আমাদের ভারত, ১ এপ্রিল: বাংলাদেশের ছায়া এবার এপার বাংলাতেও। ওপারের চিন্ময়কৃষ্ণ মহারাজের মতো এপার বাংলাতেও হিরন্ময় গোস্বামী মহারাজের উপর হামলা হলো। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধরমপুর গ্রামে দুষ্কৃতীদের হামলায় গুরুতর জখম ও অসুস্থ এই সন্ন্যাসী। ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগবত পাঠক শ্রী হিরণ্ময় গোস্বামী মহারাজের ওপর জঘন্য হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। তিনি লিখেছেন, প্রাণঘাতী আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে সন্ন্যাসী হিরন্ময় গোস্বামীকে। প্রথমে গলায় ফাঁস লাগিয়ে, পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে আঘাত করা হয়েছে এবং তাঁর পবিত্র জটা বলপূর্বক কেটে ফেলা হয়েছে।
সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছেন, হিরন্ময় মহারাজের ভাগবত পাঠের সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পালিত কিছু জেহাদি দুষ্কৃতি দাবি করেছিল “ভারত মাতা কি জয়,” “হিন্দু সনাতন ধর্ম কি জয়,” “গৌ মাতা কি জয়” এবং “জয় শ্রী রাম”—এই স্লোগানগুলো উচ্চারণ করা যাবে না। কিন্তু এই অন্যায্য এবং অন্যায় নির্দেশ মানতে অস্বীকার করেন মহারাজ। আর তারপরেই মহারাজের উপর এই নৃশংস আক্রমণ হয়। সুকান্ত মজুমদার দাবি করেছেন, এই হামলা “চূড়ান্ত প্রতিহিংসামূলক এবং তৃণমূল কংগ্রেসের কদর্য ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির ফলশ্রুতি।” আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে, যা বাংলার হিন্দুদের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।”
সার্বিক ভাবে মহারাজের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। তিনি লিখেছেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং ভারতীয় জনতা পার্টি পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি কার্যকর্তা ওনার পাশে আছে। পশ্চিমবঙ্গের পঙ্গু প্রশাসন যদি আক্রমনকারী জেহাদিদের বিরুদ্ধে সত্ত্বর ব্যবস্থা না নেয়, আমরা তাঁর অপমানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত জবাব দেবো।”
অন্যদিকে এই ঘটনায় সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর উদাহরণ টেনে আনেন। হিরন্ময় মহারাজের উপর হামলা তীব্র নিন্দা করেছেন বিরোধী দলনেতা। দীর্ঘ পোস্টে শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও জিহাদিদের দাপাদাপি বেড়েছে।
তিনি লিখেছেন, “ওপারে প্রভু চিন্ময় আর এপারে প্রভু হিরন্ময়। বাংলাদেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সনাতন ধর্মের মানুষের ধর্মাচরণের স্বাধীনতার অধিকার দিনকে দিন সংকুচিত হচ্ছে। বাংলাদেশ যেমন জিহাদীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তেমনই পশ্চিমবঙ্গেও জিহাদীদের অবাধ বিচরণের অনুমতি দিয়ে রেখেছেন মাননীয়া। তাই এদের দাপাদাপিতে হিন্দুরা ধর্মাচরণ, পূজা- অর্চনা করতে বারংবার বাধা প্রাপ্ত হচ্ছে। মন্দিরে পুজোর প্যান্ডেলে হামলা হচ্ছে। হুমকির মুখে পড়ছেন আয়োজকরা। হিন্দুদের দোকানপাট, বাড়িঘর ভাঙ্গচুর হচ্ছে। লুটপাট হচ্ছে, সম্পত্তিতে অগ্নিসংযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এবার নবতম সংযোজন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মগুরুদের আক্রমণ করা।
তিনি আরো লিখেছেন, “রাত এগারোটায় পূজনীয় হিরন্ময় গোস্বামী মহারাজের উপর হামলা হয় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুরে ধরমপুর গ্রামে। ভাগবত কথা হওয়ার পর প্রসাদ গ্রহণ করে উনি নিত্যদিনের মতো একটু বাইরে হাঁটছিলেন। হঠাৎ দু’জন দুষ্কৃতী মহারাজের উপর অতর্কিত হামলা করে গলায় দড়ি দিয়ে চেপে ধরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। ওনার জটা কেটে দেওয়া হয়। মহারাজ এখন ঘাটাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার নিন্দা করে তিনি লেখেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করি ও প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি যত জলদি সম্ভব হিরন্ময় গোস্বামী মহারাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে। এক পাশে ওপার বাংলায় বিনা অপরাধে চিন্ময় কৃষ্ণদাস প্রভুকে চার মাস ধরে ইউনুস সরকার জেলের মধ্যে মিথ্যে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় বন্দি করে রেখেছে। আর এপার বাংলায় সন্ন্যাসীদের ওপর প্রাণঘাতী হামলা হচ্ছে। যাহা ইউনুস তাহাই মমতা।