সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৫ ডিসেম্বর: ১৯৯০ সালে কলকাতার এক বহুতলে ঘটে যাওয়া হেতাল পারেখ খুনের মামলার পুনর্বিচারের বিচারের দাবিতে সোচ্চার ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় পুনর্বিচার মঞ্চ। এরজন্য শুরু হয়েছে গণস্বাক্ষর অভিযান।
২০০৪ সালে কলকাতার হেতাল পারেখ মামলা ঘিরে সারা দেশে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সেই মামলায় ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসি হয়। কিন্তু তিনি দোষী কি না সে বিষয়ে নানা সন্দেহ প্রকাশ হতে থাকে। ধনঞ্জয়ের বাড়ি বাঁকুড়ার ছাতনা থানার কুলুডিহি গ্রামে। ছাতনার নাগরিক সমাজ মনে করে কোনও প্রভাবশালীকে বাঁচাতে হত দরিদ্র পরিবারের এক নৈশ প্রহরী ধনঞ্জয়কে অপরাধী করে ফাঁসি কাঠে চড়ানো হয়। তাই এই মামলার পুনর্বিচার প্রয়োজন।আসল সত্য প্রকাশিত হোক। এই দাবিতে সম্প্রতি গঠিত হয়েছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় পুনর্বিচার মঞ্চ।
রবিবার এই মামলার পুনর্বিচারের দাবিতে ধনঞ্জয়ের জন্মভূমি ছাতনা থেকে গণ স্বাক্ষর অভিযান শুরু করল এই মঞ্চ। এদিন সকালে বৈষ্ণব কবি বড়ু চন্ডীদাসের আরাধ্যা দেবী বাসুলি মন্দিরে পুজো দিয়ে এই স্বাক্ষর অভিযান শুরু হয়। আগামী একমাস রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই স্বাক্ষর অভিযান কর্মসূচি চলবে। তারপর সেই চিঠি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন মঞ্চের কর্মকর্তারা।
এদিন এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কমিটির কনভেনার ড: চন্দ্রচূড় গোস্বামী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দীনেশ পানি, রাজ্যের কো-কনভেনর জীবন চক্রবর্তী, জেলা যুগ্ম কনভেনর অশোক বিদ, দুর্গাদাস চট্টোপাধ্যায় সহ বিশিষ্ট নাগরিকরা।
ড: চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেন, ২০০৪ সালে স্বাধীনতা দিবসের আগের দিন ১৪ আগস্ট ভোর রাতে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়কে অন্যায় ভাবে ফাঁসি দেওয়া হয়। সেই সময় ছাতনার নাগরিক কমিটি আলিপুর জেলের সামনে বসে থেকেও তা আটকাতে পারেননি। সেই কমিটিও আজ অবলুপ্ত। আমরা মনে করি ধনঞ্জয় ছাড়াও সেদিনের নির্যাতিতা হেতাল পারেখ সঠিক বিচার পাননি। তাই মামলা রি-ওপেন করে বিচার শুরু হোক। তাদের এই মঞ্চে তৎকালীন ফাঁসুড়ে নাটা মল্লিকের দুই পুত্র তারকনাথ মল্লিক ও মহাদেব মল্লিকও সামিল হয়েছেন। এনারা সকলেই মনে করেন ধনঞ্জয় অন্যায়ের শিকার হয়েছেন। মামলা রি-ওপেন করার দাবি নিয়ে গত সেপ্টেম্বর মাসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মঞ্চের কর্তারা।
মঞ্চের কো-কনভেনর জীবন চক্রবর্তী বলেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী- আইনমন্ত্রীকে ডেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেন। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বিষয়টি দেখবেন বলে কথা দিয়েছেন। তারা চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বিজেপির রাহুল সিনহা সহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র
মোদী’কেও। কিন্তু তারপর তিনমাস কেটে গেছে। কোনো সদর্থক ভূমিকা না দেখে তারা রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানান জীবন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আগামী একমাস রাজ্যের প্রতিটি জেলায় এই গণস্বাক্ষর অভিযান চলবে। তারপর তা রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দিয়ে মামলার পুনর্বিচারের আবেদন জানাবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে কলকাতার একটি অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে খুনের পর ধর্ষিত হন হেতাল পারেখ নামে এক নাবালিকা। ওই অ্যাপার্টমেন্টের প্রহরী ছিলেন ছাতনার বাসিন্দা ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। হতদরিদ্র এই যুবকের আইনি লড়াই করার মত ক্ষমতা ছিল না। ১৪ বছর জেলে থাকা অবস্থায় ২০০৪ সালে তার ফাঁসির আদেশ হয়। সেই সময় রাজ্যের একাংশ দাবি করেছিলেন ধনঞ্জয় হয়তো নির্দোষ। কোনো প্রভাবশালীকে বাঁচাতে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এনিয়ে যখন জনমত তৈরি হচ্ছিল তখন ধনঞ্জয়ের ফাঁসি অবিলম্বে কার্যকর করতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন। তাই অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় ধনঞ্জয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে মীরা ভট্টাচার্য কেন তৎপর হয়েছিলেন।
ধনঞ্জয়কে আর ফিরে পাওয়া না গেলেও ধনঞ্জয় পুনর্বিচার মঞ্চ মনে করে মামলাটির পুনর্বিচার হলে সত্য উদ্ঘাটনের পাশাপাশি পাশবিকতার শিকার নির্যাতিতাও সঠিক বিচার পাবে।