স্বামী প্রৌঢ়ানন্দ
আমাদের ভারত, ২ জানুয়ারি: তীর্থের দেবতার ডাক ভক্তকে ঘরছাড়া করে। ভক্তকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বিলিয়ে দেন অপার্থিব ভালোবাসা। এমন ভাবেই আমার সুযোগ হয়েছিল গঙ্গোত্রী ধাম দর্শনের, তাও প্রায় আজ থেকে ২৫ বৎসর আগে।
সেই সময় হরিদ্বারে বসেছে পূর্ন কুম্ভমেলা। এই সুযোগ কিছুতেই ছাড়া যাবে না। কিন্তু যাব বললেই তো আর যাওয়া যায় না, তার জন্য দরকার পাথেয়। তখন আমার কর্মজীবন সবে শুরু, তাই পকেট আমার গড়ের মাঠ, আর আমিও নিশ্চিন্তে সেই মাঠের বিশুদ্ধ বাতাস সেবন করে চলেছি।কিন্তু তীর্থের দেবতার ডাক যখন এসেছে তখন উপায়ও একটা বেড়িয়ে গেল। দুজন প্রৌঢ় মানুষ আমাকে ধরে বসলেন তাদের কুম্ভ স্নান করাতে নিয়ে যেতে হবে। আমার সমস্ত খরচ-খরচা তাদের। আমার মতন সদ্য পাশ করা এক হোমিওপ্যাথি ডাক্তার সঙ্গে গেলে তাদের নাকি মনোবল বাড়বে। আমি সঙ্গে গেলে তাদের মনোবল যে কতটা বাড়বে তা আমি জানি না কিন্তু আমার মনোবল যে কয়েকশো গুন বেড়ে গেল এব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।
কিন্তু এরপরও বিপদ, এই কুম্ভমেলার সময় ট্রেনের টিকিট পাব কি করে? তখন এখনকার মতন অনলাইনে টিকিট বুকিং করার ব্যবস্থা ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটি স্টেশনে রিজার্ভেসনের ব্যবস্থা ছিল, কিন্তু তাও টিকিট পাওয়া ছিল অত্যন্ত দুষ্কর। টিকিটের চিন্তা মনের মধ্যে যখন লাট্টুর মতন ঘুরপাক খাচ্ছে, ঠিক তখনই আমার কাছে রেলের একজন বড় অফিসার আমার ডাক্তার খানায় এলেন। রোগের কথা দুই একটি হবার পরেই তাল বুঝে টিকিটের কথা পাড়তেই উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আমাদের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিলেন, তবে সরাসরি নয়, কাটা টিকিট। অমৃতসর মেলে লখ্নৌ পর্যন্ত, আবার সেখান থেকে দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার।যাইহোক টিকিটতো পাওয়া গেছে, তাই জয়মাতা গঙ্গে বলে আমার সেই দুজন প্রৌঢ় সহযাত্রীকে নিয়ে নির্দিষ্ট দিনে ট্রেনে বসে পড়লাম।
“দেবী সুরেশ্বরী ভগবতী গঙ্গে। ত্রিভুবনতারিণি তরল তরঙ্গে।।”