“পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হওয়া ২ লক্ষ মা-বোন এবং যুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ লোকের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার হার বিবেচনায় অর্ধেকের বেশি ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু।”
—————————————————————
মনীন্দ্র কুমার নাথ চাকরি করতেন উঁচু পদে। পাশাপাশি ১৯৮৮ সাল থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কথা বলার সংগঠন ‘মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি’, ‘বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’ ও ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর সাথে কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটি’-র সভাপতি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ’-এর সহ-সভাপতি ও ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
——————————————————
অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ৪ জুন:
প্রশ্ন-১) আপনার সঙ্গে পূর্ববঙ্গের সম্পর্কটা ঠিক কীরকম?
উত্তর- ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে আমার জন্ম। ১৯৭০ সালে জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর জেলার পালপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে আমার কর্মজীবন শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে উচ্চ শিক্ষার লক্ষ্যে ঢাকায় চলে আসি। পরবর্তীতে ৩৪ বছর বেসরকারি ব্যাংকে চাকরী শেষ করে ২০১৭ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করি।
প্রশ্ন ২— তাহলে তো প্রায় আজন্ম এখানে হিন্দুদের অবস্থা পরিবর্তনের সাক্ষী আপনি?
উত্তর— অবশ্যই! স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময় আমি এবং আমার বড় ভাই ভারতে চলে যাই। বড় ভাই ভারতের দেরাদুনে ট্রেনিং শেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। আমি যুদ্ধের সময়ে আসামের নওগাঁতে শরণার্থী হিসেবে ছিলাম। পাকিস্তানী হানাদারদের দোসর রাজাকাররা আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বাবা দীনেশ চন্দ্র নাথ এবং বাবার বড় ভগ্নীপতি সিনিয়র আইনজীবী নরেন্দ্র উকিলকে ধরে নিয়ে বেগমগঞ্জে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শিবিরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। আজ অবধি বাবার মৃতদেহের কোনও সন্ধান পাইনি।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫০-এর দাঙ্গা আমি দেখিনি, তবে ১৯৬৪’র দাঙ্গা এবং ১৯৬৫’র পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ের পর দেশের পরিস্থিতি কিছুটা এখনো মনে রয়েছে। জন্মভুমি ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকেই পাড়ি জমিয়েছে ভারতে। ১৯৪১’র তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ৩০% অমুসলিম জনসংখ্যা ১৯৬১ সালে ১৯.৫৭% এ দাঁড়ায়। তৎপরবর্তীতে ৬৪’র দাঙ্গা, ১৯৬৫ পাকভারত যুদ্ধ, ১৯৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের ফলশ্রুতিতে দেশত্যাগের কারনে বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে জনগণনায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুর হার নেমে এসেছে ১৪.৬%। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ৯৮% হিন্দু এবং বাকীরা খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী।
ছবি: মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র সাথে মনীন্দ্র কুমার নাথ।
প্রশ্ন ৩) পূর্ববঙ্গের হিন্দু নিধনের ব্যাপারটা কোন সময়ে, কীভাবে আপনার মনে দাগ কেটেছিল?
উত্তর— পাক-ভারত যুদ্ধ পরবর্তী ভারতে আশ্রয় নেওয়া জনগোষ্ঠীর এদেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ ঘোষণা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সংকোচন নীতি গ্রহণের কারনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশাল অংশ দেশত্যাগ করে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দুদের বিতাড়নের এই ধরনের একটি কালো আইন প্রশাসনের ছত্রছায়ায় পরিচালিত হতে থাকে।
প্রশ্ন ৪) কেন সাবেক পূর্ববঙ্গ এবং পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা এভাবে কমে গেল?
উত্তর— সাবেক পূর্ববঙ্গের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মুসলমানদের মধ্যে উগ্রবাদী ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সবসময়ই বিশেষ করে হিন্দুদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন চালাতো। প্রশাসনিকভাবে উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মদত দেওয়া হত, যার ফলশ্রুতিতে তৎকালীন হিন্দু জমিদার বা প্রতিপত্তি ও প্রভাবশালী পরিবারসমূহ ভারতে পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ভারতে ব্রিটিশ শাসন অবসানের পূর্বে অভিবক্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলিম জনগণের পারিবারিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর ঘৃণা এমন জায়গায় পৌঁছে ছিল, যার ফলশ্রুতিতে পূর্ব ভারতের ইতিহাসে কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক হত্যাকান্ড ‘দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’ এ হাজার হাজার মানুয়ের প্রাণ গেল দাঙ্গায়।
ছবি: বাংলাদেশের তিন মন্ত্রী ও ভারতীয় হাই কমিশনারের সাথে মঞ্চে মনীন্দ্র কুমার নাথ।
কলকাতা দাঙ্গার পরপরই শুরু হয় তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বর্তমান নোয়াখালী জেলার রায়পুর, বেগমগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর এবং তৎকালীন বৃহত্তর কুমিল্লার বর্তমান চাঁদপুর, চৌদ্দগ্রাম, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ ও লাকসাম এলাকা জুড়ে। এ সকল এলাকাসমূহে তৎকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর হামলা, হিন্দু নারীদের ধর্ষণ, হিন্দু নারী-পুরুষদের জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয় দাঙ্গকালীন সময়ে। তখন দাঙ্গাঞ্চল পরিদর্শনে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। তিনি ৩ (তিন) মাস ধরে পায়ে হেঁটে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমূহ পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু মুসলমানের ভিতর ভাতৃত্ব ও মানবিকতার বোধ জাগরণের মাধ্যমে সহ-অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন।
প্রশ্ন ৫) ওই পরিস্থিতিতে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর— আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীকে। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী মানবতাবাদী আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করার জন্য সর্বপ্রকার সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন ৬) মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে পূর্বপাকিস্তানে হিন্দুদের অবস্থা কীরকম ছিল?
উত্তর— মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এবং তার পূর্ববর্তী সময়ে তখনকার হিন্দুদের অবস্থা বিভিন্ন দিক থেকে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে। অত্যাচার, নির্যাতন ও প্রশাসনের বৈরী আচারণে দিনের পর দিন হিন্দুদের মনোবল ভেঙে পড়তে শুরু করে। তা সত্ত্বেও যেহেতু পূর্ব পুরুষের জন্মস্থান এবং মাতৃভূমি সে বিবেচনায় সকল কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেও জন্মভূমিতে বসবাস করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের প্রথম প্রকৃত বিরোধী দল হিসেবে আওয়ামী মুসলীম লীগ আত্মপ্রকাশ করে। জন্মলগ্নে এই দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। দলীয় মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণের মাধ্যমে ১৯৫৫ সালে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে “পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ” নামকরণ করা হয়। অন্যদিকে হিন্দুরা ভেবেছিল পাকিস্তানের বৈষম্য ও বঞ্চনার হাত থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মানবিক জীবন-যাপন নিশ্চিত হলে ও স্বায়ত্ব শাসনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত হওযার মাধ্যমে পাকিস্তানি দুঃশাসন থেকে মুক্ত হলে এ দেশে সম্প্রদায়গত হানাহানী কমে যাবে। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের লাহোরে আওয়ামী লীগ ৬ দফা দাবী পেশ করেন যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ব শাসন।
ছবি: হরিজন ও তেলুগু সুইপার কলোনীর পরিবারদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে।
প্রশ্ন ৭) কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কি ওপার থেকে এপারে আসার ঢল অব্যাহত রয়ে গেছে?
এখানে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা সকল বৈষম্য বঞ্চনাকে ভুলে গিয়ে এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এদেশ থেকে প্রায় ১ কোটি লোক ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল যার মধ্যে ৮০% এর অধিক ছিল ধর্মীয় সংখ্যালঘু। অন্যদিকে পাকিস্তানি হানাদার কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হওয়া ২ লক্ষ মা-বোন এবং যুদ্ধে নিহত ৩০ লক্ষ লোকের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার হার বিবেচনায় অর্ধেকের বেশি ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু।
প্রশ্ন ৮) শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিল বাংলাদেশের তথাকথিত হিন্দু নির্যাতন?
উত্তর— স্বাধীনতার পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের পর এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নেমে আসে আর এক বিভীষিকাময় অধ্যায়। ১৯৭৯ সালে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত অসাম্প্রদায়িক সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করে রাষ্ট্রের ৪ (চার) মূল নীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে “বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম” সংযোজন করে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানে সাম্প্রদায়িকতাকে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে যুক্ত করে দেশ পরিচালনার করেন এবং তৎপরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মো: এরশাদ কর্তৃক রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে এ দেশের ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ২য় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করেছে। সংবিধানে এ সকল সংশোধনী আনার ফলে দেশের প্রশাসনিক কর্মকান্ড সহ সকল কর্মকান্ডে সাম্প্রদায়িক আচার-আচরণ চলতে থাকায় এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ক্রমান্বয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয় এবং যা এখনও চলছে।
ছবি: দাবি আদায়ে জন্য মশাল মিছিলে।
প্রশ্ন ৯) বিএনপির চেয়ে আওয়ামি লীগ বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে কি বেশি আদরনীয় নয়?
উত্তর— আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বকারী দল এবং ১৯৭২ সালে রচিত অসাম্প্রদায়িক সংবিধানের ধারক ও বাহক হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। অন্যদিকে ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া বিএনপি ১৯৭৯ সালে সংবিধান থেকে মূল ৪(চার) নীতির অন্যতম নীতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে এদেশে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছে। বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করছি, স্বাধীনতায় নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা, জায়গা-জমি জোরপূর্বক দখল, মেয়েদের ধর্মান্তরিতকরণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অবমাননার পোস্টের অজুহাত এনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে হামলা অব্যহত রয়েছে।
প্রশ্ন ১০) বিজেপি সরকার কেন্দ্রে আসার পরেও কেন বাংলাদেশের হিন্দুরা যথেষ্ঠ মনোবল পেলেন না?
উত্তর— স্বাধীনতা যুদ্ধে এদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবদান কখনও ভোলার নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতায় ভারত পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এ দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা জন্মভূমিতে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থায় স্বাধীনভাবে বসবাস করবে এটাই স্বাভাবিক।
ভারত মানবিক মূল্যবোধকে ধারন করে এদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু পরিবারের অসহায় লোকজনদের আশ্রয় দিয়েছে, সে জন্য ভারত সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এ দেশের হিন্দুরা অত্যাচারের কারণে অন্যত্র চলে যাওয়ায় হিন্দুদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
মৌলবাদী সংগঠনসমূহ ও ভূ-সম্পদ অপহরণকারীরা এ ধরনের অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে এ দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করছে। এখানে উল্লেখ করতে চাই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা যদি আমরা ধারন করতে না পারি ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা দায়ী থাকব। অন্যদিকে, তা পার্শ্ববর্তী দেশেও প্রভাব বিস্তার করবে। ভারত সরকারেরও এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে এদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়ে জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে অনুপ্রাণিত হয়। এই সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশের সকল প্রকার উন্নয়ন ও সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে এদেশের সংখ্যালঘুরা সম্পৃক্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
প্রশ্ন ১১) বাংলাদেশে হিন্দুদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার অনুমান কী?
উত্তর— এদেশের উগ্রবাদী ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী বাঙালির বাঙালীয়ানাকে হিন্দু কালচার বলে সকল কিছুকে মুসলিমীকরণের মানসিকতা প্রচন্ডভাবে লক্ষ্যণীয়। পাঠ্য পুস্তক থেকে একের পর এক বাঙালি সংস্কৃতিকে হিন্দুয়ানী বলে বিশ্বনন্দিত মানবতাবাদী লেখকদের লেখা গল্প ও কবিতা বাদ দিয়ে শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িককরণ করা হচ্ছে, যা বাংলা ভাষা-ভাষীদের জন্য আত্মঘাতী।
***