আমাদের ভারত, ১১ ডিসেম্বর: বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু এবং মডারেট মুসলিমদের গণহত্যার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেই প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল অখিল ভারত হিন্দুমহাসভা। দলের রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে একদিকে তারা যেমন ভারতে চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশিদের সামাজিকভাবে বয়কট করার বার্তা দিয়েছে, বাংলাদেশের হাই কমিশনে ডেপুটেশন জমা দিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে, প্রকাশ্য রাস্তায় এবং মেট্রো স্টেশনগুলির সামনে বাংলাদেশি কোম্পানির খাদ্যবস্তু এবং পোশাক আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেই রকম আজ তারা আরো এক ধাপ এগিয়ে হিন্দুমহাসভার বিশিষ্ট আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত শাখা সংগঠন “ন্যায়বিচার মঞ্চ” ইন্টারন্যাশানাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসকনের পক্ষে নিঃশুল্ক আইনি লড়াইয়ের প্রস্তাব দিলো ইসকন কর্তৃপক্ষকে।
ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য, চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে যে অন্যায় ভাবে আটক করা হয়েছে তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও লজ্জা দেয়। শুধু তাই নয়, সারা পৃথিবীতে কৃষ্ণের বাণী প্রচার এবং সমাজসেবা করার জন্য প্রসিদ্ধ আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ইসকন যেভাবে কাজ করে আসছে তার পরেও তাদের সমাজের ক্যান্সার বলে চিহ্নিত করে প্রকাশ্যে গণহত্যা করার হুমকি দিচ্ছে ইসলামিক মৌলবাদী সন্ত্রাসীরা। আর সেটা দেখে বাংলাদেশের তথাকথিত নপুংসক অন্তর্বর্তী সরকার তাদের আরো উৎসাহিত করছে এবং একই ভাষায় কথা বলছে, এর থেকেই প্রমাণিত হয় বাংলাদেশে গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। সারা দেশটাই নিয়ন্ত্রণ করছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। শুধু তাই নয়, সরকারি আমলা এবং বিএনপি নেতারা হুঙ্কার দিচ্ছে কলকাতা, বাংলা, বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা সহ উত্তরপূর্ব ভারতের সাতটি রাজ্য দখল করে নেওয়ার। এটা সন্ত্রাসবাদীদের “গাজবা ই হিন্দ” নামক সন্ত্রাসেরই অংশ। এই বিষয়কে লঘু করে দেখা মূর্খামি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ের উপরই আমাদের শ্রদ্ধা এবং আস্থা রয়েছে, কিন্তু এই বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চুপ রয়েছেন। আমরা ভারত সরকারের কাছ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি সম্ভবত ভারতের অতিরিক্ত সহনশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং তোষণ মূলক বৈদেশিক নীতির জন্যই বৈদেশিক শক্তি উগ্রতা দেখানোর সুযোগ পায় এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ।
আজ হিন্দু মহাসভার অফিস সেক্রেটারি অনামিকা মন্ডল বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে শিশু ও মহিলাদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে তা এক কথায় মানবতার লজ্জা। ক্ষমা পরম ধর্ম হলেও ধর্ম রক্ষায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই প্রমাণ দিয়েছেন অস্ত্র ধারণ করা প্রয়োজন।
মহিলা মোর্চার সদস্যা প্রজ্ঞা ভারতীর বক্তব্য, আমরা কোনো মূল্যেই আর অত্যাচার সহ্য করতে আগ্রহী নই। প্রয়োজনে প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ নেওয়া প্রয়োজন।
হিন্দু মহাসভার আইনি উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট দীনেশ পানি বলেন, যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ব্যক্তিগত ভাবে যাওয়া যায় না তাই সাংগঠনিক ভাবেই হিন্দু মহাসভা ইসকনের সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশে ইসকনের পাশে দাঁড়াতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে মানুষের নিরাপত্তা ও ধর্মাচরণের অধিকার, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আর্টিকেলের আঠেরো নম্বর ধারা এবং উনিশ নম্বর ধারা লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেই আমরা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে কেস করতে বাধ্য হচ্ছি। ইসকনের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ আজকের কর্মসূচির জন্য অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীকে আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।