নাতির নামে বাড়ি লিখে দেওয়ার প্রতিদান, রাস্তার ধারে দিন কাটাচ্ছেন ঠাকুরদা ঠাকুমা

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ৭ জুন: পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতির হাতে পারিবারিক হিংসার শিকার হয়ে নিজেদের বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে রাস্তার ধারে আশ্রয় নিয়েছেন অশীতিপর বৃদ্ধ বাবা-মা। প্রশাসনিক সহযোগিতা ও দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বৃদ্ধ বৃদ্ধার পাশে দাঁড়াল উত্তর দিনাজপুর প্রবীন নাগরিক কল্যাণ মঞ্চ। প্রশাসনিক সহায়তার আশায় পথ চেয়ে বসে আছেন রায়গঞ্জ সুভাষগঞ্জ পালপাড়ার সস্ত্রীক অশীতিপর বৃদ্ধ কার্তিক পাল।

এলাকার মানুষের কাছে “পুতুল দাদু” বলে পরিচিত ৮০ বছরের বৃদ্ধ সুভাষগঞ্জ পালপাড়ার বাসিন্দা কার্তিক পাল। মাটির ছোট পুতুল তৈরি করে তা বিক্রি করেই এতদিন সংসার প্রতিপালন করেছেন কার্তিকবাবু। নিজের ছেলেকে লালন পালন করে বড় করে তার বিয়েও দিয়েছেন। তাঁর নাতিও এখন বড় হয়েছে। ভালোবেসে নিজের নাতির নামে তাঁর নামে থাকা বাড়ি লিখে দিয়েছিলেন। অনেক বয়স হয়ে যাওয়ায় স্বামী স্ত্রী আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। ছেলে ছেলের বৌ আর নাতির কাছে এখন বোঝা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। আর তাই তাদের ঝামেলা নিতে চায় না ছেলে আর নাতি।

বৃদ্ধ কার্তিকবাবুর অভিযোগ চরম অত্যাচার করে ছেলে, ছেলের বৌ আর নাতি। মারধর করা, খেতে না দেওয়া এসব চলত তাদের উপর। একদিন রাতের বেলা তাঁর অসুস্থ স্ত্রী দাঁড়াতে পারায় ৭৪ বছরের স্ত্রীসহ তাঁকে বাড়ি বের করে দেয়। আর তখন থেকেই সুভাষগঞ্জ সেতুর পাশে একটি ঝুপড়ি ঘরে কোনওরকমে মাথা গুঁজে পড়ে রয়েছেন তাঁরা।

আগের মতো পুতুলের ব্যাবসা আর করতে পারেন না। লোকে যে যেটুকু সাহায্য সহযোগিতা করে তা দিয়ে অর্দ্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন বৃদ্ধ বৃদ্ধা। সাতমাস ধরে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে রাস্তার ধারে ঝুপড়িতে পড়ে থাকলেও প্রশাসনিক কোনও পদক্ষেপ দেখা যায়নি। স্থানীয় গ্রামপঞ্চায়েত সদস্যা বেবি পাল জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে গ্রামপঞ্চায়েত ও রায়গঞ্জ বিডিওর কাছে সুরাহার ব্যাপারে দ্বারস্থ হবেন। কবে পঞ্চায়েত বা প্রশাসন দেখবে তাদের বিষয়টি আর কবেই বা তাঁরা ফিরে যেতে পারবেন নিজেদের বাড়িতে সেই আশায় দিন গুনছেন বৃদ্ধ বৃদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *