রাজেন রায়, কলকাতা, ১১ ডিসেম্বর: বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে বহুদিন ধরেই রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন একসময় কলকাতা মহানাগরিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। শেষ পর্যন্ত সোমবার বিকেলে গোলপার্কের মিছিল এবং জনসভায় ফের আত্মপ্রকাশ করলেন তিনি। একসময় কলকাতার মেয়র পদ ছাড়াও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের দায়িত্বভার ছিল তাঁর কাঁধে, বিধায়ক থেকে মন্ত্রীপদ সবই সামলেছেন। সেই তিনি যে আজও ফুরিয়ে যাননি, ফের প্রকাশ্য জনসভায় তার প্রমাণ দিলেন।
বিজেপিতে যোগ দিয়ে বছর দেড়েকের টানাপোড়েন শেষে এদিনই প্রথম বিজেপির প্রকাশ্য সভায় দেখা যায় শোভন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখীকে। বিকেল ৪টে নাগাদ গোলপার্ক থেকে মিছিল শুরু হয়, ঘন্টা দেড়েক পর তা শেষ হয় সেলিমপুরে। আগাগোড়াই হুড় খোলা গাড়িতে পাশাপাশি ছিলেন শোভন-বৈশাখী। তবে এদিন এই দু’জনের পোষাকের মিল দেখা যায়নি, যা নিয়ে আফসোস করেছেন অনেকে।
পদ্ম শিবিরের প্রথম সভাতেই তৃণমূল নেত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণ করেন একদা তাঁরই প্রিয় কানন। দলের উৎসাহী কর্মীদের ভিড়ে মিছিল শেষে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলার ক্ষতায় আর তৃণমূল ফিরবে না। যে বিজেপির হাত ধরে তৃণমূল তৈরি হয়েছিল সেই বিজেপির হাতেই তা ধ্বংস হবে।’ ২০১১ সালে যে চিন্তা নিয়ে আমরা সরকার তৈরি করেছিলাম, ২০১৬ সালে সরকারে ফিরেছিলাম, তার থেকে এখন তৃণমূল অনেক দূরে চলে গিয়েছে।’ বিজেপি বলছে তারা সোনার বাংলা গড়বে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ নদীয়ায় বলেছেন, বিজেপির আর প্রয়োজন নেই কারণ সোনার বাংলা গড়া হয়ে গেছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে শোভনের তোপ, ‘মমতাদি বলছেন, সোনার বাংলা গড়েছেন। কিন্তু গরু পাচারের, কয়লা পাচারের সোনার বাংলা আমরা চাইনি।’
‘দম বন্ধ হয়ে আসছে। জেনে রাখুন ওসব মন্ত্রিত্ব হাওয়াই চটির মতো ছুঁড়ে ফেলতে পারি। আবার লড়াইয়ের সময় এসেছে। বাংলায় আর তৃণমূল ফিরবে না। এবার ভোটে জিতবে বিজেপি।’ তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণেই বন্ধবী বৈশাখীর চাকরি নিয়ে তৃণমূল সরকার টানাটানি করেছে বলে দাবি শোভনের।
শোভনের তোপ, ‘২০১৮ সালে বাংলায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে দেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিনা নির্বাচনে একের পর এক জেলা পরিষদ দখল করেছে তৃণমূল।
১২০ টি পুরসভার ভোট হচ্ছে না। এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যে ভোটই হচ্ছে না। পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে দেননি মমতা বন্দোপাধ্যায়। এটাই কি সোনার বাংলা তৈরি হয়েছে? আপনার কালীঘাটে শতরঞ্চির খোঁচা ধরে টেনেছে বিজেপি। ১৮ টি সিট নিয়ে গিয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এদিন মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ‘আবাসনমন্ত্রী থাকাকালীন এক বছর গীতাঞ্জলি প্রকল্পে কোনও ঘর তৈরি হয়নি। এই নিয়ে বিধানসভায় প্রশ্ন করেন এক বিধায়ক। প্রশ্নের কী জবাব দেব তা জানানোর জন্য বিধানসভায় আমাকে ডেকে পাঠান মমতা। আমি গেলে বলতে বলেন, ২৫ লক্ষ ঘর তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বিধানসভায় গিয়ে আমি সেকথা বলি। পিছন থেকে মহিলার কণ্ঠস্বর শুনতে পাই। দেখি উঠে দাঁড়িয়ে মমতাদি বলছেন, না ওটা ৪০ লক্ষ হবে। ১০ মিনিটের মধ্যে নিজের কথা বদলে ফেলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বাসযোগ্যতার কথা ভেবে সেদিন কোনও কথা বলিনি।’
তৃণমূল সুপ্রিমোকে তাঁর আরও তোপ, “যে পার্টির নামে কুৎসা করছেন, তাদের সঙ্গে নিয়েই ১৯৯৮ সালে সরকার গড়েছিলেন। আপনারা এতটাই প্রতি হিংসাপরায়ণ। তিনি কীভাবে ঢুকেছেন কোন কোন মন্ত্রিসভায়, তা আমি জানি। তদন্তে কেন সিবিআই-এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সঙ্গে শামিল হচ্ছে না আপনি? আয়ুষ্মান ভারত আপনরা করতে দিচ্ছেন না কেন? খুব খারাপ লাগল, ঘাসফুলের পতাকা লাগিয়ে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে হাসপাতালগুলোকে লাইসেন্স বাতিলের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। এটাই কি সোনার বাংলার অন্যতম উদাহরণ?”
ফিরহাদ হাকিমকেও দুষ্টু ভাই বলে কটাক্ষ করেন শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এমন মন্ত্রী এসেছেন যে মানুষের কাছে যেতে পারেন না। মিনি পাকিস্তান বলে এমন বিপদে পড়েছেন যে মুছতে মুছতে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে। বলতে হচ্ছে আমি পাকিস্তানের বিরোধী। ’
ব়্যালি শেষে শোভন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশান তোলেন। বলেন, ‘দিদি সততার প্রতীক। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই যাবতীয় কাজ হয়। এমনকী দুষ্টু ভাইয়েরা মেয়েদের সম্মান নিয়েও ছিনিমিনি খেলেন। এই অনুপ্রেরণা আর চলতে দেওয়া যায় না। ক্ষমতার অপব্যবহারের এবার শেষের সময় এসেছে।’