আমাদের ভারত, ৭ ফেব্রুয়ারি: দেশে প্রথম উত্তরাখান্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর হতে চলেছে। বুধবার উত্তরাখন্ড বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিলটি পাশ হয়ে যায়। এরপর রাজ্যপালের কাছে বিলটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
শুধুমাত্র এই বিলটি পাস করানোর জন্যই চার দিনের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল উত্তরাখণ্ড বিধানসভায়। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অধিবেশন শুরু হয়েছিল। বুধবার ছিল তার শেষ দিন। উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকার এই অধিবেশনে অভিন্ন বিধি বিল পাস করাবে বলে শোনা গিয়েছিল, বুধবার সেটাই হয়েছে।
এই বিল পাশের পর সংবাদ মাধ্যমকে মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামী জানান, এই আইন সমান অধিকারের কথা বলে এটি কারো বিরুদ্ধে নয়, এই আইন মহিলাদের জন্য। যারা সমাজে পদে পদে সমস্যার সম্মুখীন হয় এটি তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে। বিলটি পাস হয়েছে, আমরা রাজ্যপালের কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠাবো।
এর আগে উত্তরাখন্ড বিধানসভা ভোটে বিজেপি জিতে ক্ষমতায় এলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার প্রক্রিয়াটা শুরু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর ভোটে জিতে আসার পর থেকেই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তিনি তৎপর হন। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার জন্য আইনি প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাই- এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। গত শুক্রবার সেই কমিটি মুখ্যমন্ত্রীর হাতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির খসড়া রিপোর্ট তুলে দেয়। তারপর এই বিল পাস হওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। মঙ্গলবার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি বিল পেশ করেন রাজের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামী। বিলটি পেশ হতেই বন্দে মাতারম, জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে ভরে ওঠে গোটা অধিবেশন কক্ষ।
দেশের সব ধর্মের মানুষের জন্য বিয়ে, বিবাহ বিচ্ছেদ, জমি সম্পত্তি উত্তরাধিকার সংক্রান্ত এক এবং অভিন্ন আইন প্রচলনের কথা বলা হয়েছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধিতে। ধর্ম নির্বিশেষে পুরুষদের বহুবিবাহ এবং লিভ ইন সম্পর্ক নথিভুক্ত করার কথা আইনে বলা হয়েছে। কোনো দেওয়ানি বিধি অনুযায়ী কোনো যুগল যদি লিভ ইন করতে চান তাকে অবশ্যই পুলিশ বা জেলা আধিকারিকের অনুমতি নিতে হবে। একই সঙ্গে তাদের বয়স যদি ২১ বছরের নিচে হয় তবে তাদের বাবা-মায়ের সম্মতিরও প্রয়োজন থাকবে।
জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর করা হয়েছে। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রি বিবাহ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। লিভ ইন সম্পর্কে থাকা যুগলের সন্তান আইনি স্বীকৃতি পাবে। অন্যদিকে বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে রাজ্যে সকলের জন্য একই নিয়ম বলবৎ করার কথা বলা হয়েছে বিলে।
সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়ম আরো সহজ করা হয়েছে। পৈত্রিক সম্পত্তির ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ে এবং দত্তক নেওয়া সন্তানের অধিকার সমান হবে। উত্তরাখন্ডে বিলটি পাস হবার পর এক দেশ এক আইন দেশ জুড়ে লাগুর পথে আরও এক ধাপ এগোল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।