পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ জুলাই: ২০২৪ সালের কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাজেটেও বহু প্রতিক্ষিত ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে কোনো অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বানভাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এরই প্রতিবাদে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে আজ ২৫ জুলাই ঘাটালের বরদা চৌকান থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও পদযাত্রা এবং পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডে বাজেটের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন কমিটির কার্যকরী সভাপতি সত্যসাধন চক্রবর্তী, যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা বন্যা-ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির পঞ্চানন প্রধান, বন্দর ব্রিজ নির্মাণ সংগ্রাম কমিটির সভাপতি বলাইচন্দ্র পাড়ুই, সাহেবঘাট ব্রিজ নির্মাণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক কানাইলাল পাখিরা, কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি গোপাল সামন্ত, ঘাটাল-রানীচক নদীবাঁধ রক্ষা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক প্রসেনজিৎ কাপাস ও অর্ধেন্দু মাজি প্রমুখ।
কলেজ মোড়ে বাজেটের প্রতিলিপিতে অগ্নিসংযোগ করেন কমিটির সভাপতি ডাঃ বিকাশ চন্দ্র হাজরা। বিক্ষোভ সভায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক গৌরী শঙ্কর বাগ, বিদ্যাসাগর গবেষক হরগোবিন্দ দোলই। প্রায় তিন শতাধিক ভুক্তভোগী মানুষ এই কর্মসূচিতে সামিল হন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে গত ২৭ জুন সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ও কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৩ জুলাই অন্তর্বর্তী কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন ওই প্রকল্পের বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য না করায় পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় ২০ লক্ষাধিক ফি বছরের বানভাসী মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার তেরোটি ব্লকের স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার নানা অজুহাতে টালবাহানা করে এখনো পর্যন্ত কোনো অর্থ বরাদ্দ করেনি। ফলস্বরূপ দুই জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রত্যেক বছর বর্ষার সময় সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান ২০১৫ সালে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন (জি.এফ.সি.সি.) ও কেন্দ্রীয় সরকারের জলসম্পদ দপ্তরের ছাড়পত্র পায়। এরপর কেন্দ্র ও রাজ্য কোন সরকার এই মেগা প্রকল্পে কত শতাংশ টাকা দেবে, তা নিয়ে দড়ি টানাটানি চলছে। ইতিমধ্যে ফি বছরের বন্যা কিন্তু থেমে নেই। বরং বন্যার ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। দুই জেলার বানভাসীরা আশা করেছিল, নবগঠিত কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে মাস্টার প্ল্যানের জন্য অর্থ বরাদ্দ হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট ভাষণ অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলাবাসীকে আশাহত করেছে।
নারায়ণবাবু বলেন, আমরা এরই প্রতিবাদে আজ ২৫ জুলাই ঘাটালের বরদা চৌকান থেকে কলেজ মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও পদযাত্রা এবং কলেজ বাসস্ট্যন্ডে কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিলিপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাই। এরপরও সরকারের টনক না নড়লে আমরা কলকাতা অভিযান সহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি নিতে বাধ্য হব।