Trump, Chinmoy Krishna Brahmachari, ট্রাম্পের মুখে বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের প্রসঙ্গ, হিন্দু জাগরণের ডাক দিয়ে চর্চায় সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী

আমাদের ভারত, ৫ নভেম্বর: বাংলাদেশ সরকার ১৮ জন হিন্দুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, চট্টগ্রামের ময়দানে হিন্দুদের সভায় জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করা হয়েছে। আর সেই সভাতেই ইসকনের সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর ভাষণের অনুবাদ শুনে বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে সরব হয়েছেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট তথা এবারের মার্কিন নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এর ফলে মার্কিন নির্বাচনের আলোচনায় এই প্রথম বাংলাদেশ ও সেখানের হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। এদিকে ট্রাম্পের মুখ খোলা ছাড়াও বাংলাদেশের যে সাধু গোটা বিশ্বে চর্চায় উঠে এসেছেন, যাকে নিয়ে কৌতূহল তুঙ্গে, এখন তিনি চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে হিন্দুদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

৩৮ বছর বয়সী এই সাধু ইসকনের চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠানের পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সপ্তাহ দুই আগে চট্টগ্রামে লালদিঘি ময়দানে যে সভায় হিন্দুদের নজিরবিহীন জমায়েত সংশ্লিষ্ট সব মহলকে চমকে দেয়। সেখানে চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর দেওয়া ভাষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনো ট্রেন্ডিং।

সেই সভার আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন মঠ মন্দিরের সাধুরা মিলে এই নবীন সন্ন্যাসীকে সনাতন জাগরণ মঞ্চের আহবায়ক ঘোষণা করেন। সেই দায়িত্ব পাওয়ার পর চট্টগ্রামের সভায় চিন্ময় কৃষ্ণ দেশে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে উগ্র ইসলামিক দল ও মুসলিম প্রশাসনের উদ্দেশ্যে চরম হুঁশিয়ারি দেন। হিন্দুর ঐক্য জাগরণের ডাক দিয়ে বলেন, “যারা কথায় কথায় আমাদের দেশ ছাড়তে বলছে তাদের বলছি, আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমরা মরতে ভয় পাই না। এই দেশে জন্মেছি মরব এই দেশেই। কোনো অবস্থাতেই মাতৃভূমি ছেড়ে যাব না।” জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা ময়দান। ‘আমার মাটি আমার মা বাংলা ছেড়ে যাব না’, ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড় বাংলা কি তোর বাপ দাদার’…. ইত্যাদি স্লোগান দেয় উপস্থিত জনতা।

সভা থেকে সাধুরা আট দফা দাবি তুলে হুঁশিয়ারি দেন সরকার কথা না শুনলে এরপর ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করবে সংখ্যালঘুরা।

বাংলাদেশে ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশজুড়ে আওয়ামি লিগ সমর্থকদের পাশাপাশি হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ভুরি ভুরি ঘটনা ঘটতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে হাজার হাজার হিন্দু পরিবার ভারতে চলে আসতে সীমান্তে জড়ো হয়। দু’ দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর বাধায় পরিবারগুলিকে দেশে থেকে যেতে হয়। কিন্তু অনেকেরই ঘর বাড়ি নেই। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসেব অনুযায়ী ৫-২০ আগস্টের মধ্যে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ২০১০টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ হিন্দুদের ঘরবাড়ি, দোকান, অফিসে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

যে বিভাগীয় শহরগুলোতে হামলার ঘটনা বেশি ঘটেছে তার মধ্যে চট্টগ্রাম অন্যতম। ওই শহরে সপ্তাহ দুই আগে সাধুদের ডাকে সমাবেশে গোটা হিন্দু সমাজ পথে নামে। যা এই সময় অন্যতম আলোচনার বিষয় হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে হিন্দুদের কোনো সমাবেশে এমন ভিড়ের নজির নেই। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত অচল ছিল বন্দর শহরের একাংশ।

আর একটা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও অতীতে কখনো সাধু-সন্তদের প্রতিবাদের ময়দানে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদকে পথে দেখা গেছে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থে ১৯৮৮ সাল থেকে তারা লড়াই করে আসছিলো। অথচ ওই বছরই সংবিধান বদলে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হোসেন মহম্মদ এরশাদ।

এরপর সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের ওপর নজীরবিহীন আক্রমণ হলেও প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে ঐক্য পরিষদের ভূমিকা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।কারণ এক্ষেত্রে তাদের সক্রিয়তা সেভাবে চোখে পড়ছে না। যদিও তার অন্যতম কারণ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হওয়ায় সংগঠনের বাকি নেতৃত্ব ভীত সন্ত্রস্ত।

ফলে এই পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধু সন্তরা। সাধু চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী বলেন, হিন্দু সমাজ ও ধর্ম রক্ষায় সাধুরা নিজেদের তাগিদ থেকে পথে নেমেছেন।

দু’বছর আগে দুর্গাপূজায় কুমিল্লা মণ্ডপে হামলার ঘটনায় সারা বিশ্বে প্রচার চালিয়ে হাসিনা সরকারকে বিপাকে ফেলেছিল ইসকন। এবারেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রচারে নেমেছে এই সংগঠন। মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের মুখ খোলার পেছনেও সংগঠনের তৎপরতা রয়েছে।

চিন্ময় কৃষ্ণের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারায় যে মামলা হয়েছে তাতে অভিযোগ করা হয়, নিউমার্কেটে সভায় জাতীয় পতাকার উপর ইসকনের পতাকা টাঙানো হয়েছিল। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্ররা সেখানে বেদি তৈরি করে জাতীয় পতাকা তুলেছিল। জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। এফ আই আর- এর তালিকায় চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর নাম থাকলেও তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করেনি। সাধুরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মিথ্যে মামলা দিয়ে তাদের দমানো যাবে না।

একইসঙ্গে ভারতের এক সংবাদ মাধ্যমকে সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী বলেছেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় বিপদ জনসংখ্যা। দ্রুত কমছে হিন্দুর সংখ্যা। তার পিছনে নিপীড়ন, নির্যাতন তো আছেই। আরো এক কারণ, এদেশে হিন্দুদের পরিবার পিছু একটি সন্তান। এখন তাদের পবিত্র কর্তব্য বেশি বেশি করে সন্তানের জন্ম দেওয়া।
ছবি: চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *