হিন্দুদের বাংলাদেশ ত্যাগ, নেপথ্যের কারণ— কে কী বলেন?

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২১ অক্টোবর : বাংলাদেশে পুজোয় হামলা এবং মন্দিরে আক্রমণের ঘটনায় কি ওদেশের আতঙ্কিত হিন্দুদের অনেকে ফের দেশত্যাগী হবেন? প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। একঝলক তাকানো যাক কীভাবে কমেছে বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা। কারণ কী?


প্রদীপ ভট্টাচার্য
(কংগ্রেস নেতা, রাজ্যসভার সদস্য)।
১৯০১ থেকে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের যে দেশত্যাগ হয়েছে, তার মূল কারণ মূলত কলকাতার উন্নত সুযোগ-সুবিধা, মূলত ভালো মানের শিক্ষা-স্বাস্থ্য পাওয়ার আশায়। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের ডাকও হিন্দুদের অনেককে দেশত্যাগে ইন্ধন যুগিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের লেখা এবং জীবনীতেই দেখেছি হিন্দুরা পূর্ববঙ্গে রীতিমত নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। ধর্মীয় কারণে দেশত্যাগের বিষয়টি এসেছে দেশভাগের সময়। এখনও তা চলছে। তবে, একটা বড় আশা শেখ হাসিনা। দলের একাংশের বিরোধিতা সত্বেও তিনি যতটা সম্ভব কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মনে রাখতে হবে রাজাকাররা বাংলাদেশে এখনও নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েনি।


ডঃ পঙ্কজ কুমার রায়
(অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র চৌধুরী কলেজ)

১৮৯০ এ লালন ফকিরের মৃত্যুর দশ বছর পর ১৯০১ সালে বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৩৩%। আরও অর্ধ শতাব্দীর পর ১৯৪৭ এর খন্ডিত স্বাধীনতা অতিক্রম করে হিন্দু জনসংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২.৫%। ’৫২–এর ভাষা আন্দোলন কিম্বা ৭১–এর স্বাধীনতা সংগ্রামের পরও হিন্দু জনসংখ্যার ক্রমাবনতি রোধ করা সম্ভব হয়নি। তাই আজ হিন্দু জনসঃখ্যা ৮.৫% – তলানিতে এসে দাঁড়িয়েছে। দুর্গাপুজো দুর্গোৎসবে রূপান্তরিত হলেও দুর্গাপ্রতিমা, মণ্ডপ, মন্দির অথবা মানুষ ছলেবলে আক্রান্ত হয় প্রশাসনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ‘ধর্ম যার যার, পুজো সবার’ বলা সত্ত্বেও।


শত্রু সম্পত্তি আইন পরিবর্তিত হয়ে কায়েমি সম্পত্তি আইন বলবৎ হওয়া সত্ত্বেও অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। ধর্মান্ধতা, বিধর্মী নারীর প্রতি আসক্তি, পরসম্পত্তি ভোগের লালসা এবং ধর্মীয় জিঘাংসার বীজ বাংলাদেশের সমাজ জীবনের গভীরে পতিত। তালিবান অধ্যুষিত আফগানিস্তানে হিন্দু এয়ার লিফটিংয়ের অপেক্ষায় বসে থাকে। সিন্ধু সভ্যতার উৎস স্থলে হিন্দুরা বিলুপ্তির পথে, আর বাংলাদেশের হিন্দুরা ধ্বংসের শেষ সীমান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হিন্দুসহ সে দেশের প্রকৃত সংখ্যালঘু শরণার্থীদের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত করতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের শীঘ্র প্রয়োগ ভারতীয় সভ্যতার আবহমানতা বজায় রাখতে সমর্থ হবে।


ডঃ মোহিত রায়
(বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য, দলের উদ্বাস্তু-বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক)।

মানুষ জন্মভূমি ছাড়ে দুর্ভিক্ষে, গৃহযুদ্ধে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ও জীবিকার সন্ধানে। পূর্ববঙ্গ/ পূর্ব পাকিস্তান/ বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা জন্মভূমি ছেড়েছেন, এখনও ছাড়ছেন উপরোক্ত কোনও কারণে নয়। বাংলাদেশের ইসলামী সমাজের ধারাবাহিক নির্যাতন, সম্পত্তি দখল, দেবালয় ধ্বংস ও অপবিত্র করা, নারী ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি, ধর্মান্তরের হুমকীর কারণে হিন্দুরা জন্মভূমি ছাড়ছেন। এটি ইসলামী সমাজের জাতি বিতাড়ণের একটি চিরকালীন কর্মসূচি।

ডাঃ রথীন চক্রবর্তী
(বিশিষ্ট চিকিৎসক)

পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক প্রতিবাদ প্রত্যাশিত। একটি জিনিস খুব স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা কাশ্মীর, লাদাখ সীমান্ত এবং এখন বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়া মানুষের জন্য একটিও মোমবাতি মিছিল করেনি। একটি প্রতিবাদ অন্তত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হতে পারে এবং সাধারণভাবে কোনও ধর্মকে লক্ষ্য করে নয়। সেটাও হচ্ছে না। চট্টগ্রামে বিশাল জনতা তাদের শেষ আশ্রয় হিসাবে এত বিপুল সংখ্যায় বেরিয়ে আসে। এটা তাদের বেঁচে থাকার জন্য। দুর্ভাগা মানুষ। অন্তত তাদের জন্য প্রার্থনা করি।


দেবসদয় দত্ত
(প্রবীন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট)

এই সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। আমার মাতৃ পরিবার নোয়াখালীতে খুব খারাপভাবে কষ্ট পেয়েছে। শরণার্থী একজন মামা আমার দিদিমার সাথে দেখা করতে আসতেন এবং অবিরাম কাঁদতেন। পরে জানতে পারলাম তাঁর স্ত্রী এবং বড় মেয়ে দুজনকেই অপহরণ করা হয়েছে ধর্ষণের জন্য এবং তাদের কোনও খবর নেই। ছোটবেলায় এটা আমাকে প্রভাবিত করেছিল।


শুভেন্দু মজুমদার
(লেখক-গবেষক, প্রাক্তন অধ্যাপক)

বাংলাদেশ ছেড়ে হিন্দু বাঙালিরা তাঁদের চোদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন প্রাণের দায়ে। স্বাধীনতার পর নিজেদের সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে বাংলাদেশের সংবিধানে ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে সেই ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বদলে বাংলাদেশ নিজেকে ঐস্লামিক রাষ্ট্র বলে দাবি করেছে। কিন্তু শুধু এই সাংবিধানিক ঘোষণাটাই সব নয়। সংখ্যালঘু হিন্দু জেহাদিদের ভয়ে নিজেদের ভিটেমাটি জলের দরে বেচে দিয়ে এদেশে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু মাইনরিটি হিন্দুরা নয় , মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রচুর লোকজনও অবৈধভাবে এদেশে ঢুকছে। কিছু পেটের দায়ে, কিছু বিভিন্ন নিষিদ্ধ ঐস্লামিক উগ্রপন্থী সংগঠনের মদতে। বিশ্ব জুড়ে প্যান ঐস্লামিক শাসন জারি করাটা এদের কাছে ধর্মীয় নির্দেশ বলে গণ্য হয়। তবে বাংলাদেশে এই জেহাদিদের পাশাপাশি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষরাও রয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে এই জেহাদিদের বিরুদ্ধে একটা বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও সেক্যুলার ফ্রন্ট গঠন খুব জরুরী।


ডাঃ সুমিত সুর
(আয়ুর্বেদ চিকিৎসক)

অত্যাচার, নিপীড়ন, নিরাপত্তাহীনতা (বিশেষত মেয়েদের), কোনঠাসা করে রাখা, হিন্দু দেখলে সকল সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া, ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গায় কথার মাধ্যমে আঘাত, সম্পদ আত্মসাৎ, “ভারতে নাকি মুসলমানের উপর খুব অত্যাচার চলে” তাই ওখানে হিন্দুদের উপর অত্যাচার করা প্রয়োজন— ইত্যাদি অপপ্রচারে অত্যাচারিত হয়ে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে।


নিরঞ্জন রায়
(প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক জগদ্বন্ধু হাইস্কুল-প্রভাতী শাখা)

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতের বিভাজন। আসলে ধর্মের নামে দেশভাগ। আর ওই সময় থেকেই পূর্ব পাকিস্তান বা অধুনা বাংলাদেশের হিন্দুরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে পরিচিত হয়। ফলে হিন্দুদের জীবনযাপন, ব্যবসা বাণিজ্য, বিষয় সম্পত্তি সব নিরাপত্তাহীন হয়ে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনা ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর বিনষ্ট হয়। রাষ্ট্রপতি এরশাদের শাসনকালে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে গৃহীত হয়। ফলে হিন্দুদের ধর্মীয় স্বাধীনতা অনেকাংশেই কমে যায়। বাংলাদেশের প্রধান দুটি দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শাসনকালে সরকারের অর্থ সাহায্যে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। ফলে দেশের উগ্র মৌলবাদী সংগঠন যেমন জামাতে ইসলাম, হেফাজতে ইসলামের মতো সাম্প্রদায়িক দলের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে হিন্দুরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দেশ ত্যাগ করে। ১৯৯২ সালে ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস কান্ডের পর সারা বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির-দেবালয়, বাড়ি ঘর, সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়। অবাধে লুটতরাজ ও অগ্নি সংযোগ চলে। বহু হিন্দু পরিবার তখন ওপার থেকে এপারে চলে আসেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে সংহতি ও ঐক্যবদ্ধতার অভাবে তাঁরা মৌলবাদীদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কোনও প্রকার প্রতিবাদ না করেই নীরবে দেশ-ত্যাগ করেছেন।


সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়,
(চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মিডিয়া কনসালট্যান্ট)

নিরাপত্তার অভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দুরা নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে দিয়ে ভিনদেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের মানুষ হবার কারণে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মৌলবাদী মুসলমানরা অমানুষিক অত্যাচার করে চলেছে। কট্টর মৌলবাদীদের ভয়ে প্রাণ ও মান বাঁচিয়ে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার আশায় ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যদেশে চলে যাচ্ছেন। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তা পেলেও মুসলিম দেশে অন্য কোনও ধর্মের মানুষকে ন্যূনতম মর্যাদা দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা তা প্রমাণ করলেন।


ডঃ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
(জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সংঘের রাজ্য কার্য নির্বাহী কমিটির প্রাক্তন সদস্য)

কেন আগামী দুই-এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হিন্দু শূন্য হতে চলেছে সে প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে অতীত ইতিহাসের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ থেকে স্বামী বিবেকানন্দ, শরৎচন্দ্র থেকে বঙ্কিম চন্দ্র সকলেই বারংবার সতর্ক করেছিলেন। যে কারনে পারস্য পার্শি শূন্য, ইন্দোনেশিয়া হিন্দু শূন্য বা আরও পূর্বে আরব উপদ্বীপ মূর্তি পূজক জাতিশূন্য হয়েছিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হবে না। হলে ইতিহাস ও সেই ঘাতকদের ধর্মগ্রন্থ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সেই ইহুদি গবেষক, সেই কারণেই এক দশক আগে মন্তব্য করেছিলেন, “মিলিয়ন কিলড্, মিলিয়ন এট রিস্ক, বাট বিলিয়ন সাইলেন্ট।”


গৌতম ভট্টাচার্য
(প্রাক্তন চিফ পোস্ট মাস্টার জেনারেল)

দেশভাগের আগে অবিভক্ত বাংলায় কলকাতাই ছিল একমাত্র উল্লেখযোগ্য শহর যেখানে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য প্রসার হয়। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা কলকাতায় লেখাপড়া বা চাকরিবাকরি করতে এসে থেকে যেতেন। সংখ্যার বিচারে হিন্দুদের কলকাতায় আসার সংখ্যাটাই বেশী ছিল যেহেতু বাঙালী মুসলমান সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিস্তার তখনো তেমনভাবে হয়নি- তাই ১৯০১ এর পরে সমস্ত সেন্সাসেই পূর্ববঙ্গে হিন্দুর শতাংশ সামান্য হলেও কমতে থাকে।

আরও পড়ুন

ইদে কটা মসজিদে হামলা হয়েছে? পরমব্রতকে পাল্টা দিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার

আরও পড়ুন

ভারতবর্ষে হিন্দু ধর্ম সংস্কৃতি আছে বলেই এখানে সেক্যুলারিজমের গল্প শোনা যায়, দাবি সুকান্ত মজুমদারের

দেশভাগের পর অবশ্য ধর্মীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ হিন্দু সাত-পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আশ্রয় নিতে থাকে। দুঃখের বিষয় এটাই যে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবার পরেও কিন্তু হিন্দুদের এই দুর্গতির অবসান হয়নি। পূর্ব পাকিস্তান বা তৎপরবর্তী বাংলাদেশে হিন্দুদের এই অসহায় অবস্থা বুঝতে গেলে দেশভাগের সময়কার বাংলার রাজনীতিটা বুঝতে হবে। ১৯৪৬এর প্রভিন্সিয়াল নির্বাচনে বাংলায় মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট ১১৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ১১৩টিই জেতে মুসলীম লীগ। অন্যদিকে সাধারণের জন্য নির্দিষ্ট ৮৬টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৮টি জেতে জাতীয় কংগ্রেস। ফলে বাংলায় সুরাবর্দির নেতৃত্বে মুসলীম লীগ সরকার গঠন করে। পরের বছর দেশভাগ হলে অবিভক্ত বাংলার ১৪১টি কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত হয় পূর্ব পাকিস্তানে যার মধ্যে ৩৫ জন বিধায়ক ছিল জাতীয় কংগ্রেসের। কংগ্রেসের এই নেতাদের প্রায় সকলেই দেশভাগের স্বল্পকালের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অ-মুসলমান অধিবাসীরা রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দিশাহারা হয়ে যায়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এক ভয়ঙ্কর রাষ্ট্রীয় বিপর্যয়ের পর নিজেদের সংগঠিত করে ধর্মীয় সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার কোনও শক্তিই তাদের ছিল না। আজও সেই শক্তি তারা অর্জন করে উঠতে পারেনি।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের উগ্র মৌলবাদী ভাবনা সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে ভাবলে ভুল ভাববেন, হিন্দুদের প্রতিবাদে শামিল হবার ডাক দিলেন সুকান্ত মজুমদার

দেশভাগের পর জাতীয় কংগ্রেস নবগঠিত পাকিস্তানে তাদের সংগঠন লুপ্ত করে দেয়। এই সিদ্ধান্ত পুর্ব পাকিস্তানের অ-মুসলীম জনসাধারণের রাজনৈতিক মেরুদণ্ড চুরমার করে দেয়। আজও বাংলাদেশে প্রায় দেড়কোটি হিন্দু এর মাসুল দিয়ে চলছে। আমার মনে হয় জাতীয় কংগ্রেসের তখনকার ওই সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের সংখ্যালঘু জনসাধারণের ওপর ছিল এক চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতা। ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলীম লীগ কিন্তু স্বাধীন ভারতেও বিদ্যমান আছে!!


সংঘমিত্রা চৌধুরী
(বিজেপি রাজ্য কমিটির সম্পাদক)

কাঁটা তারের বেড়ার কথা আমরা শুনেছি, দেখিনি। ঠাকুর্দার মুখে, ঠাকুমার মুখে। সালটা ছিল ১৯৪৬। বাবা তখন খুব ছোট। দু’একটা গয়না, যা হাতের কাছে ছিল মুড়ির কৌটার মধ্যে লুকিয়ে আনবে ভেবে ছিলেন ঠাকুমা। কিন্তু পদ্মা পার হয়ার সময় তাও ওরা (মুসলমানরা) কেড়ে নেয়। বড় আর মেজ পিসিকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতায় আমার দাদুভাই ওরফে গোপাল ডাক্তার। ডাক্তারবাবুর মেয়ে বলেই এক মুসলমান পরিবার সেই সাহায্য করেছিল। আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটে ছিল ঢাকার তাজপুর গ্রাম। তখন নোয়াখালী, চট্টগ্রামে আগুন জ্বলছে।
‘দ্যাশের বাড়ির’ সকল সম্পত্তি, বিঘা বিঘা জমি, ফলের বাগান, গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ সব এক কথায় ছেড়ে ওরা চলে এসেছিলেন প্রাণ বাঁচাতে। সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ১৯৭১-এ। তার পরেও অত্যাচার থেমে থাকেনি। সেই ট্রাডিশন আজও চলছে। একই ভাবে ধর্মান্তর প্রক্রিয়া চলেছে তলে তলে। মুজিবকে ওরা পছন্দ করে না। পছন্দ করে না তার মেয়ে শেখ হাসিনাকেও। এদেরও হঠাতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে খালেদা জিয়াকে। হিন্দুদের সমর্থন আছে হাসিনার ওপর। তাই, মারো, কাটো, ধর্ষণ করে শেষ করো ওদের। জ্বালিয়ে দাও ওদের ঘরবাড়ি, মঠমন্দির। অনেক বড় ষড়যন্ত্র এর পেছনে। আজও কাজ করছে অন্যান্য মৌলবাদি রাষ্ট্রশক্তি। বাংলাদেশের কোটিখানেক হিন্দুর রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে গত এক সপ্তাহের ঘটনা। ওরা যাবেন কোথায়? ভারতবর্ষই কি তাঁদের শেষ ভরসা?


ডঃ ভারতী সেন
(শিক্ষাবিদ, লেখিকা)

ধর্মকে যখন রাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে তখন ধর্ম সমৃদ্ধ হয় না। রাজনীতি আর ধর্ম যতদিন মিশে থাকবে ততদিন সব দেশেই হানাহানি চলবে। বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে পাকিস্তান থেকে আলাদা হল বাংলাদেশ যদিও ধর্ম ছিল এক। আজ আমরা এক ভাষা হওয়া সত্বেও একে অন্যকে মারছি অন্য ধর্ম বলে।


মহম্মদ ফজলুল করিম
(অবরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ-আধিকারিক)

কেন হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে চলে এলেন বা আসছেন? কারণ, ভবিষ্যতে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অনিশ্চিয়তার আতঙ্ক ও অস্থিরতা! এখন আসছেন কিনা জানি না, তবে “জাতের নামে বজ্জাতি” উভয় রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ! “মূর্খ দের” দ্বারা সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে বা ধর্মের নামে চলছে চলবে গোছের চিরকালীন ব্যবস্থা! সময় মতো কারোই শাস্তি যে হয় না! এ ক্ষেত্রে, ওখানকার হিন্দু ভাই বোনেরা পরিকল্পিত conspiracy র শিকার, বলা যায় ওই / এই দেশটাও ! তথাকথিত মুসলমানরা যে অত্যাচার করেছে তা মোটেই “ইসলাম” বা মুসলমানদের কাজ নয়। বরং, ইসলাম অমুসলমানদের জীবন- সম্পদ-সম্মান ইত্যাদি রক্ষার দায়িত্ব নিতে শেখায়।… এই ঘৃণ্য ঘটনার নিন্দা করার কোনো ভাষা নেই ! লজ্জায় নিজের মাথাও নীচু হয়ে গেল….!!
***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *