ফসল নষ্ট করে দেদার গোরুপাচার হিলিতে, প্রতিবাদ করায় কান কাটা গেল কৃষকের, স্বারাষ্ট্র মন্ত্রক’কে জানাচ্ছে সাংসদ

আমাদের ভারত, বালুরঘাট, ২৮ নভেম্বর: সীমান্তের কৃষিজমি নষ্ট করে অবাধ গরুপাচার হিলিতে। প্রতিবাদ করতেই কৃষকের কান কাটলো পাচারকারীরা। জানেই না বি এস এফ। বরদাস্ত নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে জানানো হচ্ছে বললেন সাংসদ। ঘটনায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন আরও এক কৃষক। রক্তাক্ত অবস্থায় দুজনকেই ভর্তি করা হয়েছে বালুরঘাট সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালে।

বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া হিলির পাঞ্জুলের বৈগ্রাম মন্ডপপাড়া এলাকার ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে আহত ওই কৃষকরা হল বিপুল সরকার ও অনুকুল সরকার।পাচারকারীদের অস্ত্রের আঘাতে কেটে যাওয়া বিপুল সরকারের কানে অস্ত্রপ্রচার করে ১৮টি সেলাই করেছে চিকিৎসকরা। ঘটনায় মাথা ফেটে রক্তাক্ত হয়েছে অনুকুল সরকারও। পুরো ঘটনা নিয়ে বিএসএফ ও পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এলাকার ক্ষিপ্ত কৃষকরা। তাঁদের অভিযোগ, দিনে রাতে সীমান্ত এলাকায় চলাফেরা করতে সাধারণ মানুষকে চরম হয়রানি বিএসএফ করলেও কাটমানি খেয়ে পাচারকারীদের রাস্তা পরিষ্কার করে গরু পাচারে সাহায্য করছেন বিএসএফ ও পুলিশের একাংশ কর্মীরা।

ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেননা বলে জানিয়েছেন ১৯৯ বিএসএফের কমানডেন্ট বিজেন্দ্র সিং নেগি।

এদিকে এই ঘটনায় বিএসএফের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে একহাত নিয়েছেন বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, পাচারের ঘটনায় পুলিশ জড়িত না থাকলে সীমান্তে গরু যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এমন ঘটনা বরদাস্ত নয়। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

ভারত-বাংলাদেশের তিনদিক সীমান্ত বেষ্টিত জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। জেলার ২৫২ কিমি এলাকার মধ্যে প্রায় ২৭ কিমি এলাকা উন্মুক্ত কাঁটাতারবিহীন। হিলির ওই কাঁটাতারহীন এলাকা দিয়েই শীতের ঘন কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে চলছে অবাধ গরু পাচার। যে কাজেই গোরু পাচারকারীদের কোপে পড়েছে এলাকার কৃষকদের কৃষি জমি। রাতের অন্ধকারে শয়ে শয়ে গরু আবাদি জমির উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে প্রায় প্রতিরাতেই পাচারকারীরা ফসল নষ্ট করছে কৃষকদের বলে অভিযোগ। যার জেরে এই মরশুমে লাগানো আলু, মটরশুটি সহ একাধিক ফসল নষ্ট হতেই এদিন আগ্রা সীমান্তের উন্মুক্ত এলাকায় ভোর রাতে নিজেদের জমি পাহাড়ায় থাকে দুই কৃষক। জমির উপর দিয়ে পাচারকারীরা গরু নিয়ে যেতেই বাধা দেন ওই দুই কৃষক। তাদের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাবার অনুরোধ জানালেও তাতে কর্ণপাত করে না তারা। এরপরেই চারটি গরু ও এক পাচারকারীকে আটক করে তারা। পাচারকারী পালিয়ে গেলেও গরুগুলি আটকে রাখেন তাঁরা। অভিযোগ যার পরেই পাচারকারী তাপস রায়ের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জনের এক সশস্ত্র দল হামলা চালায় ওই দুই কৃষকের উপর। অস্ত্রের আঘাতে কান কেটে যায় বিপুল সরকারের ল। রক্তাক্ত হন অনুকুল সরকারও। ঘটনায় স্থানীয়রা ছুটে আসতেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাদের প্রথমে হিলি গ্রামীন হাসপাতাল এবং পরে সেখান থেকে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাদের।

বিভাস দাস ও নিন্তু দাস নামে দুই কৃষক বলেন, সীমান্ত এলাকায় সাধারণ মানুষ পদে পদে বি এস এফের তল্লাশির শিকার হন। কিন্তু কাটমানি দিয়ে অবাধে গরু পচার চলছে সীমান্তে। কৃষকের ফসল নষ্ট হলেও কারো মাথাব্যাথা নেই।

আক্রান্তের পরিবারের সদস্যা তমা সরকার ও সুলোচনা সরকাররা বলেন, কৃষিকাজ করেই তাদের সংসার চলে। অথচ সেই আবাদি জমির উপর দিয়ে গরু পাচার চলছে প্রতি রাতে। প্রতিবাদ করতেই পাচারকারীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে দুই কৃষককে। ঘটনা নিয়ে তারা আতঙ্কিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *