Taldangra, By-election, লোকসভা নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তালডাংরা বিধানসভা উপনির্বাচন ঘিরে

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৯ অক্টোবর: রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের মধ্যে তালডাংরা বিধানসভা কেন্দ্র অন্যতম। একদা বামেদের দুর্গ হিসাবে পরিচিত এই কেন্দ্র এখন তৃণমূলের দখলে থাকলেও গত বিধানসভা নির্বাচনে জোর লড়াইয়ের মুখে পড়তে হয় তৃণমূলের দাপুটে নেতা তথা দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ চক্রবর্তীকে। শুধু তাই নয়, গত লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপি- তৃণমূল সমানে লড়াই হয়। মাত্র দুই শতাংশের কম ব্যবধানে এগিয়ে যায় তৃণমূল। সে কারণেই এই কেন্দ্রকে নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

এদিকে এখনও কোনও দলই প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায় সম্ভাব্য তৃণমূল প্রার্থী বলে জোর জল্পনা। দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়ায় প্রার্থীর নামের জায়গা ফাঁকা রেখেই দেওয়াল লিখন শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। এইসব প্রচারে রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোৎস্না মাণ্ডির সঙ্গে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনুসূয়া রায়ের উপস্থিতি ও সরব হওয়া দেখে সেই সম্ভাবনা আরও জোরদার হচ্ছে।

শুক্রবার প্রথমদিন কোনও দলের তরফেই মনোনয়ন জমা পড়েনি। তালডাংরা কেন্দ্র রাজ্য রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কেন্দ্রটি সিপিএমের দুর্গ বলে একসময় পরিচিত ছিল।১৯৭১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এই বিধানসভা সিপিএমের দখলে ছিল। গত ১৯৯৬ থেকে ২০১১ পরপর ৪টি নির্বাচনে সিপিএমের মনোরঞ্জন পাত্র, ১৯৮৭ ও ১৯৯১-এর নির্বাচনে অমিয় পাত্র জয়ী হন। এর পূর্বে ১৯৭২ ও ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে মোহিনী মোহন পন্ডার জনপ্রিয় নেতারা জয়ী হয়ে ছিলেন। সেই সুবাদেই তালডাংরা বিধানসভা কেন্দ্রটি সিপিএমের গড় বলে পরিচিত হয়ে উঠেছিল।

গত ২০১৬- র বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে পরিবর্তন ঘটে। শাসকদল তৃণমূলের সমীর চক্রবর্তী সিপিএমের অমিয় পাত্রকে হারিয়ে জয়ী হন। সমীরবাবু ৪৭.৫৬ ও অমিয়বাবু ৪০.১ শতাংশ ভোট পান। তখন বিজেপি প্রার্থী মহাদেব খান মাত্র ৬.৪শতাংশ ভোট পেয়েছিল।গত ২০১৬-র নির্বাচনে বামফ্রন্ট এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। গত ২০২১ সালের নির্বাচনে ফের পটপরিবর্তন ঘটে। বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে। তৃণমূল প্রার্থী বদল করে জেলার দাপুটে নেতা অরূপ চক্রবর্তীকে প্রার্থী করে। এই নির্বাচনে ৪৫.২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূলের দাপুটে নেতা অরূপ চক্রবর্তী জয়ী হন। এই নির্বাচনে বিজেপির শ্যামল সরকার ওরফে বেনুবাবু ৩৯.২০ শতাংশ ভোট পান। খাতড়ার দাপুটে নেতা বেনুবাবু তৃণমূল সুপ্রিমোর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন একসময়। তিনি দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তালডাংরায় ভোটে লড়েছিলেন। এই নির্বাচনে অনেকটাই জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে ৩৯.২০ শতাংশ ভোট পায়। এই নির্বাচনে সিপিএমের প্রায় ২৯ ও তৃণমূলের ২ শতাংশ ভোট কমেছে। সদ্য হওয়া লোকসভা নির্বাচনেও এই বিধানসভা কেন্দ্রে ফের তৃণমূলের ভোট কমেছে এবং বিজেপির ভোট বেড়েছে।তৃণমূল প্রার্থী ৪৪.৩৩ এবং বিজেপি প্রার্থী ৪২.০৭ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তাই এবারের এই কেন্দ্রের নির্বাচনের দিকে নজর রাজ্য রাজনীতিবিদদের। সতর্ক তৃণমূল।

স্থানীয়দের দাবির কথা মাথায় রেখেই সব দলই চেষ্টা করছে স্থানীয় প্রার্থীকে প্রাধান্য দিয়ে। অন্যদিকে মনোনয়নের সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মহকুমা শাসকের দফতর এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *