সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৮ ফেব্রুয়ারি: পর্দা টাঙিয়ে দোকানের আড়ালে, থানা ও আদালত চত্বরে চলছে বেআইনি অনলাইন জুয়া খেলা। তিন মিনিটে টাকা ডবল করতে গিয়ে বহু টাকা খোয়াচ্ছেন মানুষ। বাড়ির মহিলারা তিতিবিরক্ত। অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা টাকা খুইয়ে এসে বাড়িতে অশান্তি করছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। জুয়া বন্ধের চেষ্টা করলে কি হবে, এখানে রক্ষকই ভক্ষক। পুলিশ ও পৌরসভাতে টাকা দিয়ে চলছে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টাকার জুয়ার কারবার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে চলছে এই অনলাইন জুয়া। এর মধ্যে বনগাঁ মহকুমাতে সব থেকে বেশি অঙ্কের টাকার জুয়ার কারবার চলছে বলে সূত্রের খবর। যদিও এই জুয়া বন্ধ করতে বিজেপি আন্দোলন শুরু করেছে।
এলাকাবাসীদের দাবি, জুয়ার টাকা পেতে চুরি-ছিনতাই বাড়ছে। প্রতিদিনি সাইকেল, মোটর সাইকেল, মোবাইল চুরি যাচ্ছে বনগাঁ শহরে। অনলাইন লটারি খেলার জন্যই দুষ্কৃতীরা রাতে ঘুমের ওষুধ বাড়িতে ছড়িয়ে লুটপাট করে পালিয়েছে। বাগদা, বনগাঁ, গাইঘাটায় চুরি ছিন্তাই লেগেই আছে। যদিও পৌরসভার টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বনগাঁ পৌরসভার চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। গোপালবাবু বলেন, এই অনলাইন লটারির জন্য বনগাঁ পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। আমরা আজই পুলিশকে জানিয়ে এই সব জুয়াবাজদের গ্রেফতারের দাবি জানাব।
বনগাঁর এক কংগ্রেস কর্মী রিপন সরকার বলেন, সারা বনগাঁ জুড়ে অসৎ ভাবে ব্যাবসা চালাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। গরিব মানুষকে লুটেপুটে খাচ্ছে। এর সঙ্গে সরকার পক্ষের কিছু লোকজন জড়িত। সব জেনেও তারা চোখ বুঝে আছে। এই অবৈধ্য ব্যবসা বন্ধ না হলে আগামী দিনে আমরা আন্দোলনে নামবো।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শংকর আঢ্য চেয়ারম্যান থাকাকালীন এই অনলাইন লটারি বন্ধ করে দিয়েছিলেন। নতুন চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ আসার পর ফের তা নতুন করে চালু হয়েছে।
এবিষয়ে প্রাক্তন চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য বলেন, গরিব মানুষের স্বার্থে এই অনলাইন লটারি পৌরবোড মিটিং করে বন্ধ করেছিলাম। বনগাঁর প্রচুর গরিব মানুষ সারা দিন আয় করে যে টাকা উপার্জন করে তার বেশির ভাগ টাকা জুয়া খেলে নষ্ট করছে। ফলে দেনার দায়ে প্রচুর মানুষ আত্মহত্যা করছে। কেউ কেউ চুরি ছিন্তাই শুরু করেছে। কিছু অসৎ সমাজবিরধী আজ নেতা হয়েছে সেই সব ব্যক্তির মদতে এই জুয়ার কারবার চলছে। আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এই জুয়ার কারবার বন্ধ করার জন্য আবেদন করব।
এক তৃণমূল কর্মী তন্ময় রায় বলেন, শংকরবাবু পৌরসভা ছাড়ার পর থেকে ফের চালু হয়েছে এই বিপুল পরিমাণের জুয়া চক্র। কিছু নেতাদের মদতে এই অনলাইন জুয়ার কারবার চলছে। প্রতিমাসে কার কাছে কত টাকা যাচ্ছে তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের নেতৃত্ব অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠাবো।
বনগাঁর দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, তৃণমূল সরকার আসার পর থেকে মদ, জুয়া, খুন, ধর্ষণ লেগেই আছে সাড়া বাংলাজুড়ে। তৃণমূলের নেতারা গরু পাচারের টাকা খেতো। চাকরির নামে কাটমানি খেত। এখন সেই সব নিয়ে ভয়ে আছে। সব কিছু বন্ধ থাকায় এখন এই অনলাইন লটারির মাধ্যমে সাধারণ গরিব মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে। এর সঙ্গে পুলিশের এক অংশ যুক্ত আছে। প্রতিমাসে কয়েক কোটি টাকার জুয়ার কারবার চলছে বনগাঁ মহকুমাজুড়ে। এই ব্যপারে আগামীতে আন্দোলনে নামার হুমকি দেয় স্বপনবাবু।
যদিও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, এই জুয়ার ব্যাপার আমার নজরে নেই। আমি খোঁজ নিয়ে এই অবৈধ জুয়া পুলিশকে বলে বন্ধ করব।
লটারি ব্যবসায়ী এক যুবকের কথায়, ‘‘প্রতি ৩ মিনিট অন্তর খেলা হয়। সর্বনিম্ন ১০ টাকা রেখে মূলত ০ থেকে ৯ নম্বর ধরে খেলতে হয়। ১০ টাকায় জ্যাকপট লাগলে মিলবে ৯০০ টাকা। আর নম্বর বাধলে ৯০ টাকা মিলবে।’’ বনগাঁর কোর্ট চত্বর, ২নম্বর রেল গেট, ট’ বাজার, স্টেশন রোড়, গোপালনগর এলাকা-সহ শহর এবং গ্রাম্য এলাকায় বাজারে একাধিক জায়গায় অনন্ত ৪১টি অনলাইন লটারির দোকান আছে। মহকুমা জুড়ে এই সংখ্যাটি দু’শো ছাড়িয়েছে। লটারিতে বহু টাকা হারিয়েছেন গফুর গাজি, সাধন বিশ্বাস, তারক দাস। তাঁরা বলেন, ‘‘লোভে পড়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন মনে হয়, এ সব বন্ধ হওয়াই উচিত।’’