অগ্নিমিত্রার ফেসবুক পোস্টে ক্ষোভ জানিয়ে ১০ পয়েন্টে নিজের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রমাণ দিলেন বৈশাখী

রাজেন রায়, কলকাতা, ২৪ নভেম্বর: এক কালে তৃণমূলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তথা প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে কলকাতায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দিতে চায় বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু তার বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কে যে এখনো বিজেপির সকলে সমান চোখে দেখেন না, মঙ্গলবার ফেসবুক পোস্ট করে তা বুঝিয়ে দিলেন বিজেপি মহিলা মোর্চা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই ধারণা, শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সিঁড়ির ধাপ করেই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু এই ধারণা যে সঠিক নয়, অগ্নিমিত্রা পালের ফেসবুক পোষ্টের উত্তরে পরপর দশটি পয়েন্ট লিখে তা বুঝিয়ে দিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

শোভন চট্টোপাধ্যায় মেয়র থাকাকালীন কলকাতার একাধিক উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সামলেছিলেন। বর্তমানে তিনি এবং বৈশাখী বিজেপিতে যোগ দিলেও তাদের দুজনকেই সমান চোখে দেখা নিয়ে এমতাবস্থায় শোভন কে গুরুত্ব দিতে রাজি হলেও বৈশাখীর যে সেভাবে কোনও গুরুত্ব নেই তা নিয়ে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আক্রমণ করেছিলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভাপতি অগ্নিমিত্রা পাল। এবার সেই ফেসবুক পোস্টেই পরপর দশটি পয়েন্ট লিখে নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বোঝালেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজের ফেসবুক পোস্টে অগ্নিমিত্রা পাল লিখেছিলেন, ‘শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বৈশাখীদি একই গুরুত্ব পাবেন না’, অগ্নিমিত্রার এহেন মন্তব্যে তোপ দেগেছেন শোভন বান্ধবী। অগ্নিমিত্রাকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে পরপর ১০টি পয়েন্ট লিখে নিজের রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ব্যাপারে জানিয়ে এই মন্তব্যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ও যে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত, সে কথাও জানিয়েছেন বৈশাখী। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেষাংশে আসল তুরুপের তাস খেলেছেন বৈশাখী। তৃণমূলে থাকার সময় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রবল রাজনৈতিক গুরুত্ব থাকার কারণে তাকে নিয়ে উৎসাহী বিজেপি। কিন্তু তার অভিন্ন হৃদয় বান্ধবী বৈশাখীকে যদি দলের মধ্যেই অপমান করা হয়, তাহলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি সেভাবে শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও পাবে না, এটা স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছেন শোভন বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

অগ্নিমিত্রা পালকে বিঁধে প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে বৈশাখী বলেছেন, ”অগ্নিমিত্রা পাল যখন বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তাঁর একটাই পরিচয় ছিল, তিনি একজন ফ্যাশান ডিজাইনার। যতদূর আমি জানি, আপনার কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। কখনও কোনও রাজনৈতিক ভূমিকাও পালন করেননি। তা সত্ত্বেও বিজেপি মহিলা মোর্চার প্রধানের মতো গুরুদায়িত্ব পেয়েছেন।”

এরপরে নিজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বোঝাতে তিনি লিখেছেন,
“আমি ওয়েবকুপার জেনারেল সেক্রেটারি পদে ছিলাম। অনৈতিক, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। পেজ ৩-তে আমার কখনও নাম আসেনি। পুরুলিয়া থেকে বর্ধমান, গোসাবা থেকে গড়িয়া, ধর্মতলা থেকে যাদবপুর পর্যন্ত ঘুরেছি, ভোটে টিকিট পাওয়ার জন্য নয়, আমার দলের সদস্যপদ বাড়ানোর জন্য। গার্হস্থ্য হিংসা, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়ার চেষ্টা করেছি। কিছু ছবি পোস্ট করে জনসমর্থন পাইনি। মিটিং-মিছিলে অংশ নিয়ে মানুষের ভালবাসা অর্জন করেছি।” একইসঙ্গে অগ্নিমিত্রার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে বৈশাখী ফেসবুকে লিখেছেন, ”আপনার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায় সুহৃদয়ে আমায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমন্ত্রণ জানাতেন। যার জন্য ওঁকে শ্রদ্ধা করি। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বিজেপি দলে আমার অবস্থান স্বীকৃতি দিয়েছেন।”

আপনার মন্তব্য আমি ব্যথিত। কোনও বিরোধী দল নয়, আমার দলের সহকর্মীই আমাকে সমালোচিত করলেন…চোখে আঙুল দাদার মতো যদি সারাক্ষণ কেউ এরকম করতে থাকেন, তাহলে বিরক্ত হই। আমার কোনও গডফাদার নেই। মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে রাজনৈতিক মূল্যবোধ শিখেছি। বিজেপিতে রামলালজি, শিবপ্রকাশজি, মেননজি, অমিতাভদার থেকে অনেক উত্‍সাহ পেয়েছি…শোভন আমার মেন্টর, আমি ওঁকে শ্রদ্ধা করি…লকেট, রূপা, ভারতী ঘোষদের পছন্দ করি, যাঁরা আমার মতো একজন ক্ষুদ্র নেতাকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন।”

তাঁর দীর্ঘ পোস্টের শেষে বৈশাখী এদিন অগ্নিমিত্রাকে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, ‘‌সমস্ত শব্দ খুবই মূল্যবান। সেগুলি অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত। আপনার এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যে কিন্তু শোভন কোনওভাবেই খুশি হননি। তিনিও আপনার কথায় চরম বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *