আমাদের ভারত, ২৫ আগস্ট: বিগত দিনের অসমের বন্যা পরিস্থিতিকেও হার মানিয়ে দিল ত্রিপুরার ভয়াবহ বন্যা। ভয়াবহ বন্যায় ত্রিপুরায় দুর্বিসহ অবস্থা মানুষের। কৃষি ক্ষেত্রেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে সরকারি সহায়তার দাবি তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে ত্রিপুরা পুলিশ। বন্যার জলে আটকে যাওয়া মানুষদের উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পর্যন্ত পৌছে দিচ্ছেন তাঁরা। গোটা রাজধানী শহর জলের তলায়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বায়ু সেনার বিমানে এনডিআরএফ-র ১২০ জন জওয়ান রাজ্যে এলেন। বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য এমআই-৭ হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে গত ২০ এবং ২১ আগস্ট সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগরতলা শহরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩৩ মিলিমিটার। বিগত দিনের চেয়েও সবচেয়ে ভয়ানক বৃষ্টিপাত হয়েছে এই দুই দিন। ২১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন ছিল ২১৪ মিলিমিটার। কিন্তু ২১ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টি হয়েছে ৫৩৮.৭ মিলিমিটার। অর্থাৎ ১৫১ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দক্ষিণ জেলায় বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রয়োজন ছিল ২৫২.৮ মিলিমিটার। কিন্তু বৃষ্টি হয়েছে ৯৮১.১ মিলিমিটার। গোমতী জেলাতে স্বাভাবিককের চেয়ে ২৩৪ শতাংশ বেশি, পশ্চিম জেলায় ১৩৭ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, সিপাহীজলা জলাতে ৯২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, খোয়াইতে ১৫০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে, ধলাই জেলায় ১৬৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, উত্তর জেলায় ৫৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে, ঊনকোটি জেলায় ৮৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও বিদ্যুতের। এমনটাই তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী রতন ভৌমিক। রাজ্যের এই বন্যা পরিস্থিতিকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি করেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ সাহা।
গত তিন দিন ধরে প্রবল বর্ষণে প্লাবিত রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা। গত দু’দিন ধরে অস্থায়ী শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। তাঁদের শারীরিক অবস্থা খোঁজখবর নিতে স্বাস্থ্য দপ্তরের পক্ষ থেকে টিম তৈরি করা হয়েছে। এই টিমগুলি উদয়পুর, কাকড়াবন, মনু বাজার, সাব্রুম, অমরপুর এবং আগরতলা -সহ বিভিন্ন জায়গার অস্থায়ী শিবিরগুলিতে যায়। এই টিমের মধ্যে থাকা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অস্থায়ী শিবিরের মানুষের শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেয়।
বন্যা দুর্গতদের বাঁচাতে গিয়ে আগরতলা বিধানসভার ইন্দ্রনগরে বাসিন্দা ইন্দ্রজিত দে অকালে প্রাণ হারিয়েছিলেন। শনিবার ইন্দ্রনগর কালীবাড়িতে ইন্দ্রজিতের বাড়িতে যান এলাকার বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন এবং সঙ্গে ছিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি আশীষ কুমার সাহা। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানের মধ্যে ব্যাপক ভাবে বিধ্বস্ত গোমতী জেলা। করবুকে গোমতী নদীর বাঁধ খোলার পাশাপাশি বন্যায় দুর্বিষহ অবস্থা অমরপুর -সহ সরোবর নগরীর উপকন্ঠ উদয়পুর। সুখ সাগর জলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা ভেসে জলের তলায় ভেসে গেছে। বন্যায় হিমশিম খাচ্ছে মানব কুল থেকে শুরু করে পশু পাখিরাও।
ভয়াবহ বন্যায় দুর্বিষহ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে কুমারঘাটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে কৃষক। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ঊনকোটি জেলার ফটিকরায়ের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার জলের তলায় চলে যায় সব্জি থেকে ধান ক্ষেত। মাথায় হাত পড়ে কৃষকদের। প্রকৃতির হঠাৎ এই রুদ্ররূপে বর্তমানে শুধু দুর্গতদের আর্তনাদ। কুমারঘাট বিধানসভা এলাকার ইন্দিরা কলোনি, কৃষ্ণনগর, আসামবস্তি, রাতাছড়া -সহ একাধিক অঞ্চলের মানুষ কৃষিকাজের উপরই নির্বাহ করেন তাদের জীবন জীবীকা। বন্যায় একেবারে মাথায় হাত পড়েছে সেইসব কৃষক পরিবারের।
বর্তমানে এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও বহু অঞ্চলেই কৃষকদের ফসল এখনো রয়ে গেছে জলের নিচে।