কাটা হাতের পর এবার জুড়ল কাটা আঙুল! সৌজন্যে আরজিকর

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৮ জানুয়ারি: কয়েকদিন আগে সরস্বতী প্রেস কাজ করতে গিয়ে শংকর সাহার হাত কাটা পড়া এবং এসএসকেএম-এ জুড়ে যাওয়ার খবর খবরের কাগজে পড়েছিলেন নিজেই। তাই যখন নিজে মেশিনে কাজ করতে গিয়ে দুটি আঙুল খোয়ান, তখন বিন্দুমাত্র ভয় পাননি বর্ধমানের অভিজিৎ বাগ। পকেটে পুরে সে আঙ্গুল নিয়ে সোজা চলে আসেন উত্তর শহরতলির সাগর দত্ত হাসপাতালে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরজি করে। সেখানেই তার হারানো আঙ্গুল দু’টির একটি ফিরে পেলেন অভিজিৎ।

আর জি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রূপনারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা মধ্যমাটিকে জোড়া লাগাতে পেরেছি। কিন্তু তর্জনীটি অভিজ্ঞতা না থাকায় ঠিকভাবে সংরক্ষণ করে আনেননি অভিজিত বাবু। ফলে ওটি লাগানো যায়নি।” চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, মধ্যমা ঠিকঠাকই জোড়া লেগেছে। রক্তসঞ্চালন স্বাভাবিক হওয়ার পথে। আর তর্জনীর কাটা অংশ যতটা সম্ভব মেরামত করা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, অভিজিৎ উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার নওদাপাড়ার একটি কারখানায় কাজ করেন। শনিবার বেলা ১১ টা নাগাদ কাজ করার সময় মেশিনে অভিজিতের বাঁ হাত ঢুকে যায়। বের হল যখন তখন দু’টি আঙুল হাত থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। তর্জনী কোনওমতে আটকে ছিল চামড়ার সুতোয়। আর মধ্যমা কেটে মাটিতে ঢুকে যায়।

কারখানা থেকে বেরনোর আগে আঙুল দু’টি প্লাস্টিকে মুড়ে পকেটে পুরে নেন অভিজিৎ। আঙুল জোড়া লাগতে পারে, এই সম্ভাবনায় সাগর দত্ত থেকে অভিজিৎকে রেফার করা হয় আরজি করের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। দুপুর দেড়টা নাগাদ ট্রমা কেয়ার সেন্টারে আসেন অভিজিৎ। ডাক্তাররা হাত ও কাটা আঙুল দু’টি পরীক্ষা করেন। রূপনারায়ণবাবু জানিয়েছেন, দু’টি আঙুলই বাজেভাবে থেঁতলে গিয়েছিল। মধ্যমার অবস্থা সামান্য ভাল ছিল।

রূপনারায়ণবাবু জানিয়েছেন, দু’টি আঙুলই অত্যন্ত খারাপ ভাবে হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। আঙুল দু’টি হাসপাতালে নিয়ম মেনে আনাও হয়নি। নিয়ম হল, প্লাস্টিকে মোড়ার পর বরফের বাক্সে করে আনা। অথচ আনা হয়েছিল পকেটে পুরে। সেই ধুলোমাখা আঙুলই পরিষ্কার করে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করা হয়। আর তাতেই আংশিক সাফল্য পান চিকিৎসকরা। তবে একটি হারানোর দুঃখ থাকলেও একটি ফিরে পেয়ে খুশি অভিজিৎ। তিনি বলেন, ‘কি ভাবে আনতে হয়, জানতামও না আর অত তাড়াতাড়িতে ভাবতেও পারিনি। যাই হোক, একটা তো ফিরে পেলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *