী; এনসিএসএম-এর প্রধান অধিকর্তা শ্রী এ. ডি. চৌধুরি; এনসিএসএম-এর উপপ্রধান অধিকর্তা শ্রী সমরেন্দ্র কুমার এবং সায়েন্স সিটি, কলকাতার অধিকর্তা অনুরাগ কুমার।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে অতিমারি প্রবল আকারে বিশ্বে আঘাত হানে। বিপুল প্রাণহানিও হয়। তবে পূর্ববর্তী অতিমারির তুলনায় এই সময় বিশ্বের প্রস্তুতি ছিল যথেষ্ট। যেখানে আগে প্রতিষেধক ভ্যাক্সিন তৈরিতে দশকের পর দশক লেগে যেত, সেখানে এবার আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এক বছরের মধ্যেই একাধিক কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরি সম্ভব হয়। এই প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয়েছে একটি আধুনিক প্রতিষেধক তৈরির গল্প ও তার মানবিক দিকটি।
সায়েন্স মিউজিয়াম গ্রুপের ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ স্যার ইয়ান ব্ল্যাচফোর্ড বলেন, “বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয়-এর এক অভিন্ন মঞ্চ হিসেবে, আমরা আশা করি বিশ্ববাসীকে প্রভাবিত করে এমন অস্তিত্বঘাতী সংকটগুলির নানান দৃষ্টিভঙ্গি নথিভুক্ত করতে পারব। আমাদের বিশ্বাস, এই প্রদর্শনী সেই অসাধারণ বৈশ্বিক প্রচেষ্টার সাক্ষ্য বহন করে— যা কার্যকর কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন তৈরি ও টিকা প্রতিরোধী মানসিকতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছে। এটি এক বিশাল প্রচেষ্টা, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রূপ পরিবর্তন করেছে এবং নতুনভাবে সামনে এসেছে। এই প্রদর্শনী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা, যাঁরা নতুন শুরুর পথ তৈরি করেছেন।”
জাতীয় বিজ্ঞান সংগ্রহালয় পরিষদের উপপ্রধান অধিকর্তা শ্রী সমরেন্দ্র কুমার বলেন, “এই প্রদর্শনী, জীবন বাঁচাতে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব বোঝাতে অত্যন্ত সফল হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৮.২ লক্ষেরও বেশি মানুষ সরাসরি প্রদর্শনীটি দেখে উপকৃত হয়েছেন এবং অতিরিক্তভাবে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে আমরা ২৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।”
সায়েন্স সিটি, কলকাতার ডিরেক্টর শ্রী অনুরাগ কুমার বলেন, “এই প্রদর্শনী ১৫ এপ্রিল ২০২৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সায়েন্স সিটি, কলকাতায় প্রদর্শিত হবে এবং প্রতিদিন সকাল ৯টা ৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এই সময়কালের মধ্যে আমরা নানা শিক্ষামূলক কর্মসূচি ও আদানপ্রদামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করেছি যাতে মানুষ সম্পৃক্ত হতে পারেন। আমি কলকাতাবাসীদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি প্রদর্শনীতে এসে এই সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই প্রদর্শনী ভ্যাক্সিন যে জীবন রক্ষায় কতটা গুরুত্বপূর্ণ— তা আরও ভালোভাবে মানুষের উপলব্ধি বাড়াবে।”
কলকাতার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এবং প্রদর্শনী পরিদর্শন করে।