স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও ঝালদার বনডি গ্রামে পাকা রাস্তা নেই, আক্ষেপ বাসিন্দাদের

সাথী দাস, পুরুলিয়া, ২৯ মে: স্বাধীনতার ৭৫ বছর পার হয়ে গেলেও গ্রামে কোনো পাকা রাস্তা গড়ে ওঠেনি। ছোট জনপদ নয় ঝালদা ১ ব্লকের ইলু জারগো গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাচীন বনডি গ্রাম। গ্রামবাসীদের আক্ষেপ যেন এই এলাকা ‘পাণ্ডব বর্জিত’। পৌরাণিক কাহিনীর কথা হলেও বাস্তবের সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে।

ঝাড়খণ্ড লাগোয়া পুরুলিয়া জেলার শেষ প্রান্তে এই বনডি গ্রাম। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় বনডি গ্রামে প্রায় ৫৫টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু মূল রাস্তা থেকে গ্রামের ভেতরে ঢোকার কোনো সরকারি রাস্তা নেই। ফলে সমস্যায় এই গ্রামের বসবাসকারী পারিবারগুলি। অথচ, গ্রামে রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়। রয়েছে বিদ্যুৎ। ইলু জার্গো গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালে প্রথমবার কংগ্রেসের সমর্থনে পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস। তার আগে বেশ কয়েকবার কংগ্রেস ও ফরওয়ার্ড ব্লক এই পঞ্চায়েত দখল করেছিল। কোনও রাজনৈতিক দল যে এই গ্রামের রাস্তার জন্য কোনও সদিচ্ছা দেখায়নি তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

গ্রামের বাসিন্দা অশোক মাহাতো, বীরেন্দ্র নাথ মাহাতো, খনা মাহাতো ও ফুটুমণি সিং মুড়া জানান, এখনও পর্যন্ত যে রাস্তা ২ টি ব্যবহার করে আসছি তার মধ্যে একটি রমাশ্রম দিয়ে জার্গো যেতে হলে পুকুরের পাড় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত জমির আল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। অন্যটি ডোমটার দিয়ে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার গিয়ে জমি ও জঙ্গলের পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বিশেষ করে গ্রামের অসুস্থ মহিলা বৃদ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য গ্রামের ভেতরে যাওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স ঢোকে না সময় মতো। সন্ধের পর তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সন্ধের পর এই এলাকা জঙ্গল ঘেরা হওয়ায় বন্য প্রাণী ও হাতির আতঙ্ক থাকে। ফলে, রাতের দিকে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। গ্রামে বিদ্যুতের অবস্থা শোচনীয়। কোনো কারণে বিদ্যুৎ চলে গেলে বেশ কয়েকদিন বিদ্যুৎ থাকে না। রাতে মানুষ বাড়ি থেকে বেরতে ভয় পায়। পাশাপাশি রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। প্রত্যেক বছর গ্রীষ্মকালে পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দেয়। গ্রামের মধ্যে থাকা কুয়ো থেকে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করে। আর সেই জল পান করে পেটের সমস্যায় পড়তে হয় গ্রামবাসীদের।

এই বিষয়ে ইলু জার্গো গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রকাশ কুমার মাহাতো বলেন, পানীয় জলের জন্য নলকূপ বসানোর চেষ্টা করলেও মাটির নীচে পাথর থাকায় নলকূপ বসানো যাচ্ছে না। গ্রামবাসীদের দাবি, গ্রামে ঢোকার পাকা রাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু রাস্তাটি ব্যক্তিগত জমির উপরে তাই ওই জমি মালিক ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা করা হবে।

যদিও গ্রামবাসীদের ক্ষোভ ভোটের সময় সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা গ্রামে এসে প্রতিশ্রুতি দিলেও ভোট পেরোলে আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *